দুটি পরিবেশগত আন্দোলন নাম
Answers
Answer:
1. চিপকো আন্দোলন
Explanation:
৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস। ১৯৭৪ সাল থেকে পরিবেশ আন্দোলনকে আরো জোরদার করতে বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে আসছে এই দিনটি। প্রথম বিশ্ব পরিবেশ আন্দোলনের থিম ছিলো ‘ওনলি ওয়ান ওয়ার্ল্ড’ বা ‘একটিমাত্র পৃথিবী’। তবে পরিবেশ আন্দোলনের ইতিহাস কিন্তু আরো অনেক পুরনো।
আন্দোলনের প্রেক্ষাপটঃ
প্রথম পরিবেশ আন্দোলনের নজির পাওয়া যায় উনবিংশ শতাব্দীতে ইংল্যান্ডে শিল্প বিপ্লবের সময়। সেসময় শিল্প-কারখানার দরুন বায়ুদূষণের কারণে শহুরে মধ্যবিত্ত সম্প্রদায় আন্দোলনে নামেন যার ফলশ্রুতিতে ১৮৬৩ সালে ‘আলকালাই অ্যাক্ট’ পাস করার মাধ্যমে পরিবেশ আইন চালু করা হয়। উনবিংশ শতাব্দীতে ভারতে শুরু হয় বিশ্বের প্রথম ‘Conservation Movement’ বা পরিবেশ সংরক্ষণ আন্দোলন। যা পরবর্তীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে । এরপর ১৮৯২ সালে জন মিয়র প্রতিষ্ঠা করেন ‘সিয়েরা ক্লাব’ যার মূল লক্ষ্য ছিলো বন্য সম্পদ সংরক্ষণে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নজর লাভ করা।
পরিবেশ আন্দোলনের বিকাশঃ
মূলত আধুনিক পরিবেশ আন্দোলন শুরু হয় বিংশ শতাব্দীর ষাটের দশক থেকে। এরপর থেকে এই আন্দোলনের ব্যাপ্তি আরো বিস্তৃত হয়েছে। এই পথচলার কিছু মাইলফলক-
১৯৬৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশবিদ ডেভিড ব্রাওয়ার প্রতিষ্ঠা করেন ‘ফ্রেন্ডস অব দ্যা আর্থ’ যার মূল লক্ষ্য ছিলো নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্টের কারণে পরিবেশদূষণ প্রতিরোধে কাজ করা। পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে ফ্রান্স, সুইডেন, ইংল্যান্ড এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র- এই চার দেশের যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ফ্রেন্ডস অব দ্যা আর্থ ইন্টারন্যাশনাল’।
১৯৭০ সালে এপ্রিলের ২২ তারিখ প্রথম পালিত হয় ‘Earth Day’ বা ‘ধরিত্রী দিবস’।
১৯৭১ সালে বিশ্বব্যাপী পরিবেশ সংরক্ষণে কাজ করার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘গ্রিনপিস’।
১৯৭২ সালে সুইডেনের স্টকহোমে প্রথম আর্থ সামিট- ‘স্টকহোম কনফারেন্স’ অনুষ্ঠিত হয় যা ছিলো জাতিসংঘ আয়োজিত পরিবেশ বিষয়ক প্রথম সম্মেলন।
একই বছরে প্রতিষ্ঠা করা হয় ‘United Nations Environment Program- UNEP’।
১৯৮২ সালে স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে কেনিয়ার নাইরোবিতে আরেকটি আর্থ সামিট অনুষ্ঠিত হয়। তবে সম্মেলনটি তেমন কোন গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে পারেনি।
১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় UN World Commission on Environment and Development যার প্রধান হন নরওয়ের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী ডঃ গ্রো হারলেম ব্রান্ডটল্যান্ড। চার বছর পর ১৯৮৭ সালে তিনি প্রকাশ করেন ঐতিহাসিক ‘ব্রান্ডটল্যান্ড রিপোর্ট’ যা কিনা ‘Sustainable Development’ বা টেকসই উন্নয়ন ধারণার জন্ম দেয়।
