Sociology, asked by jahid30, 4 months ago

বাংলা নবজাগরন ও তৎকালীন সমাজ ব‍্যবস্থার পরিবর্তনে প্রতিনিধিত্বকারী বিভিন্ন ব‍্যক্তির গুরুত্বপূর্ন অবদান বর্ণনা কর।​

Answers

Answered by sujankar131
6

Answer:

বাংলার নবজাগরণ বলতে বোঝায় ব্রিটিশ রাজত্বের সময় অবিভক্ত ভারতের বাংলা অঞ্চলে ঊনবিংশ ও বিংশ শতকে সমাজ সংস্কার আন্দোলনের জোয়ার ও বহু কৃতি মনীষীর আবির্ভাবকে। মূলত বাংলার নবজাগরনের শুরু করেন রাজা রামমোহন রায়ের সময় এবং এর ধরা শেষ হয় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময়। যদিও এরপর অনেক জ্ঞানীগুণী ও শিক্ষাবিদ বাংলার নবজাগরণ এর ধারক ও বাহক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। 

অনেক অধুনিক পণ্ডিত মনে করেন বাংলা নবজাগরণ সুত্রপাত হয় উনিশ শতকের গোড়ার দিকে, আবার অনেকের মতে গোটা উনিশ শতক জুড়েই বাংলায় বুদ্ধিবৃত্তিক জাগরণ চলে যাকে যথার্থই ইউরোপীয় ধারার নবজাগরণ বলা যায়।

বাংলার নবজাগরণ ও তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তনে বিভিন্ন ব্যক্তি গুরুত্বপূর্ণ অবদান সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো 

১. ওয়ারেন হেস্টিংস Warren Hastings (১৭৩২ - ১৮১৮): ওয়ারেন হেস্টিংস ছিলেন ভারতবর্ষের প্রথম গভর্নর জেনারেল। ১৭৫০সালে তিনি ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীতে যোগ দেন এবং কলকাতা আসেন। তৎকালীন সময়ে অনেক মুসলিম তাদের রাজ্য হারিয়েছিল। তাই তিনি মুসলিমদের রাজ্য হারানোর কষ্ট দূর করার জন্যে ১৭৮১ কলকাতা মাদ্রাসা প্ৰতিষ্ঠা করেন এবং এতে মুসলমিদের চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে ১৭৯১ সালে হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য প্ৰতিষ্ঠা করেন সংস্কৃত কলেজ। আধুনিক শিক্ষার ছোঁয়া পেয়ে স্থানীয় মানুষদের ভিতর নতুন ভাবনার উদ্ভব হয়। ধীরে ধীরে মানুষের মধ্যে বিভিন্ন প্রশ্নের জন্ম নেয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সতীদাহের মতো কুপ্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলেন শুরু হয় এবং বিধবা বিবাহের মত তৈরী হয়।  

২. স্যার উইলিয়াম কেরি - William Carey (১৭৬১ – ১৮৩৪) : উইলিয়াম কেরি ছিলেন একজন মিশনারি ও বাংলায় গদ্য পাঠ্যপুস্তকের প্রবর্তক অনুবাদক, সামাজিক সংস্কারক। ধর্মপ্রচার ও শিক্ষা প্রসারের সুবিধার্থে কলকাতার অদূরে শ্রীরামপুরের ড্যানিশ কলোনিতে একটি ছাপাখানা স্থাপন করেন। এবং এই প্রেস থেকে ১৮০০ সালে ৫ই মার্চ ম্পূর্ণ বাংলা ভাষায় বাইবেলের নতুন নিয়ম প্রকাশ করেন। শুধু বাইবেল নয় তিনি বাংলা ব্যাকরণ রচনা, মুদ্রণযন্ত্র প্রতিষ্ঠা, সংবাদপত্র প্রকাশ, স্কুল টেক্সট বোর্ড গঠনসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজের পথ প্রদর্শক ছিলেন। ইংরেজরা উচ্চ শিক্ষার জন্য সারাদেশে স্কুল প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি কিছু কলেজও স্থাপন করে। অবশেষে ১৮৫৭ সালে উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণার প্রতিষ্ঠান হিসাবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় । ১৮১১ সালে শ্রীরামপুরে মুদ্রণযন্ত্র স্থাপনও বাংলার মানুষের মনকে মুক্ত করা ও জাগিয়ে তােলার ক্ষেত্রে আরেকটি পথ খুলে দেয়। এর ফলে বইপুস্তক ছেপে জ্ঞানচর্চাকে শিক্ষিত সাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া ও স্থায়িত্ব দেওয়ার পথ সুগম হয়।

