প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানের গুরুত্ব কী?
Answers
Answer:
Iska matlab in hindi
पुरातात्विक तत्वों का क्या महत्व है?
সাহিত্যিক উপাদান ছাড়াও প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানের সাহায্যে প্রাচীন ভারতের কথা জানা যায় । প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান গুলির মধ্যে লেখ গুলির স্থান সবার প্রথমে । সাহিত্যে পরিবর্তন ঘটে কিন্তু, লেখগুলি অপরিবর্তিত থেকে যায় । লেখার জন্য বিভিন্ন দ্রব্য যেমন- সোনা, তামা, লোহা, রুপা, ব্রোঞ্জ, পাথর ইত্যাদি ব্যবহার করা হত । সেগুলিতে বিভিন্ন ভারতীয় ভাষা যেমন – সংস্কৃত, পালি, প্রাকৃত, তেলেগু, তামিল, মালায়ালাম ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়েছিল । বেশির ভাগ লেখতে ব্রাহ্মী বা খরোষ্ঠী লিপি ব্যবহার করা হয়েছে ।
লেখ গুলিকে এবার দুভাগে ভাগ করা হয় – দেশি ও বিদেশি । দেশি লেখ গুলির মধ্যে মৌর্য সম্রাট অশোকের লেখগুলি শ্রেষ্ঠ । শিলাখন্ডে প্রাপ্ত লেখগুলিকে শিলালেখ, স্তম্ভগাত্রে পাওয়া লেখকে স্তম্ভগাত্রে আর গিরি গুহায় পাওয়া লেখকে গুহা লেখ বলা হয় । অশোক তাঁর লেখগুলিতে ব্রাহ্মী লিপির ব্যবহার করেছেন কিন্তু, উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে খরোষ্ঠী লিপি ব্যবহার দেখা যায় । এই লিপি গুলি থেকে অশোকের রাজ্য জয়, ধর্ম বিজয় নীতি, বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ ইত্যাদি বিষয়ে জানা যায় । ১৮৩৭ সালে জেমস প্রিন্সেপ অশোকের লেখ পাঠোদ্ধার করেন ।
অশোকের পরবর্তী কালে লেখকে সরকারি ও বেসরকারি এই দুই ভাগ করা হয় । সরকারি লেখ গুলি আবার প্রশস্তি ও ভূমি দান এই দুই বিষয়ে । প্রশস্তি গুলির মধ্যে হরিসেনের এলাহাবাদ প্রশস্তি থেকে ভারতের রাজনৈতিক চিত্র ও সমুদ্র গুপ্তের বিবরণ পাওয়া যায় । গৌতমীপুত্র সাত কর্নির নাসিক প্রশস্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান । এটি থেকে তাঁর রাজ্য জয়, সমাজ সংস্কারের কথা জানা যায় । এছাড়াও রুদ্র দামনের জুনাগড় শিলালেখ, গোয়ালিয়র প্রশস্তি থেকে রাজা ভোজ, আইহোল প্রশস্তি থেকে দ্বিতীয় পুলকেশীর কথা জানা যায় । উমাপতি ধর রচিত দেওপাড়া প্রশস্তি থেকে সেন রাজা বিজয় সেন, হাতিগুম্ফ লেখ থেকে কলিঙ্গরাজ খারবেলের কথা জানা যায় ।
বিদেশি লেখ গুলির মধ্যে এশিয়া মাইনরে আনাতোলিয়ায় প্রাপ্ত লেখ গুরুত্বপূর্ণ । এখানে আর্য রাজাদের সন্ধির উল্লেখ আছে । পারস্য সম্রাট প্রথম দারয়-বৌষ পারসেপোলিস ও নকস-ই-রুস্তম লেখ দুটি গুরুত্বপূর্ণ । দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় কম্বোডিয়া, যবদ্বীপ, বোর্ণিয়, আন্নাম, চম্পার পূর্ব উপকূলে লেখ পাওয়া গেছে । ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইন্দোচিনের ইতিহাসে এগুলির গুরুত্ব অপরিসীম ।
মুদ্রা হল এক ধরনের ঐতিহাসিক উপাদান । প্রাচীন ভারতের ইতিহাস জানার জন্য মুদ্রা গুরুত্বপূর্ণ । সাহিত্য থেকে আমরা যে তথ্য পাই মুদ্রার দ্বারা তার সত্যতা যাচাই করা যায় । তারিখ যুক্ত মুদ্রা থেকে কাল পরম্পরা নির্মাণে ও তারিখ বিহীন মুদ্রা মুদ্রা থেকে রাজার নাম পাওয়া যায় । স্বর্ণমুদ্রা সাম্রাজ্যের সমৃদ্ধির পরিচয় বহন করে আর, হীন মানের মুদ্রা সাম্রাজ্যের সঙ্কটের পরিচয় দেয় । মুদ্রার দেবদেবীর মূর্তি থেকে রাজার ধর্মের কথা জানা যায় । মুদ্রার সাহায্যে প্রায় ত্রিশ জন ব্যাকট্রীয় গ্রিক শাসকের কথা জানা যায় কিন্তু, অন্য তথ্য থেকে ৫-৬ জনের বেশি জানা যায় না । শক- কুষানদের ইতিহাস জানতে মুদ্রার গুরুত্ব অনেক বেশি । গুপ্তদের মুদ্রার মধ্যে বিশেষ করে সমুদ্র গুপ্তের মুদ্রাগুলি বিশেষ উল্লেখযোগ্য । বাংলায় সমতট-হরিকেল অঞ্চলে গুপ্ত পরবর্তী ও ইসলাম পূর্ববর্তী মুদ্রা পাওয়া গেছে ।
খননকার্যের ফলে মাটির নীচ থেকে যে সব মন্দির, মূর্তি, পোড়া মাটির কাজ পাওয়া যায় সেগুলিকে বলা হয় স্থাপত্য-ভাস্কর্য প্রত্নতত্ত্ব । এগুলি আবার তিন ভাগে বিভক্ত – স্থাপত্য, ভাস্কর্য ও চিত্রকলা । দেবদেবীর মূর্তি, পশুর মূর্তি ও মানুষের মূর্তি ইত্যাদিকে ভাস্কর্য বলা হয় । ভাস্কর্য গুলি প্রধানত প্রাসাদ, মন্দিরের দেওয়ালে খোদাই করা হত । পাথর, ধাতু ও পোড়া মাটিতে এগুলি খোদাই করা হত । অজন্তায় ও ভীমবেটকায় গুহার দেওয়ালের ছবি গুলি আজও আমরা দেখতে পাই । প্রাচীন কালের সমাজ ও জীবন বোঝার জন্য এগুলির খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে ।