একটি গ্রামের আত্মকথা নিয়ে প্রবন্ধ রচনা লেখ।
Answers
আমি একটি 'গ্রাম,। ১৯৭১ সালে অজস্র গোলা বারুদ ও কামানের আঘাতে আমার বুকটা একেবারে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল। আমার এই ছোট্ট বুকের উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছিল অগনিত মানুষের বুকের তাজা রক্ত, মানুষের লাশ ও পশু-পাখির মৃতু্য দেহ আমার কোমল মাটির সাথে পচে গলে মিশে হয়েছিল একাকার। হানাদার বাহিনীর আগুনের লেলিহান শিখায় গ্রামের ঘর-বাড়ী গুলি জ্বলে পুড়ে হয়েছিল ছাই। আমি প্রায় জনশূন্য হয়ে একাকী নীরবে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এসব হূদয় বিদারক দৃশ্য ও রক্তের হোলি খেলা দেখে আসছিলাম একনাগাড়ে দীর্ঘ নয়-নয়টি মাস। স্রষ্টার অসীম কৃপায় ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হলো আর সেই সুবাদে আমি ও বাংলাদেশের একটি 'গ্রাম, হিসাবে নবরূপে পরিচিতি লাভ করলাম। (আমিন!)
প্রারম্ভে সহজ সরল কতিপয় কৃষক পরিবার ও ছোট ছোট কয়েকটি ঘর বাড়ী নিয়ে শুরু হল 'আমি গ্রামের, পথচলা। আমার চার পাশে ছিল খোলা ফসলের মাঠ, বাড়ী ঘরের আশে পাশে ছিল রংবেরং-এর ফুল ও ফলের গাছ, প্রত্যেক পরিবারের ছিল গোলা ভরা ধান, দীঘি ভরা মাছ, গোয়াল ভরা গরু, ঝিল-বিলে ছিল হরেক রকম মাছ, গাছে গাছে ছিল নানা প্রজাতির পাখ-পাখালির অবাধ বিচরণ। নদীর কলকল ধবনি, খোলা মাঠের মুক্ত বাতাস, গাছের সবুজ পাতার দোলন, প্রশান্তির শীতল পরশ ও মায়ার আঁচল আমায় করেছিল আপনার চেয়ে কতনা আপন। কত জ্ঞানী গুণী শিল্পী-সাহিত্যিক গাঁয়ের রূপ-লাবন্য বর্ণনা করে অর্জন করেছে খ্যাতি, কুড়িয়েছে সুনাম। বাহ! মনে হচ্ছিল নূতন দেশের নূতন গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়ে আমি বুঝি স্বার্থক হলাম।
'আমি গ্রামে' বসবাসরত সহজ সরল মানুষ গুলোর প্রচুর টাকা বা ধনসম্পদ ছিল না বটে, তবে খুব সুখেই বসবাস করে আসছিল। সাজ সকালে পান্তাভাত খেয়ে কৃষাণ-কৃষাণীরা যে যার যার কাজে নেমে পড়ত। ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা মনের আনন্দে মাঠে মাঠে নানারকম খেলা ধূলায় ব্যস্ত থাকত। সবুজ শ্যামল খোলা মাঠে গরু ছাগল দিনভর চরে বেড়াত আর গোধূলী বেলায় ধূলা উড়িয়ে গোয়াল ঘরে ফিরে আসত। সন্ধ্যা বেলায় মহিলারা জড় হয়ে খোশগল্পে বসে যেত ও কোরাস মিলিয়ে মিষ্টি মধুর গানে গানে পাড়াময় মুখরিত করে তুলত। চাঁদনী রাতে হরিবদল দিয়ে ছেলেরা মিলিত হয়ে ধূলিময় ক্ষেতে হা-ডু-ডু খেলার আয়োজন করত। রাতে যাত্রা গানের সানাই সুর পরিশ্রান্ত মানুষ গুলোর মনঃপ্রাণ অনন্দ ও বিনোদনে পুলকিত করে তুলত। আপদে বিপদে সুখে-দুঃখে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একসাথে সকলেই যেন সকলের তরে ছিল একটিই পরিবার।