দৃশ্য-১
পুজোর বাজারের থিকথিকে ভিড় একটি শোরুমে। এরই মধ্যে একটি কচি গলার চিৎকার সব আওয়াজকে ছাপিয়ে গেল, 'পাপা কোথায়, পাপা?'
ট্রায়াল রুম থেকে বেরিয়ে সবার আগে পাপাকে দেখানো চাই ছোট্ট মেয়েটির; পাপা বলবে, পোশাকটা তাকে কেমন মানিয়েছে।
পাপা উদাস ভাবে বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল, বোধহয় ভিড় তার পছন্দ নয়। মেয়েটি পাপার সামনে দুহাত ছড়িয়ে দাঁড়ায়, ভাবটা হল, 'দেখো তো আমায় কেমন লাগছে?'
পাপার পছন্দ হলে তবেই পোশাকটা রাখা হবে।
আমি মুগ্ধ হয়ে সেই দৃশ্য দেখছিলাম আর ভাবছিলাম, আজ থেকে পনের-কুড়ি বছর পর দৃশ্যটা পাল্টে যাবে, তখন ট্রায়াল রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকবে মেয়েটির প্রেমিক কিংবা স্বামী, যাকে মেয়েটি বলবে, 'দেখো তো আমায় কেমন লাগছে??'
দৃশ্য-২
মহালয়ার ভোরে ঘুম ভেঙ্গে গেল আমার। রেডিওটা অন করলেই হয়, কিন্তু ইচ্ছে করে না মোটেই। একা একা কি কোনো আনন্দকেই আনন্দ বলে মনে হয়? ছেলে পড়ে আছে কোন দূর দেশে, আর আমি পড়ে আছি এখানে, একা এই বাড়িতে। বাইরে বাগানে গাছ ভরে শিউলি ফুল ফুটেছে। তারই গন্ধ নাকে এসে লাগছে। মনটা যেন একলাফে অনেক অনেক বছর পেছনে চলে যায়। মনে পড়ে যায় বন্ধুদের সাথে হুড়োহুড়ি করে ফুল কুড়োনোর কথা। এখনও নিশ্চয়ই শিউলি গাছের তলা ফুলে ফুলে সাদা হয়ে গেছে, কিন্তু কুড়োনোর মানুষ নেই। সব হারিয়ে গেছে, কিচ্ছু আর ফিরে আসবে না। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে অলস পায়ে ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ালাম। সঙ্গে সঙ্গে চমকে উঠলাম নিচে তাকিয়ে। গোলাপি ফ্রক পরা ছোট্ট একটা মেয়ে মুঠো ভর্তি করে ফুল কুড়োচ্ছে এই ভোরবেলায়। চিৎকার করলাম, "কে রে ওখানে?" মেয়েটা মুখ তুলে ফিক করে হেসে বলল, "আমি গো ঠাম্মা! তোমার ফুল লাগবে?"
চিনতে পারলাম, রান্নার বউ মালতীর মেয়ে পিঙ্কিকে।
পিঙ্কির দেওয়া মুঠো ভর্তি শিউলি ফুল টেবিলে সাজিয়ে রাখতে রাখতেই ফোন টুং টাং আওয়াজ করে উঠলো। তুলে নিয়ে দেখি ছেলে মেসেজ করেছে, "মা, মহালয়া কেমন শুনছ? নিশ্চয়ই খুব মন খারাপ তোমার? নাও এবার সব মন খারাপ দূরে সরিয়ে রেখে কোমর বেঁধে তৈরি হয়ে নাও। পুজোর পাঁচ দিন মা-ব্যাটায় অনেক ঘুরব। স্যরি, তোমাকে সারপ্রাইজ দেবো বলে আগে বলি নি। ষষ্ঠীর ভোরেই আমি আসছি!"
