প্রাচীন বিশ্বের সভ্যতাগুলো কি কি
Answers
Answer:
একটু বড় করে লিখে দিয়েছি একটু কষ্ট করে পড়ে নিও।।।
Explanation:
বিশ্বের ইতিহাস বলতে এখানে পৃথিবী নামক গ্রহে বসবাসকারী মানবজাতির ইতিহাস বোঝানো হয়েছে, গ্রহ হিসেবে পৃথিবীর ইতিহাস নয়। মানুষের ইতিহাস মূলত পুরাপ্রস্তর যুগে পৃথিবী জুড়ে শুরু হয়। আদিম যুগ থেকে প্রাপ্ত সকল প্রত্নতাত্ত্বিক ও লিখিত দলিল এর আওতাভুক্ত। লিখন পদ্ধতি আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে প্রাচীন প্রামাণ্য ইতিহাসের শুরু হয়। যদিও লিখন পদ্ধতি আবিষ্কারের পূর্ববর্তী যুগেও সভ্যতার নিদর্শন পাওয়া গেছে। প্রাগৈতিহাসিক যুগের সূচনা ঘটে পুরাপ্রস্তর যুগে। সেখান থেকে সভ্যতা প্রবেশ করে নব্যপ্রস্তর যুগে এবং এসময় কৃষি বিপ্লবের (খ্রিস্টপূর্ব ৮০০০-খ্রিস্টপূর্ব ৫০০০ অব্দ) সূচনা ঘটে। নব্যপ্রস্তর যুগের বিপ্লবে উদ্ভিদ ও পশুর গৃহপালন এবং নিয়মানুগ কৃষিপদ্ধতি রপ্ত করা মানব সভ্যতার একটি অনন্য মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত। কৃষির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বেশির ভাগ মানুষ যাযাবর জীবনযাত্রা ত্যাগ করে স্থায়ীভাবে কৃষকের জীবন গ্রহণ করে। তবে বহু সমাজে যাযাবর জীবনব্যবস্থা রয়ে যায়, বিশেষ করে ভৌগোলিকভাবে বিচ্ছিন্ন অঞ্চলগুলিতে ও যেখানে আবাদযোগ্য উদ্ভিদ প্রজাতির অভাব ছিল। কৃষি থেকে প্রাপ্ত খাদ্য নিরাপত্তা ও উদ্বৃত্ত উৎপাদনের ফলে গোষ্ঠীগুলি ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়ে আরও বড় সামাজিক প্রতিষ্ঠানের জন্ম দেয়। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নও এক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।কৃষির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে শস্য উৎপাদন ব্যবস্থারও বিকাশ ঘটে, যা সমাজে শ্রমবিভাগকে ত্বরান্বিত করে। শ্রমবিভাগের পথ ধরে সমাজে সুবিধাপ্রাপ্ত উচ্চশ্রেণীর উন্মেষ ঘটে ও শহরগুলো গড়ে উঠে। সমাজে জটিলতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে লিখন ও হিসাব পদ্ধতির ব্যবহার জরুরী হয়ে পড়ে। হ্রদ ও নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোতে খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ অব্দের মধ্যে অনেক শহর গড়ে উঠে। এদের মধ্যে উন্নতি ও উৎকর্ষতার দিক দিয়ে মেসোপটেমিয়ার সভ্যতা, মিশরের নীল নদ তীরবর্তী সভ্যতা ও সিন্ধু সভ্যতা উল্লেখ্যযোগ্য। একই ধরনের সভ্যতা সম্ভবত চিনের প্রধান নদীগুলোর তীরেও গড়ে উঠেছিল কিন্তু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো থেকে এব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হয়নি।
প্রাচীন পৃথিবীর (প্রধানত ইউরোপ, তবে নিকট প্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকাও এর অন্তর্ভুক্ত) ইতিহাসকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়। ৪৬৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত প্রাচীন যুগ; পঞ্চম থেকে পঞ্চদশ শতাব্দী পর্যন্ত মধ্য যুগ বা ধ্রুপদী-উত্তর যুগ, যার মধ্যে রয়েছে ইসলামি স্বর্ণযুগ(৭৫০- ১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) ও ইউরোপীয় রেনেসাঁ (১৩শ শতক থেকে শুরু)। আধুনিক যুগের সূচনাকাল ধরা হয় ১৫শ শতক থেকে ১৮শ শতকের শেষ পর্যন্ত যার মধ্যে রয়েছে ইউরোপের আলোকিত যুগ। শিল্প বিপ্লব হতে বর্তমান সময় পর্যন্ত আধুনিক যুগ বলে বিবেচিত। পাশ্চাত্য ইতিহাসে রোমের পতনকে প্রাচীন যুগের শেষ ও মধ্যযুগের সূচনা হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু পূর্ব ইউরোপ রোমান সাম্রাজ্য থেকে বাইজেনটাইন সাম্রাজের অধীনে আসে, যার পতন আরো অনেক পরে ঘটে। ১৫ শতকের মাঝামাঝি গুটেনবার্গ আধুনিক ছাপাখানা আবিষ্কার করেন যা যোগাযোগের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসে। ফলে মধ্যযুগের সমাপ্তি ঘটে এবং বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের সূত্রপাত হয়। ১৮ শতকের মধ্যে ইউরোপে জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসার এমন একটি চরম অবস্থায় উপনীত হয় যা শিল্প বিপ্লবকে অবধারিত করে তুলে।
বিশ্বের অন্যান্য অংশে, বিশেষ করে প্রাচীন নিকট প্রাচ্য, প্রাচীন চীন ও প্রাচীন ভারতে সভ্যতা ভিন্নভাবে বিবর্তিত হয়, যেমন চিনের চার অনন্য আবিষ্কার, ইসলামের স্বর্ণযুগ, ভারতীয় গণিত। তবে ১৮ শতকের পর হতে ব্যাপক ব্যাবসা-বাণিজ্য ও উপনিবেশায়নের ফলে সভ্যতাগুলো বিশ্বায়িত হতে থাকে। গত পাঁচশো বছরে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার, জ্ঞান-বিজ্ঞান, ব্যাবসা-বাণিজ্য, অস্ত্রের ধ্বংসক্ষমতা, পরিবেশগত ক্ষতি প্রভৃতি অসামান্য গতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বর্তমান বিশ্বের মানুষের সামনে একই সঙ্গে ব্যাপক সম্ভাবনা ও বিপদ এর দ্বার উন্মোচন করেছে।