শিক্ষা ও দর্শন এর মধ্যে সম্পর্ক লিখ
Answers
Answer:
শিক্ষা ও দর্শনের সম্পর্ক
শিক্ষা ও দর্শন অত্যন্ত নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত। ব্যক্তির সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটিয়ে বাস্তবমুখী কর্মকা-ের জন্য প্রস্তুত করার সামগ্রিক প্রক্রিয়াই হলো শিক্ষা। আবার বাস্তবমুখী চেতনার বহিপ্রকাশ ঘটানো দর্শনের কাজ। সুতরাং শিক্ষা ও দর্শন এদের আন্ত:সম্পর্ক অতি নিবিড়। এরা পরস্পরের পরিপূরক। শিক্ষা ও দর্শনের সম্পর্ক নিচে কয়েকটি শিরোনামে বর্ণনা করা হলো:
জীবনের গতি নির্ধারণে: মানব জীবনের গতি প্রকৃতি নির্ধারণ করা দর্শন ও শিক্ষার কাজ। শিক্ষার উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীর সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটিয়ে জনকল্যাণে তাকে নিবেদিত করা। যার মাধ্যমে ব্যক্তি এবং সমাজের প্রভূত কল্যাণ সাধিত হয়। আধুনিক বাস্তবধর্মী শিক্ষার মাধ্যমে জীবনে যথার্থ গতি সৃষ্টি করা দর্শনের কাজ।
ব্যক্তি চেতনার উন্নয়নে: দর্শন ব্যক্তি চেতনাকে অনেক শানিত করে যার প্রভাব শিক্ষণ ও শিক্ষাক্ষেত্রে পড়ে। মানবীয় চেতনা যেদিকে প্রবাহিত হয় ব্যক্তির শিক্ষাও সেদিকে ধাবিত হয়। কাজেই ব্যক্তি, সমাজ, এবং রাষ্ট্রীয় উন্নয়নে ব্যক্তি চেতনার প্রয়োগে দর্শনের প্রভাব অনস্বীকার্য।
মুক্ত চিন্তার বিকাশ সাধন: দর্শন মানবের চিন্তার বিকাশ ঘটায়। আর শিক্ষা ব্যক্তির মুক্ত চিন্তাকে বাস্তব কর্মকান্ডে প্রয়োগ ঘটায়। কাজেই দর্শন এবং শিক্ষা উভয়েই মানবীয় উন্নয়ন পরমত সহিষ্ণুতা এবং জনকল্যাণে ব্যক্তিকে ব্রত করে।
সার্থক শিক্ষাক্রম প্রণয়নে: দর্শন মানব সমাজের জন্য কল্যাণকর শিক্ষার যথার্থ শিক্ষাক্রম, পাঠ্যসূচি এবং শিক্ষণ-শিখনীয় বিষয়বস্তু নির্ধারণ করে থাকে। আর শিক্ষা তার যথার্থ বাস্তবায়ন করে। কাজেই আদর্শ শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে উভয়ের ব্যাপক ভূমিকা আছে।
মূল্যবোধের বিকাশে: দর্শন হলো জীবনের মৌলিক মূল্যবোধের গবেষণাগার। আর শিক্ষা এ গবেষণাগার হতে প্রসূত বা কাক্সিক্ষত ফলাফলকে গ্রহণ করে তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে জীবনকে সার্থক ও সুন্দর করে গড়ে তোলে।
বিষয়বস্তুর সাদৃশ্যকরণে: দর্শন এবং শিক্ষা উভয়েরই শিক্ষণ-শিখন বিষয়বস্তুর মধ্যে সাদৃশ্য রয়েছে। কারণ উভয়েই মানবীয় কল্যাণের বিষয়বস্তু নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করে থাকে। দর্শন এবং শিক্ষা সমাজের বিভিন্ন সমস্যা ও তার সমাধান নিয়ে আলোচনা করে থাকে। সে অনুযায়ী জীবনাদর্শ নির্ধারিত হয়ে থাকে।
শিক্ষণ-শিখন পদ্ধতি ও উপকরণ: দর্শন ব্যক্তি ও সমাজের শিক্ষার উন্নয়নে নিবেদিত। বিশেষ করে শিক্ষণÑশিখন কার্যক্রমে যথার্থ শিক্ষণ-শিখন পদ্ধতি প্রনয়ন ব্যবহারে দার্শনিক প্রভাব কাজে লাগে। পাশাপাশি শিক্ষার সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ শিক্ষা উপকরণ সংগ্রহ, ব্যবহার এবং সংরক্ষণে দর্শন ও দার্শনিক মতবাদ পাথেয় যোগায়।
মূল্যায়নে: শিক্ষা সংক্রান্ত কাজের ম্যল্যায়নে দর্শনের জ্ঞান অপরিহার্য। মূল্যায়ন যেহেতু উদ্দেশ্যের পরিপ্রেক্ষিতে করা হয় সেজন্য তার ওপর ও দর্শনের প্রভাব রয়েছে। মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার পদ্ধতি ও উপকরণ নির্বাচনে শিক্ষাদর্শন পরোক্ষভাবে প্রভাব বিস্তার করে। সুতরাং দর্শন এবং শিক্ষা পারস্পর নিবিড়ভাবে জড়িত।
শিক্ষা ও দর্শন এর মধ্যে সম্পর্ক হ'ল
১- দর্শন ও শিক্ষা একে অপরের সাথে পরস্পর সম্পর্কিত, পরস্পর সংযুক্ত এবং পরস্পর সম্পর্কযুক্ত।
২- শিক্ষা ও দর্শন গতিশীল কারণ উভয়ই মানুষ এবং তাদের জীবন নিয়ে কাজ করে।
৩- দর্শন তাত্ত্বিক কিন্তু শিক্ষা ব্যবহারিক প্রকৃতির।
৪- দর্শন লক্ষ্য স্থির করে এবং ব্যক্তির মধ্যে একটি ভাল জীবন তৈরি করে কিন্তু শিক্ষা সেই সমাধান খুঁজে বের করে যার মাধ্যমে একজন মানুষের লক্ষ্য পূরণ করা যায়।
৫- দর্শন নির্ধারণ করে কোনজীবন গঠন করে কিন্তু শিক্ষা সেই জীবনকে খুব গৌরবময় করে তোলে।
6- দর্শন শেষ নিয়ে কাজ করে কিন্তু শিক্ষা সেই উদ্দেশ্যগুলি অর্জনের জন্য কিছু কৌশল নিয়ে কাজ করে।
৭- দর্শন কিছু বিমূর্ততা নিয়ে কাজ করে কিন্তু শিক্ষা কংক্রিট প্রকৃতির।
৮- দর্শনের মাধ্যমে সত্য ও নীতি প্রতিষ্ঠিত হতে পারে কিন্তু শিক্ষা একটি প্রক্রিয়ায় এটিকে সাহায্য করে।
৯- দর্শন হল প্রজ্ঞার প্রেম কিন্তু শিক্ষা ব্যক্তির জন্য এই সমস্ত জ্ঞান সংগ্রহ করে।
১০-দর্শন শিক্ষার বিভিন্ন দিক নির্ধারণ করে কিন্তু শিক্ষা দর্শনের একটি অংশ যাতে বলা হয় "দর্শন হল মা ওস সমস্ত বিষয়"।