এ্যাসাইনমেন্টে
মনে কর, তুমি শিক্ষা সফরে কোন
বিশেষ স্থানে ভ্রমন করতে
গিয়েছে। সেখানে গিয়ে তুমি কোন
কোন ধরণের অভিজ্ঞতা অর্জন
করলে তার একটি বিবরণ লিপিবদ্ধ
কর।
Answers
Answer:
শিক্ষা সফর শিক্ষার এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা পুঁথির ক্ষুদ্র গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ; বইয়ের বিদ্যার বাইরেও আরো অনেক কিছু দেখার ও শেখার আছে। অর্থাৎ, বইয়ের জ্ঞানের পাশাপাশি বাস্তব জ্ঞানও দরকার।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, ‘প্রত্যক্ষ বস্তুর সহিত সংস্রব ব্যতীত জ্ঞানই বলো, চরিত্রই বলো, নির্জীব ও নিষ্ফল হতে থাকে।’
বইয়ের শিক্ষার সঙ্গে বাস্তব শিক্ষার সম্পর্ক আছে। ইতিহাস পাঠের একটি অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক রয়েছে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, শিলালিপি, পাণ্ডুলিপি প্রভৃতিতে। সোনারগাঁ, ময়নামতি, পাহাড়পুর, সুন্দরবন—এসব যদি নিজের চোখে দেখা যায়, তবে বইয়ের বিবরণ জীবন্ত হয়ে মনের কোণে স্থায়ী হয়ে থাকে। আমরা যেন সেই ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়েও শুনতে পাই তার শাশ্বত বাণী। সে ক্ষেত্রে শিক্ষা সফরের কোনো বিকল্প নেই। শিক্ষার প্রতিটি ক্ষেত্রেই সফরের গুরুত্ব রয়েছে। শ্রেণিকক্ষের শিক্ষার পূর্ণতা আনার জন্যই শিক্ষা সফর। দেশভ্রমণের সঙ্গে এর কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। দেশভ্রমণের মূল উদ্দেশ্য আনন্দ। তার পাশাপাশি জ্ঞানার্জন; কিন্তু শিক্ষা সফরের মূল উদ্দেশ্য শিক্ষা গ্রহণ। পৃথিবীর বিচিত্র স্থানগুলো চাক্ষুষ অভিজ্ঞতার দ্বারা সম্পূর্ণ নতুনভাবে আমাদের সামনে উদ্ভাসিত হয়ে উঠে। বস্তুত শিক্ষা সফর না করলে অনেক শিক্ষাই অসম্পূর্ণ থেকে যায়। ঘরের বাইরে জীবনের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার মাধ্যমে যে শিক্ষা লাভ হয়, তা হয় বাস্তবধর্মী। তাই বলা হয়, জ্ঞান লাভের উপায় হলো দুটি। একটি হলো বই পড়া, অন্যটি শিক্ষা সফর। প্রাচীনকালে যখন বই সহজ লভ্য ছিল না, তখন জ্ঞানপিপাসু মানুষ শিক্ষা সফরে বেরিয়ে পড়তেন। তাঁদের অভিজ্ঞতা আজ আমাদের জন্য অতীতকে জানার সূত্র হয়ে গেছে। ঐতিহাসিকরা একের পর এক দেশ সফর করে মানবসভ্যতার ইতিহাস রচনায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গেছেন। এ সফর বিশ্ব-ইতিহাস রচনায় যেমন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে, তেমনি বিশ্বসাহিত্যকেও সমৃদ্ধ করেছে। শিক্ষা সফরের উদ্দেশ্য হলো—বাইরের জগতের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা, বাইরের পরিবেশ থেকে বাস্তব জ্ঞান অর্জন করা। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিষয়েই পাঠদান করা হয়। এসব বিষয়ের প্রায় প্রতিটিই আমাদের জীবন ও জীবনব্যবস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাই পুঁথিগত বিদ্যার বাইরে সেসব বিষয়ের সঙ্গে চাক্ষুষ পরিচয়ের গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না। শিক্ষার জন্যই শিক্ষা সফরের আবশ্যকতা অপরিহার্য। বাংলাদেশে শিক্ষা সফরের বেশ কয়েকটি পর্যটন স্থান রয়েছে। কক্সবাজার, রাঙামাটি, খুলনার সুন্দর বন, সিলেটের চা-বাগান, জাফলং, তামাবিল, পটুয়াখালীর কুয়াকাটা, চট্টগ্রামের ফয়েজ লেক, যমুনা সেতু ইত্যাদি পর্যটনের স্থান হিসেবে বেশ সমাদৃত। এসব স্থানে এসে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন পরিবেশ, বনায়ন, ভূপ্রকৃতি এবং বিভিন্ন ধরনের বৃক্ষের সঙ্গে পরিচিতি লাভ করতে পারে। এ ছাড়া বিভিন্ন পুরাকীর্তির নিদর্শন দেখার জন্য রয়েছে পাহাড়পুর মহাস্থান গড়। কুমিল্লার ময়নামতি, ঢাকার আহসান মঞ্জিল, বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদ, সোনারগাঁ, লোকশিল্প জাদুঘর, দিনাজপুরের কান্তজির মন্দির, নাটোরের দিঘাপতিয়ার রাজবাড়ি—এসবই প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন ও প্রসিদ্ধ স্থান হিসেবে আমাদের দেশকে কৃষ্টি ও সভ্যতায় সমৃদ্ধ করেছে। বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গে শিক্ষা সফরের সম্পর্ক রয়েছে বলে বিষয় নির্ধারণ করে শিক্ষা সফরের জন্য স্থান নির্বাচন করতে হবে। আর এই সফরকে শিক্ষারই একটি অনিবার্য অঙ্গ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। তবেই শিক্ষা বাস্তবধর্মী ও অধিক কার্যকরী হবে।
Explanation: