বাংলার নবজাগরণ ও তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তননে প্রতিনিধিত্বকারী বিভিন্ন ব্যক্তির গুরুত্বপূর্ণ অবদান বর্ণনা কর?
Answers
Answer:
I think you read in class 8 in Bangladesh and it's your BGS assignment.
Explanation:
বাংলার নবজাগরণ বলতে বোঝায় ব্রিটিশ রাজত্বের সময় অবিভক্ত ভারতের বাংলা অঞ্চলে ঊনবিংশ ও বিংশ শতকে সমাজ সংস্কার আন্দোলনের জোয়ার ও বহু কৃতি মনীষীর আবির্ভাবকে। মূলত রাজা রামমোহন রায়ের (১৭৭৫-১৮৩৩) সময় এই নবজাগরণের শুরু এবং এর শেষ ধরা হয় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (১৮৬১-১৯৪১) সময়ে, যদিও এর পরেও বহু জ্ঞানীগুণী মানুষ এই সৃজনশীলতা ও শিক্ষাদীক্ষার জোয়ারের বিভিন্ন ধারার ধারক ও বাহক হিসাবে পরিচিত হয়েছেন। ঊনবিংশ শতকের বাংলা ছিল সমাজ সংস্কার, ধর্মীয় দর্শনচিন্তা, সাহিত্য, সাংবাদিকতা, দেশপ্রেম, ও বিজ্ঞানের পথিকৃৎদের এক অন্যন্য সমাহার যা মধ্যযুগের অন্ত ঘটিয়ে এদেশে আধুনিক যুগের সূচনা করে।বাংলার নবজাগরণ অনেক আধুনিক পণ্ডিতের মতে উনিশ শতকের গোড়ার দিকে, আবার অনেকের মতে গোটা উনিশ শতক জুড়েই বাংলায় বুদ্ধিবৃত্তিক জাগরণ চলে যাকে যথার্থই ইউরোপীয় ধারার নবজাগরণ বলা যায়। তারা বিশ্বাস করেন, ব্রিটিশ শাসনের প্রভাবে বাংলার শিক্ষিত সম্প্রদায় জীবন ও বিশ্বাসের নানা বিষয়ে অনুসন্ধিৎসু হয়ে ওঠে এবং প্রশ্ন তুলতে শেখে। বলা হয়, এ নতুন দৃষ্টিভঙ্গি বাংলার সমসাময়িক জীবনধারাকে বস্তুতান্ত্রিকভাবে সবিশেষ প্রভাবিত করে। বিভিন্ন প্রতিবাদমূলক আন্দোলন, নানা সংগঠন, সমাজ ও সমিতি গঠন, ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলন, নতুন শৈলীর বাংলা সাহিত্যের আবির্ভাব, রাজনৈতিক চেতনা এবং আরও উদীয়মান অন্যান্য সামাজিক-রাজনৈতিক বিষয় এক নবজাগরণরই ইতিবাচক লক্ষণ বলে যুক্তি দেখানো হয়। নবজাগরণ তত্ত্বের প্রবক্তাদের মতে, এসব বিষয়ের মূলে ছিল ইংরেজি ভাষার মাধ্যমে নবার্জিত ইউরোপীয় জ্ঞান (বিশেষ করে, দর্শন, ইতিহাস, বিজ্ঞান ও সাহিত্য)। এ কথিত নবজাগরণ কেবলমাত্র বাংলার হিন্দু সমাজের উঁচু স্তরের সামান্য অংশকে তাৎক্ষণিকভাবে প্রভাবিত করলেও শেষাবধি তা মুসলিম সমাজ (অনেকটাই অংশত) ও অন্যদের মাঝেও প্রসার লাভ করে। নবজাগরণ ছড়িয়ে যায় ঐ শতকের শেষপাদে উপমহাদেশের অন্যসব অংশেও।নবজাগরণ ভাবাপন্ন ব্যক্তিবর্গের মধ্যে রামমোহন রায় , এইচ.এল.ভি ডিরোজিও ও তার বিপ্লবী শিষ্যবৃন্দ, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও তার অনুসারীগণ, অক্ষয়কুমার দত্ত , ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর , মাইকেল মধুসূদন দত্ত , বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় , স্বামী বিবেকানন্দ প্রমুখ অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। রেনেসাঁর এ নিবেদিত মনীষীবর্গ যেসব পাশ্চাত্য চিন্তাধারায় উজ্জীবিত হয়েছিলেন তা ছিল যুক্তিবাদ, মানবতাবাদ, উপযোগবাদ, বিজ্ঞানবাদ, ব্যক্তিবাদ, দৃষ্টবাদ, ডারউইনবাদ, সমাজবাদ ও জাতীয়তাবাদ। পুনরুজ্জীবিত বাংলার চিন্তাবিদগণ ফ্রান্সিস বেকন (১৫৬১-১৬২৬), আইজ্যাক নিউটন (১৬৪২-১৭২৭), জেরেমি