কোল বিদ্রোহের উদ্দেশ্য কী ছিল?
Answers
☼ কোল বিদ্রোহ (Kol movements):- উনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে যেসব আদিবাসী বিদ্রোহ ঘটে, তাদের মধ্যে কোল বিদ্রোহ ছিল অন্যতম । সুপ্রাচীনকাল থেকেই ‘কোল’ উপজাতি সম্প্রদায় বর্তমান বিহারের সিংভূম, মানভূম, ছোটোনাগপুর প্রভৃতি অঞ্চলে বসবাস শুরু করে । কোলরা হো, মুন্ডা, ওরাওঁ প্রভৃতি সম্প্রদায়ে বিভক্ত ছিল । এঁরা মূলত বনবাসী ও স্বাধীনচেতা । অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত কোলদের স্বাধীন অস্তিত্ব বজায় ছিল । কিন্তু ভারতে ঔপনিবেশিক শাসনব্যবস্থা প্রবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আদিবাসীগণ ব্রিটিশ শক্তির শোষণ নীতির নাগপাশে আবদ্ধ হন । অন্যান্য আদিম জাতিগুলির মতো কোলরাও ছিল কৃষিজীবী । নতুন ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থার অঙ্গ হিসাবে ইংরেজ সরকার বহিরাগত লোকদের কোল সম্প্রদায়ের জমিদার হিসাবে নিযুক্ত করেন । তাঁরা চড়া হারে রাজস্ব আদায়ের সঙ্গে সঙ্গে বিচার ও আইন ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়ে কোল সমাজের ওপর আঘাত হানে, এইসব শোষণ ও বঞ্চনা থেকেই ১৮৩১ সালে কোল বিদ্রহের সূত্রপাত হয় । সাধারণভাবে কোল বিদ্রোহের মূলে ছিল কৃষি অসন্তোষ ।
কোল বিদ্রোহের কারণ -
(ক) চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তনের পর কোল উপজাতির উপর জমিদার ও মহাজন শ্রেণির অত্যাচার বাড়তে থাকলে কোলরা বিদ্রোহের পথ বেছে নেয় ।
(খ) ১৮২০-১৮২১ খ্রিস্টাব্দে পোড়াহাটের জমিদার ও তার ইংরেজ সেনাপতি রোগসেস -এর বিরুদ্ধে 'চাইবাসার যুদ্ধে' কোলরা পরাস্ত হয়ে আত্মসমর্পণে বাধ্য হয় । তির-ধনুক, বর্শা, বল্লম নিয়ে আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্রধারী ইংরেজদের সঙ্গে পেরে ওঠা কোলদের পক্ষে সম্ভব ছিল না । কিছুদিন পর কোলরা আবার ১৮৩১-১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দে বিদ্রোহ শুরু করে ।
(গ) সিংরাই, বুদ্ধ ভগৎ, জোয়া ভগৎ, বিন্দাই মাংকি, সুই মুন্ডা প্রভৃতি নেতাগণ এই বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ।
বিদ্রোহের ব্যাপ্তি ও দমন- রাঁচি, হাজারিবাগ, মানভূম. সিংভূম, পালামৌ, ছোটনাগপুর প্রভৃতি অঞ্চলে কোল বিদ্রোহ ব্যাপক আকার ধারণ করে । কোল বিদ্রোহের পাশাপাশি মানভূমের ভূমিহীন জনসাধারণ বিদ্রোহী হয়ে সরকারি কাছারি ও পুলিশ ঘাঁটিতে আগুন লাগিয়ে দেয় । শেষ পর্যন্ত সৈন্যবাহিনী নিয়োগ করে এই বিদ্রোহ দমন করতে হয় । কোল বিদ্রোহের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল, বিদ্রোহ চলাকালীন সময়ে কোলদের ঐক্যবদ্ধ রূপ । তাছাড়া বিদ্রোহীদের আক্রমণের প্রধান লক্ষ ছিল ইংরেজ ও বহিরাগত জমিদারবর্গ । চার্লস মেটকাফের মতে, তাদের উদ্দেশ্য ছিল ইংরেজ শাসনের অবসান ঘটানো । ঐতিহাসিক জগদীশচন্দ্র ঝা বলেছেন সুযোগ্য নেতার অভাব, আঞ্চলিক সীমাবদ্ধতা, শিক্ষিত মানুষের সমর্থনের অভাব ও বিদ্রোহীদের মধ্যে যোগাযোগের অভাবে কোল বিদ্রোহ ব্যর্থ হয় ।
ফলাফল:- কোল বিদ্রোহের পরে উপজাতিদের জন্য দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত এজেন্সি নামে একটি ভূখন্ড নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয় । এছাড়া এই ভূখন্ডে প্রচলিত ব্রিটিশ আইন কার্যকর করা হবে না বলে ঘোষণা করা হয় । এসব সত্ত্বেও খাজনার হার ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং শোষণের মাত্রাও হ্রাস পায়নি
আমাকে follow করো । উত্তর টা যদি ভালো লেগে থাকে আমাকে ফলো করো ।