বিষয়ঃ ইতিহাস
১) টীকা লেখাে :
ক) হিন্দু মেলা
খ) বসু বিজ্ঞান মন্দির
গ) তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার
২) ভারতমাতার চিত্র কীভাবে পরাধীন ভারতে জাতীয়তাবাদের প্রতীক হয়ে উঠেছিল ?
৩) ছাপাখানার বিস্তার ও শিক্ষার প্রসারের সম্পর্ক সমানুপাতিক - উনিশ শতকের মধ্যভাগ থেকে বিশ শতকের প্রথম ভাগে
বাংলার শিক্ষা বিস্তার প্রসঙ্গে উক্তিটির ব্যাখ্যা করাে।
৪) একটি ভারতের মানচিত্রে প্রদত্ত স্থানগুলি চিহ্নিত করাে –
মিরাট, এলাহাবাদ, ব্যারাকপুর, দিল্লি, বঁসি, শ্রীরামপুর, বােলপুর
Answers
Answer:
১) ক) হিন্দু মেলা (1867-1899) ব্রিটিশ ভারতে হিন্দু সম্প্রদায়ের মনে স্বাদেশিকতার ভাব জাগরণ তথা জাতীয় চেতনার প্রসারের উদ্দেশ্যে আয়োজিত একটি মেলা। এই প্রতিঠান জাতীয় মেলা ও স্বদেশী মেলা নামেও পরিচিতি লাভ করে। ১৮৬৭ সালের এপ্রিল মাসে ঠাকুর পরিবারের সহযোগিতায় কলকাতায় প্রথম হিন্দু মেলা আয়োজিত হয়েছিল। রাজনারায়ণ বসু, দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও নবগোপাল মিত্রের যৌথ উদ্যোগে প্রথম হিন্দু মেলার আয়োজন করা হয়। এই মেলার অপর বৈশিষ্ট্য ছিল দেশীয় শিল্পোৎপাদনে উৎসাহ দান,দেশীয় প্রতিক সমূহের প্রতি আনুগত্য । এই জন্য এই মেলাকে বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধের স্বদেশী আন্দোলনের পূর্বসূরি বলে মনে করা হয়। হিন্দু মেলা কলকাতার বাঙালি সমাজের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তনটি নির্দেশ করে। ১৮৩০-এর দশকে ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলন বাংলায় দুটি পরস্পরবিরোধী সমাজচেতনার জন্ম দিয়েছিল। কেউ কেউ ধর্মীয় বিষয়বস্তুর পরিবর্তে আর্থ-সামাজিক বিষয়গুলির প্রতি অত্যধিক গুরুত্ব আরোপ করেন। আবার কেউ কেউ অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিষয়গুলিকে সর্বসমক্ষে তুলে ধরাই মুখ্য কাজ বলে বিবেচনা করেন।
খ ) আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর জন্মদিন ৩০ নভেম্বর। এই দিনটিতেই উনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ওঁর সাধের প্রতিষ্ঠান বোস ইনস্টিটিউট। যাকে সবাই বসু বিজ্ঞান মন্দির বলেই চেনেন। ১৯১৭ সালে। বিশ্বখ্যাত এই সংস্থাও এবার শতবর্ষে। এই উপলক্ষে সংস্থার তরফ থেকে ইতিমধ্যে বেশ কিছু অনুষ্ঠান করা হয়ে গিয়েছে। যার মধ্যে আছে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের আলোচনাচক্র। অংশ নিয়েছেন বিশ্বের তাবড় বিজ্ঞানীরা। সংস্থার পক্ষে অধ্যাপক গৌরীশঙ্কর শা জানিয়েছেন, শতবর্ষ উৎসব পালনের শেষ পর্বে গত ২৫ থেকে ২৫ নভেম্বর আয়োজন করা হয়েছিল ‘হিস্টরি অভ ইন্ডিয়ান সায়েন্স’ শীর্ষক বৈঠক। ‘ফিউচার অভ সায়েন্স’ নিয়ে আলোচনা শুরু হবে আজ। হবে কালও। ৩০ নভেম্বর ইজরায়েলের নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী আডা ইয়োনাথ আসবেন মূল বক্তা হিসাবে।
গ ) ১৯৪২ সালের ১৭ ডিসেম্বর তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার গঠিত হয়। সর্বাধিনায়ক হন বিপ্লবী সতীশচন্দ্র সামন্ত। এই সরকারের বিভিন্ন বাহিনী গঠিত হয়। এই জাতীয় সরকার সে সময় পৃথক শাসনব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল। আইন-শৃঙ্খলা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিচার, কৃষি, প্রচার, সমর ইত্যাদি বিভাগে পৃথক পৃথক সচিব নিয়োগ করা হয়েছিল। সবার উপরে ছিলেন সর্বাধিনায়ক বিপ্লবী সতীশচন্দ্র সামন্ত। অর্থসচিব ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অজয়কুমার মুখোপাধ্যায় এবং সমর ও স্বরাষ্ট্রসচিব ছিলেন সুশীলকুমার ধাড়া। ১৯৪৪ সালে ৩০শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্থায়ী ছিল তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারের অস্তিত্ব।
১৯৪৩ সালের জুন মাসে গ্রেফতার বরণের আগে পর্যন্ত সতীশচন্দ্র এই সরকার পরিচালনা করেছিলেন। ১৯৪৪ সাল পর্যন্ত সফলভাবে কাজ করেছিল তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার। ঘূর্ণিঝড়-বিধ্বস্ত এলাকায় ত্রাণকার্যও চালায় এই সরকার।
২) ব্রিটিশ শাসিত পরাধীন ভারতবর্ষে চিত্রশিল্পীগণ চিত্রের মাধ্যমেও ভারতীয় জাতীয়তাবোধ ফুটিয়ে তোলেন। ভারতীয় জাতীয়তা বোধ সৃষ্টিকারী চিত্রগুলির মধ্যে অন্যতম প্রধান ছিল অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর অঙ্কিত ‘ভারতমাতা’চিত্রটি। জাতীয়তাবাদী ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভারতমাতা চিত্রটির মাধ্যমে বিশ শতকে জাতীয়তাবাদী চেতনার প্রসার ঘটান। চিত্রে ‘ভারতমাতা’ হলেন ভারতবর্ষের প্রতীক।
৩) উনিশ শতকের বাংলায় যে জাগরণ বা নবজাগরণ ঘটেছিল তার কেন্দ্র ছিল মুদ্রণ যন্ত্র বা ছাপাখানা। এই ছাপাখানায় ছিল সকল বিপ্লবের মূল সুর। এই ছাপাখানা থেকেই হাজার হাজার বই সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ত আর এই ছাপা বই বাঙালির চিন্তা ও চেতনায় বিপ্লব সংঘটিত করত। যাইহোক জার্মানির জোহান্স গুটেনবার্গ 1454 খ্রিস্টাব্দে আধুনিক মুদ্রণ যন্ত্র তথা ছাপাখানা আবিষ্কার করলে এক শতাব্দীর মধ্যেই সমগ্র ইউরোপে মুদ্রণ শিল্পের অভাবনীয় প্রসার ঘটে। ভারতে 1556 খ্রিস্টাব্দে গোয়ায় পর্তুগীজদের হাত ধরে ছাপাখানার আবির্ভাব হয় এবং বাংলায় পৌছায় 1770 এর দশকে।