বেনথাম (১৭৪৮-১৮৩২), টমাস পেইন (১৭৩৭-১৮০৯), অগুস্ত কোঁত (১৭৯৮-১৮৫৭), চার্লস ডারউইন (১৮০৯-৮২) ও জন স্টুয়ার্ট মিল-এর (১৬০৬-৭৩) মতো পাশ্চাত্যের আরও অনেক আধুনিক চিন্তাবিদ ও মনীষীর গুণগ্রাহী ও অনুসারী হয়ে ওঠেন। এশিয়াটিক সোসাইটি অফ বেঙ্গল (প্রতিষ্ঠিত, ১৭৮৪), শ্রীরামপুরের ব্যাপটিস্ট মিশন (১৮০০), ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ (১৮০০), হিন্দু কলেজ (১৮১৭), ক্যালকাটা স্কুল-বুক সোসাইটি (১৮১৭), কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ (১৮৩৫), কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়-এর (১৮৫৭) মতো প্রতিষ্ঠানগুলি বাংলার নবজাগরণে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখে।
বাংলার নবজাগরণ দুই ধারায় প্রসার লাভ করে যথা, (১) ঐ সময়ে বহু সংখ্যক সংবাদপত্র ও সাময়িকী প্রকাশিত হয় এবং (২) বহু সমিতি, সংগঠন ও সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়। এগুলি পর্যায়ক্রমে নবজাগরণর দ্বারা সৃষ্ট বিভিন্ন সংলাপ ও বিতর্কের মঞ্চ হিসেবে কাজ করে। তবে নবজাগরণের সবচেয়ে দর্শনীয় বহিঃপ্রকাশ ঘটে কতকগুলি সংস্কার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। এসব আন্দোলন ছিল ধর্মীয় ও সামাজিক। নবজাগরণর আরও বড় ধরনের প্রকাশ লক্ষ্য করা যায় যুক্তিভিত্তিক মুক্তচিন্তার সপক্ষে পরিচালিত ধর্মনিরপেক্ষ আন্দোলনের মাধ্যমে। আধুনিক বাংলা সাহিত্যের উন্মেষ, পাশ্চাত্য শিক্ষা ও ধ্যান-ধারণার প্রসার ও বিভিন্নমুখী বুদ্ধিবৃত্তিক জ্ঞানানুসন্ধান এ সবই ছিল নবজাগরণর সুফল। বাংলার নবজাগরণ বা নবজাগরণের ফলে জাতীয়তাবাদ জাগ্রত হয় এবং পরবর্তী সময়ে এ জাতীয়তাবাদ দেশের পরাধীনতার বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
রামমোহন রায় একাধারে সংস্কৃত, আরবি, ফার্সি ভাষায় সুপণ্ডিত এবং পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তি ছিলেন। তিনি ধর্মীয় গোঁড়ামির প্রতিবাদে তুহফাত-উল-মুওয়াহহিদিন [একেশ্বরবাদীদের উপহার] নামে এক যুক্তিবাদী পুস্তিকা (১৮০৩-০৪) প্রকাশ করেন। পরবর্তীসময়ে তিনি সেমেটিক একেশ্বরবাদের ধারায় উপযোগবাদের সাথে যুক্তিবাদ সংযুক্ত এবং সামাজিক অন্যায় ও বুদ্ধিবৃত্তিক কূপমণ্ডূকতা দূর করার লক্ষ্যে একটি কার্যক্রম গ্রহণ করেন। হিন্দু ও খ্রিষ্টানদের সঙ্গে দীর্ঘ পনেরো বছরের (১৮১৫-৩০) এক বিতর্কে তিনি তার ব্রাহ্ম একেশ্বরবাদ প্রতিষ্ঠিত করতে বাহ্যত বহুঈশ্বরবাদ ও ত্রিত্ববাদকে পরাভূত করেন। তিনি সমাজিক বিচার, বিশেষ করে হিন্দু নারীমুক্তির জন্য সুদীর্ঘ শতাব্দীকালের সংগ্রামেরও সূচনা করেন। গভর্নর জেনারেল উইলিয়ম বেন্টিঙ্ক এর ঔপনিবেশিক সরকার ১৮২৯ সালে স্বামীর সাথে হিন্দু নারীর সহমরণ তথা সতীদাহ প্রথা বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। রামমোহন রায় এ বিষয়ে সরকারের আইন পাসে সহায়তা করেন। রামমোহন সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেন এবং পাশ্চাত্য শিক্ষাক্রমের ভিত্তিতে ধর্মনিরপেক্ষ ও বিজ্ঞান বিষয়ক শিক্ষা নীতি প্রবর্তনের সুপারিশ করেন।
Answer:
please tell you love me❤❤❤