লুপ্তপ্রায় মাছ সংরক্ষনের কয়েকটি উপায় ???
Answers
Answer:
যে কোনো লুপ্তপ্রায় মাছ সংরক্ষণের আগে জানা প্রয়োজন ঠিক কোন প্রজাতির মাছ কী কারণে আজ বিলুপ্ত হতে চলেছে। বিভিন্ন কারণে একটি প্রজাতির মাছ লুপ্তপ্রায় হতে পারে, যেমন
- কোনো রোগ অথবা অন্যান্য প্রাণীর আক্রমনের ফলে একটি প্রজাতির মাছের সংখ্যা আজ ক্রমহ্রাসমান।
- মানুষের দ্বারা সৃষ্ট কিছু কৃত্রিম কারণে কোনো একটি প্রজাতির মাছ লুপ্তপ্রায়।
- বিনোদন, বৈজ্ঞানিক অথবা বানিজ্যিক কারণে যথেচ্ছ মাছ ধরা বা overfishing এর ফলে দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে একটি নির্দিষ্ট প্রজাতির মাছ।
- বর্তমান আইন ব্যবস্থা বিভিন্ন প্রজাতির মাছকে পর্যাপ্ত সুরক্ষা প্রদানে ব্যর্থ হলে তা ক্রমে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
বিলুপ্তির সঠিক কারণ অনুধাবন করতে পারলে লুপ্তপ্রায় মাছ সংরক্ষণ করাও অনেক সহজ হয়। কারণ নির্বিশেষে বিভিন্ন লুপ্তপ্রায় মাছ সংরক্ষণের কিছু উপায় বলার চেষ্টা করছি।
বর্জ্য পদার্থ বা আবর্জনার সঠিক নিক্ষেপ - প্লাস্টিক থেকে আমাদের দৈনন্দিন ব্যবহার্য জিনিস অথবা কলকারখানার রাসায়নিক পদার্থ পুকুর, নদী নালা থেকে সমুদ্রে গিয়ে পরে। এর ফলে শুধুমাত্র মাছই নয়, সামুদ্রিক সমস্ত প্রাণীই আজ বিপদের সম্মুখীন। আমরা ছোটবেলা থেকে পাঠ্য বই থেকে শুরু করে বাড়ির বড়দের মুখে প্লাস্টিকের অপকারিতা সম্পর্কে হাজার হাজার কথা শুনে আসছি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে নিটফল যে শূন্য তা আজ বলার অপেক্ষা রাখে না। উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরে প্রতি পাউন্ড zooplankton এ ৬ পাউন্ড করে প্লাস্টিকের সন্ধান মিলেছে। তাই লুপ্তপ্রায় মাছ হোক বা অন্যান্য যে কোনো প্রাণী, এই পৃথিবীকে বাঁচানোর মূল মন্ত্রই হল প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো এবং তার সঠিক নিক্ষেপ।
Reduce, reuse এবং recycle - পুনর্ব্যবহারযোগ্য জিনিসের ব্যবহার করা লুপ্তপ্রায় মাছ এবং প্রাণী সংরক্ষণের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। পৃথিবীতে যত প্লাস্টিক উৎপাদন হয় তার মধ্যে ৮-১২ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক সমুদ্রে এসে সামুদ্রিক প্রাণীর অস্তিত্ব বিপন্ন করে চলেছে। তাই প্লাস্টিকের পরিবর্তে কাঠ বা বাঁশের মতো উপকরণ দিয়ে পুনর্ব্যবহার যোগ্য বস্তু তৈরি করা যেতে পারে। এছাড়া কোনো জিনিস কেনার সময় অতিরিক্ত প্যাকেজিং এড়ানো, বাজার করার সময় কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহার করা বা রেসটুরেন্ট থেকে খাবার আনার সময় নিজের টিফিন ক্যারিয়ার ব্যবহার করার মতো ছোটো ছোটো পদক্ষেপও কিন্তু লুপ্তপ্রায় প্রাণীদের বাঁচানোর জন্য অনেকখানি সহায়তা করে।
সীফুড খাবার সময় সর্তকতা অবলম্বন করা প্রয়োজন - যে কোনো প্রকার সীফুড খাওয়ার সময় তার উৎস অর্থাৎ কোন সামুদ্রিক প্রানী থেকে তা বানানো হয়েছে তা জানা একান্ত প্রয়োজনীয়। যদি কোনো লুপ্তপ্রায় সামুদ্রিক মাছ খাবার হিসাবে দেওয়া হয় তাহলে তা অবশ্যই বর্জন করা উচিত। মানুষের মধ্যে চাহিদা কমলে তবেই এই সব প্রজাতির মাছকে overfishing এর হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব।
লুপ্তপ্রায় মাছকে প্রতিযোগিতার হাত থেকে রক্ষা করা - ফিশ কম্পিটিশন বিভিন্ন প্রজাতির মাছকে বিলুপ্তির দিকে ঠেলে দিতে পারে। একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ resource বা খাদ্যের জন্য অন্য কোনো প্রজাতির মাছের সংখ্যা যদি খুব বৃদ্ধি পায় তাহলে স্বাভাবিক ভাবেই প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হয়। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে মানুষ এই প্রতিযোগিতার সৃষ্টি করে এবং মাছের খাদ্য বা রিসোর্সের ভারসাম্য নষ্ট করে চলেছে। বিভিন্ন সরকারি বা বেসরকারি সংস্থাগুলো বিনোদনের কারণে বিভিন্ন লেকে স্পোর্টস ফিশ বা অন্যান্য অর্নামেন্টাল ফিশ নিয়ে আসে। ফলে, ওই লেকে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির মাছের সাথে নতুন প্রজাতির মাছের যে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হয় তা একটি প্রজাতির মাছের অস্তিত্ব বিপন্ন করতে যথেষ্ট।
স্থানীয় পুকুর, নদী অথবা লেক নিয়মিত পরিষ্কার রাখা খুব প্রয়োজনীয়। এক্ষেত্রে সরকারি সাহায্যের ওপর নির্ভর না করে নিজেদের উদ্যোগ নেওয়া দরকার বলে মনে করি।
লুপ্তপ্রায় মাছেদের বাসস্থান রক্ষা করেও তাদের সংরক্ষণ করা যেতে পারে। শিল্পায়ন, দূষণ, অতিরিক্ত পেস্টিসাইডের ব্যবহার, অথবা বিভিন্ন রোগের প্রাদূর্ভাব নানান প্রজাতির মাছকে বিলুপ্তির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তাই কৃত্রিম উপায় জলাশয়গুলিকে রক্ষা করা আজ অপরিহার্য।
মাছধরার সময় মাছধরার সরঞ্জামগুলো সঠিক ভাবে নিক্ষেপ করা প্রয়োজন। মাছ বা অন্যান্য আকোয়াটিক প্রাণীদের ক্ষেত্রে তা ক্ষতিকারক বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রাণঘাতী ও হয়ে উঠতে পারে।