মনে কর, তুমি শিক্ষা সফরে কোন
বিশেষ স্থানে ভ্রমন করতে
গিয়েছে। সেখানে গিয়ে তুমি কোন
কোন ধরণের অভিজ্ঞতা অর্জন
করলে তার একটি বিবরণ দাও
Answers
Answer:
শিক্ষা সফরের অভিজ্ঞতা
Explanation:
দিনটি ছিল ২০১৯ সালের ২৬ শে ডিসেম্বর। এবারের ট্যুর ছিল শেখা, দেখা ও জানার ট্যুর। ৩৪জন ছাত্র-ছাত্রীর একটা টিমের সঙ্গে ছিলেন ডিপার্টমেন্টের সবচেয়ে ট্যুর পাগল শিক্ষক শ্রদ্ধেয় প্রফেসর ডঃ আব্দুল জব্বার হাওলাদার, কামরুজ্জামান মনির ও কামরুল হাসান স্যার। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারনে ৭দিনের মধ্যে ট্যুর সম্পুর্ন হলেও স্টাডি রিজিওনের সব এলাকাই আমরা কাভার করেছি। আবহাওয়া ভাল থাকায় কালেকশানের পাশাপাশি ন্যাচারাল হ্যাবিটেট দেখাও হয়েছে অনেক।
শিক্ষা সফরে আমরা সবাই
ভোর ৪.৩০ মিনিটে আমাদের বাসটি ক্যাম্পাস ছাড়ার কারনে খুব তাড়াতাড়িই চট্টগ্রামের বায়োজিদ বোস্তামির মাজারে পৌঁছলাম। শত বছরের মুসলিম ঐতিহ্যের এ মাজারটিতে আমাদের যাবার মূল লক্ষ্যই হল বোস্তামী টারটেলগুলোর খবর নেয়া। বোস্তামী (আঃ) এর মাজারের সামান্য দূরেই আছে বার আউলিয়ার মাজার। অনেকে এখানে এসেছে তাদের কবর জিয়ারত করতে। আছে আশালতা বা সুতা গাছ। যেকোন আশা করে এ গাছে সুতা বেঁধে দিলেই তার আশা নাকি পূরণ হয়। অনেকেরই ধারনা বায়োজিদ বোস্তামী বিদেহী আত্নাকে অলৌকিক ভাবে টারটেলে পরিণত করা হয়েছে। আসলে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা অন্য কথা বলে। বোস্তমী (আঃ) এর সময়ে থেকে টারটেলগুলো এখানে ছিল।
সকালের হিমছড়ি ও পবিত্র রাখাইন টেম্পল
চট্টগ্রাম থেকে চুনাতি ও ফাইশাখালি হয়ে কক্সবাজার পৌঁছাতে প্রায় সন্ধ্যাই হয়ে গেল। রাতের গ্রুপ ডিসকাশন তাড়াতাড়ি সারা হল। খুব ভোরেই চললাম রামুতে। এখানেই অবস্থিত বিখ্যাত রাখাইন বুদ্ধিষ্ট টেম্পল। ১৮৮৫ সালে একজন রাখাইন এটি প্রতিষ্টিত করেন। কাঠের তৈরী দোতলা এ মন্দিরটির কারুশিল্প দেখলেই মুগ্ধ হতে হয়। এখানে পিতলের তৈরী বেশকিছু অপূর্ব বৌদ্ধমূর্তি । সব মূর্তিগুলোই আনা হয়েছে বার্মা থেকে।
এখান থেকে সোজাসুজি আমরা চলে আসি হিমছড়িতে। সকালের হিমছড়ি যেন কুয়াশায় মোড়ানো ছিল। আমরাই প্রথমে গিয়ে হিমছড়িরর হিলের দরজা খুলে ২৪৩টি সিঁড়ি বেয়ে একদম চূড়ায় উঠি। এখানে এসেই মনে হল পৃথিবীটা কত শান্ত, প্রকৃতিটা কত সুন্দর। নির্মল আকাশ ও পাহাড়টা কত কাছাকাছি।
