বিশ্ব কবি রবীনদ্রনাথ ঠাকুর
Answers
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
বিশ্বকবি কলকাতার জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারে ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দের ৭ই মে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং মাতা সারদা দেবী-র কনিষ্ঠ সন্তান হলেন রবীন্দ্রনাথ। প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর সম্পর্কে তাঁর পিতামহ। শৈশবে রবীন্দ্রনাথ কলকাতার ওরিয়েন্টাল সেমিনারি নর্ম্যাল স্কুল, সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজিয়েট স্কুলে কিছুদিন করে পড়াশোনা করেছিলেন। কিন্তু বিদ্যালয়ের চার দেওয়ালের মধ্যে আবদ্ধ শিক্ষায় অনাগ্রহী হওয়ায় বাড়িতেই গৃহশিক্ষক রেখে তাঁর শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ১৮৭৮ সালে ব্যারিস্টারি পড়ার উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ডে যান রবীন্দ্রনাথ। কিন্তু সাহিত্যচর্চায় মনোযোগ নিবেশ করে তিনি পড়াশোনা সমাপ্ত করতে পারেননি। প্রায় দেড় বছর পর দেশে ফিরে আসেন। ১৮৮৩ সালের ৯ ডিসেম্বর মৃণালিনী দেবীর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের বিবাহ সম্পন্ন হয়। লেখালেখির কাজ বালক বয়স থেকেই শুরু করেছিলেন রবি। শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির সব বিষয়েই তিনি সমান পারদর্শী ছিলেন। মোট বারোটি উপন্যাস রচনা করেছেন তিনি। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল: গোরা, ঘরে বাইরে, শেষের কবিতা, চার অধ্যায় ইত্যাদি। তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলি হল সন্ধ্যাসংগীত, মানসী, সোনার তরী, কল্পনা, ক্ষণিকা, নৈবেদ্য, খেয়া, গীতাঞ্জলি, বলাকা, পুনশ্চ। সারা বিশ্বে রবীন্দ্রনাথের সর্বাপেক্ষা সুপরিচিত গ্রন্থটি হল গীতাঞ্জলি (Song Offerings)। এই কাব্যগ্রন্থটির জন্যই তিনি ১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কার লাভ করেছিলেন। সমাজ, ধর্ম, ভারতবর্ষ, ইতিহাস, সাহিত্য, সাহিত্যের পথে, সাহিত্যের স্বরূপ, প্রাচীন সাহিত্য ইত্যাদি গ্রন্থে রবীন্দ্রনাথের প্রবন্ধসংকলন প্রকাশিত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক ছোটগল্পকার। বিশ্বের প্রথম সারির ছোটোগল্পের রচয়িতা মঁপাসা, চেকভ, এডগার অ্যালন পো –এর পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথের নাম নেওয়া হয়। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন জীবনীমূলক, পত্রসাহিত্য, ভ্রমণ কাহিণী ইত্যাদি ধরনের সাহিত্য রচনা করেছেন। ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের জাতীয় সংগীত জনগণমন অধিনায়ক জয় হে ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত আমার সোনার বাংলা তাঁর রচনা। বহু গীতিনাট্য ও নৃত্যনাট্যের রচনা করেছেন রবীন্দ্রনাথ। ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের লোকনৃত্য ও ধ্রুপদি নৃত্যশৈলীগুলির সংমিশ্রণে তিনি “রবীন্দ্রনৃত্য” এর প্রবর্তন করেন। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময়ে হিন্দু ও মুসলমানদের সম্প্রীতির উদ্দেশ্যে কবিগুরুর উদ্যোগে পালিত হয়েছিল ‘রাখীবন্ধন উৎসব’। ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগে ইংরেজদের নির্মম হত্যালীলার প্রতিবাদে তিনি ইংরেজ প্রদত্ত “নাইট” উপাধি ত্যাগ করেন। ১৯০১ সালে বিশ্বকবি শান্তিনিকেতনে গড়ে তোলেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। চার দেওয়ালের বাইরে প্রকৃতির উন্মুক্ত পাঠে শিশুদের সামিল করার তাঁর প্রয়াস অভিনব। দীর্ঘদিন রোগে ভুগে ১৯৪১ সালের ৭ই আগস্ট ৮০ বছর বয়সে এই মহামানবের জীবনাবসান হয়। রবীন্দ্রনাথের উদ্দেশ্য শরৎচন্দ্র লিখেছিলেন, “কবিগুরু তোমার প্রতি চাহিয়া আমাদের বিস্ময়ের সীমা নাই।” মানবতার পূজারি রবি ঠাকুর দেশ-কাল-সময়ের বিভেদ ঘুচিয়ে সমগ্র বিশ্বে তাঁর প্রয়াস ব্যাপ্ত করে গেছেন, তাঁর সৃষ্টিকর্মের মাধ্যমে।