স্টকহোম কনফারেন্সের ২০ বছর পর ১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে বিশ্ব নেতারা আবারো জড়ো হন UN Conference of Environment and Development এ অংশ নিতে যা কিনা ‘রিও আর্থ সামিট’ নামেই বেশি পরিচিত। এই সামিটে পরিবেশ এবং জলবায়ু সংরক্ষণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয় এবং জলবায়ু পরিবর্তন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি, পরিবেশ দূষণ, টেকসই উন্নয়ন ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনায় উঠে আসে।
জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম কারণ কার্বন-নির্গমন কমাতে ১৯৯৭ সালে গ্রহণ করা হয় ‘কিয়োটো প্রোটোকল’। জাপানের কিয়োটো শহরে প্রস্তাবনাটি গ্রহণ করা হয় বলে এর নাম দেওয়া হয় কিয়োটো প্রোটোকল।
বিশ্বব্যাপী Sustainable Development বা টেকসই উন্নয়ন অর্জনের লক্ষ্যে ২০০২ সালে জোহানেসবার্গ আর্থ সামিট অনুষ্ঠিত হয়।
এছাড়াও ১৯৯৫ সাল থেকে প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন শহরে United Nations Climate Change Conference (COP) অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
বিশ্বব্যাপী পরিবেশগত অবক্ষয়ের জন্য ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের সাথে সাথে, আমরা আরও ভাল পরিবেশগত ভারসাম্যের জন্য সর্বাধিক প্রয়োজন অনুভব করতে পারি। দুর্ভাগ্যবশত, শত শত অপব্যবহারের উদাহরণ রয়েছে, এবং কেবল সামান্য মনোযোগ দেওয়া হয়েছে, এবং এটিও কেবল তখনই যখন স্থানীয় সম্প্রদায় প্রতিবাদ করে।
দুটি পরিবেশগত আন্দোলনের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে:
- চিপকো আন্দোলন - এটি 1970 এবং 1980-এর দশকে সংঘাতের বিস্তৃত বর্ণালীর একটি প্রতিনিধি ছিল যার মধ্যে বনের উপর দ্বন্দ্ব অন্তর্ভুক্ত ছিল; বড় বাঁধ সম্পর্কে দ্বন্দ্ব; অনিয়ন্ত্রিত খনির সামাজিক ও পরিবেশগত প্রভাব সম্পর্কে দ্বন্দ্ব। এই আন্দোলনটি হিন্দিতে "চিপকো" অর্থ "আলিঙ্গন" হিসাবে এই নামটি পেয়েছে। লোকেরা গাছকে রক্ষা করার জন্য তাদের আলিঙ্গন করতে শুরু করে। চিপকো আন্দোলন এমন একটি অভিযান যা অহিংসতা এবং সত্যাগ্রহের গান্ধীবাদী পদ্ধতির অনুশীলন করেছিল।এটি ১৯৭৩ সালে উত্তরাখন্ডের চামোলি জেলায় এবং পরে তেহরি গাড়োয়ালে শুরু হয়েছিল। সুন্দরলাল বহুগুণা, গৌরা দেবী এবং চণ্ডী প্রসাদ ভট্ট গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন। এটি মূলত বন উজাড়ের বিরুদ্ধে ছিল। গ্রামবাসীরা, বিশেষ করে মহিলারা এই বিদ্রোহ শুরু করেন।
- নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন - এটি নর্মদা নদীর উপর বহুমুখী বাঁধ প্রকল্পের বিরুদ্ধে আন্দোলন যার ফলে স্থানীয় মানুষের স্থানচ্যুতি এবং বন্যা হবে। মূল কারণটি হ'ল জনগণের জন্য যথাযথ পুনর্বাসন এবং পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করা। এই আন্দোলনের নেতৃত্বে রয়েছেন মেধা পাটেকর, বাবা আম্প্তে এবং অরুন্ধতী রায়। এটি ১৯৮৫ সালে শুরু হওয়া সবচেয়ে প্রভাবশালী আন্দোলন। এটি ভারতীয় সংবিধানের দুটি মৌলিক বৈশিষ্ট্যকে সমর্থন করে: জীবন ও জীবিকার অধিকার। বাঁধ বাহিনী বনের জলোচ্ছ্বাসও ধ্বংস করে দেয়। দীর্ঘ লড়াইয়ের ফলে পিছিয়ে গিয়েছে সর্দার সরোবর বাঁধ প্রকল্পের কাজ।