৩. রাজা রামমোহন রায় - Ram Mohan Roy (১৭৭২ –  ১৮৩৩): রাজা রামমোহন রায় প্রথম ভারতীয় ধর্মীয়-সামাজিক পুনর্গঠন আন্দোলন ব্রাহ্মসমাজের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি দ্বারকানাথ ঠাকুরের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ব্রাহ্মসমাজ স্থাপন করেন।  ব্রাহ্মসমাজ এক সামাজিক ও ধর্মীয় আন্দোলন এবং বাংলার পুনর্জাগরণের পুরোধা হিসাবে কাজ করে এই জন্য তাকে ভারতের নবজাগরণের জনক বলা হয়। সতীদাহ প্রথা উচ্ছেদের জন্য তার উদ্যোগে প্রতিবাদে পুস্তিকা বের হল 'বিধায়ক নিষেধকের সম্বাদ'। রাজা রামমোহন রায়ের সামাজিক আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতেই ১৮২৯ সালের ৪ ডিসেম্বর ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সীতে সতিদাহ প্রথাকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল ঘোষণা করা হয়।

৪. ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর - Ishwar Chandra Vidyasagar (১৮২০ –১৮৯১): ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর উনবিংশ শতকের একজন বিশিষ্ট বাঙালি শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক ও গদ্যকার। বাংলায় নারীশিক্ষার প্রসারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। তিনি ছিলেন নারীশিক্ষার বিস্তারের পথিকৃৎ। নারীমুক্তি আন্দোলনের প্রবল সমর্থক ছিলেন তিনি। হিন্দু বিধবাদের অসহনীয় দুঃখ, তাদের প্রতি পরিবারবর্গের অন্যায়, অবিচার, অত্যাচার গভীরভাবে ব্যথিত করেছিল তাকে। এই বিধবাদের মুক্তির জন্য তিনি আজীবন সর্বস্ব পণ করে সংগ্রাম করেছেন। তারই আন্দলনের কারনে  ১৮৫৬ সালে সরকার বিধবা বিবাহ আইনসিদ্ধ ঘোষণা করেন। এবং সেই সাথে বহুবিবাহের মতো একটি কুপ্রথাকে নির্মূল করতে সগ্রাম করেন।

৫. ডিরোজিয়ো (১৮০৯ –১৮৩১) ঃ  হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিয়ো একজন ইউরেশীয় কবি, যুক্তিবাদী চিন্তাবিদ ও শিক্ষক। বহু যুগের কুসংস্কার আর ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে বদ্ধ, জীর্ণ এই সমাজে তিনি ঝড় তুলেছিলেন। জন্ম সূত্রে বাঙালি না হলেও বাঙালিদের সঙ্গে মনে প্রাণে জড়িয়ে ছিলেন তিনি। ১৮ বছর বয়সে তিনি হিন্দু কলেজের ইংরেজি সাহিত্য এবং ইতিহাসের অধ্যাপক হয়েছিলেন। রাজা রামমোহন রায় ব্রাহ্ম সমাজ প্রতিষ্ঠা করার পর থেকে সেই সময় হিন্দু সমাজ যথেষ্ট অশান্তির মধ্যে দিয়ে চলছিল। কারন যারা হিন্দু আদর্শকে মানলেও পৌত্তলিকতাকে অস্বীকার করেছিল। যার ফলশ্রুতিতে ডিরোজিয়োর সমাজ পরিবর্তনের ধারণা ব্যাপকভাবে সাড়া ফেলেছিল। বিশেষ করে তরুন্দের মধ্যে। তিনি তাঁদেরকে মুক্ত চিন্তা, প্রশ্ন করা এবং অন্ধভাবে সবকিছু গ্রহণ না-করতে অনুপ্রাণিত করতেন। তাঁর কার্যকলাপ বাংলায় বৌদ্ধিক বিপ্লব ঘটাতে সমর্থ হয়েছিল। এটাকেই বলা হয়েছিল ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলন।