আছে, আছে! সব আছে! কিচ্ছু হারিয়ে যায় নি! ছুটে গিয়ে রেডিওটা অন করলাম, সঙ্গে সঙ্গে ঘর মুখরিত হয়ে উঠলো সুরেলা আওয়াজে,
"বাজলো তোমার আলোর বেণু, মাতলো যে ভুবন
আজ প্রভাতে সে সুর শুনে খুলে দিনু মন।'
অন্তরে যা লুকিয়ে রাজে
অরুণবীণায় সে সুর বাজে—
এই আনন্দযজ্ঞে সবার মধুর আমন্ত্রণ।"
দৃশ্য-৩
টুকিটাকি কেনাকাটা সেরে রিক্সায় বাড়ি ফিরছি। দেখছি মহা সমারোহে গাড়িতে চাপিয়ে মাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে মণ্ডপের উদ্দেশ্যে। দুহাত মাথায় ঠেকিয়ে প্রণাম করলাম মাকে। দেখি রিকশাওয়ালা রিক্সা চালাতে চালাতেই শীর্ণ দুহাত কপালে ঠেকিয়ে ভক্তিভরে প্রণাম করল মাকে। চিরকালের বঞ্চিত জীবনেও মায়ের প্রতি তাঁর অগাধ ভক্তি। কিছুটা কৌতূহলে, কিছুটা মজা করে জিজ্ঞেস করলাম,
"কি চাইলে মায়ের কাছে?"
সে একগাল হেসে বলল, "চাইব আবার কি। মা যা দিয়েছেন, তার জন্যই ধন্যবাদ জানালাম মাকে।"
"কি দিয়েছেন মা তোমায়?" কিছুটা অবাক হয়েই জিজ্ঞেস করলাম।
"গেল বছর খুব খারাপ অবস্থা গেছে দিদি! একবেলা খেলে আরেকবেলা খেতে পাই না এমন দশা। তখনই রিক্সা চালানোর কাজটা পেলাম। বলতে নেই মায়ের দয়ায় এ বছরে অনেক রোজগার হচ্ছে আমার।" আবার একগাল হাসল সে।
আমি স্তব্ধ হয়ে ভাবছিলাম, কত পেয়েও আমরা সন্তুষ্ট হতে পারি না। আরও আরও চাই করে নিজেরও শান্তি নষ্ট করি, ঈশ্বরকেও শান্তিতে থাকতে দিই না। সেজন্যেই বলে অল্পে সন্তুষ্ট মানুষেরাই পৃথিবীতে সবচেয়ে সুখী।
দৃশ্য-৪
বিশাল একটি নামকরা পুজো প্যান্ডেলে দাঁড়িয়ে আছি। ভিড়ের মধ্যেই প্রাণপণ চেষ্টা করছি ছবি তোলার। সেই সময়েই ছেলে মেয়ে একদিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করল আমার। দেখি এক ভদ্রলোক ভিড়ের মধ্যেই ভিডিও কলিং এ ব্যস্ত। দেখে বিরক্ত হওয়ার আগেই শুনতে পেলাম ভদ্রলোক বলছেন, "এই দেখো বাবা প্রতিমা! এই দেখো প্যান্ডেলটা কেমন সাজিয়েছে!"
বুঝতে পারলাম বাড়িতে বসে থাকা বৃদ্ধ অশক্ত বাবাকে পুজোর আনন্দে সামিল করতে চাইছেন ভদ্রলোক। কারণ আমার চোখে পড়ে গেছে ওপ্রান্তে এক বৃদ্ধের হাসিমুখ। ছেলের কথার মাঝখানেই ভক্তিভরে দুহাত মাথায় মাথায় ঠেকালেন বৃদ্ধ। আমি আমার ছেলে মেয়ের মুগ্ধ চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝলাম পুরো ব্যাপারটায় যে এক আশ্চর্য ভালোবাসা জড়িয়ে আছে, সেটu
Attachments:
Answers
Answered by
1
Answer:
পিটিএ নি ভাই উত্তর। দুঃখিত আমি সত্যিই পয়েন্ট প্রয়োজন
Similar questions