৬. মাইকেল মধুসূদন দত্ত (১৮২৪ –১৮৭৩):  মাইকেল মধুসূদন দত্ত ঊনবিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঙালি কবি ও নাট্যকার। তাকে বাংলার নবজাগরণ সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব গণ্য করা হয়। আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রথম বিদ্রোহী কবি হিসেবেও তিনি পরিচিত। মাইকেল মধুসূদন বাংলা ভাষায় সনেট ও অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক। মাইকেল মধুসূদন দত্ত একাধারে ছিলেন বহু ভাষাবিদ। মাতৃভাষা ছাড়া তিনি আরো বারোটি ভাষা জানতেন। বাংলা সাহিত্যে তারঅবদান অনস্বীকার্য। তার সময়ে বাংলা সাহিত্যের বিকাশ ঘটে। 

৭. কাজী নজরুল ইসলাম ( ১৮৯৯ - ১৯৭৬) ঃ কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম অগ্রণী বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার এবং বাংলাদেশের জাতীয় কবি। বাংলার নবজাগরণের পিছনে কাজী নজরুল ইসলামের অবদান অনেক। তার সময়ে কবিতা ও গানের ধারাকে সম্পূর্ণ বদলে

Answered by Anonymous
9

Answer:

Answer

4.0/5

11

abhiramwarrier2007

Ace

277 answers

31.8K people helped

Answer:

আপনার উত্তর সাথী এখানে

Explanation:

বাঙালি নবজাগরণ বা সহজভাবে বেঙ্গল রেনেসাঁ, 19 ম শতাব্দী থেকে শুরু করে বিংশ শতাব্দীর শুরুতে বাঙালি অধ্যুষিত ব্রিটিশ ভারতীয় সাম্রাজ্যের সময়কালে ভারতীয় উপমহাদেশের পূর্ব অংশে বঙ্গ অঞ্চলে একটি সাংস্কৃতিক, সামাজিক, বৌদ্ধিক ও শৈল্পিক আন্দোলন ছিল was হিন্দু সম্প্রদায়। [1]

Orতিহাসিক নীতীশ সেনগুপ্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (১৮–১-১৯৪১) শিবচন্দ্র সরকার (১৮72২ - ১৯৫৮) এর মাধ্যমে রাজা রাম মোহন রায় (১––২-১33৩৩) থেকে বেঙ্গল রেনেসাঁর ঘটনা ঘটে বলে বর্ণনা করেছেন। [২] ইতিহাসবিদ সুমিত সরকারের মতে, উনিশ শতকের বাঙালি ধর্মীয় ও সমাজ সংস্কারক, বিদ্বান, সাহিত্যিক জায়ান্ট, সাংবাদিক, দেশপ্রেমিক বক্তা এবং বিজ্ঞানীরা বিশ শতকের গোড়ার দিকে এবং মাঝামাঝি সময়ে নস্টালজিয়ায় শ্রদ্ধা ও সম্মানিত হয়েছিলেন। ১৯ 1970০ এর দশকের গোড়ার দিকে, আরও একটি সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ পেয়েছিল।

পটভূমি

১৮ 1857 সালের ভারতীয় বিদ্রোহের পরে নবজাগরণের সময়কালে বাংলা সাহিত্যের এক বিস্ময়কর উত্সাহ দেখা যায়। রামমোহন রায় এবং warশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর যখন অগ্রগামী ছিলেন, বঙ্কিমচন্দ্র চ্যাটার্জীর মতো অন্যরাও এটি প্রশস্ত করেছিলেন এবং এটির উপরে নির্মাণ করেছিলেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরসহ ঠাকুর পরিবার এই সময়ের নেতা ছিলেন এবং শিক্ষাব্যবস্থার বিশেষ আগ্রহী ছিলেন। [3] বেঙ্গল রেনেসাঁসে তাদের অবদান ছিল বহুমুখী। রবীন্দ্রনাথ, অবনীন্দ্রনাথ, গগনেন্দ্রনাথ এবং জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর, অসিত কুমার হালদার এবং জ্ঞানদানন্দিনী দেবী সহ পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্য এই আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন। [৪]

নীতীশ সেনগুপ্তের মতে, যদিও বঙ্গীয় রেনেসাঁস হুসেন শাহের যুগে বাঙালিদের সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যগুলির উত্থানের প্রক্রিয়াটির সমাপ্তি ছিল, তবে এটি মূলত হিন্দু এবং একমাত্র আংশিক মুসলিমই ছিল। তবুও, সৈয়দ আমির আলী, মোশাররফ হুসেনের মতো মুসলিম বুদ্ধিজীবীদের উদাহরণ।

Explanation:

Similar questions