মরুময় সোনাদিয়া ও ঐতিহাসিক আদিনাত মন্দির
পরের দিন খুব সকালে আমরা গেলাম কক্সবাজারের ফিস ল্যান্ডিং জোনে। জীবনের গতি চলে গাড়ির চাকার মত। এখানে এসেই তা বোঝা গেল। মাছ দেখা ও কালেকশনের আগ্রহ নিয়েই এখানে আসা। যারা সমুদ্র উপকূলীয় নয় তারা এখানে গিয়ে চিনতে পারেন মাছগুলো। সুরমা, কোরাল, রিটা, টেকচাঁদা, রুপচাঁদা আরও কত কি! পুরো সমুদ্রিক মাছের ভান্ডারই এটা বলা যায়। বেলা বাড়তে থাকল। সবাই ট্রলারে চেপে বসলাম, উদ্দেশ্য সোনাদিয়া হয়ে মহেশখালি। বাকখালি নদী হয়ে আমরা চলছি। রোদের উত্তাপ বেড়ে চলল। একসময় সমুদ্রের মোহনার সৌন্দর্য আমরা উপভোগ করলাম। গাংচিলগুলো আমাদের পিছু নিতে লাগল।
মহেশখালি পৌঁছার আগেই কিছু কেওড়া গাছ আমাদের স্বাগত জানাল। এরপর উঠলাম পাহাড়ের চূড়ার আদিনাত মন্দিরটিতে। শ্রী শ্রী আদিনাত মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে হিন্দু সমপ্রদায়ের দেবতা দেবাদিদেব মহাদেবের নামানুসারে। বাংলাদেশের দক্ষিণপ্রান্তের কক্সবাজার জেলার মহেশখালির বঙ্গপোসাগার ঘেষা মৈনাক পর্বতের সবচেয়ে উঁচু চূড়ায় মনোরম পরিবেশে আদিনাত শিব, তীর্থ মন্দিরটির অবস্থান। আদিনাতের অপর নাম মহেশ। এই মহেশের নামানুসারে মহেশখালি। এখানে ঢুকতেই প্রফেসর ফিরোজ স্যার বললেন দ’ুটি স্পেশাল জিনিস এখানে আছে তোমরা খুঁজে বের কর। অনেক খোঁজার পর পেলাম কাঙ্খিত সেই উত্তরটি। এর একটি হল- এখানে বহু আগে থেকেই একটি হনুমান আছে। অন্যটি হল- সমুদ্র পৃষ্ঠ হতে প্রায় ১৮৫ফুটের মত উঁচু পাহাড়ে দুটি মিঠা পানির পুকুর।এরপর মহেশখালি গ্রাম ঘুরে দেখলাম লবন চাষ। সবশেষে পানের বরজ।
ছেড়া দ্বীপ টু সেন্টমার্টিন
পর্যটন শিল্পের তীর্থস্থান,দেশী-বিদেশের পর্যটকদের আকাঙ্খিত দ্বীপ, বাংলাদেশের একমাত্র কোরাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের সৌন্দর্য্য কাগজে কলমে যতটুকু লেখা যায় তার চেয়ে বেশি উপলব্ধি করা যায়। বাংলো থেকে বেড়িয়েই চললাম কালেকশনের খোঁজে, সব ধরনের কোরাল এখানে দেখলাম। প্রচন্ড রোদের তান্ডবে প্রফেসর জব্বার হাওলাদার স্যার বললেন- এ নারিকেল জিনজিরায় কি করা যায় বলতো? পাশেই ছিল ডঃ হূমায়ন আহমেদের সমুদ্র বিলাস। কথা না বাড়িয়ে শুরু হল ডাব উৎসব। এরপর পড়ন্ত বিকেলে আমরা ট্রলারে চড়ে চললাম ছেড়া দ্বীপের উদ্দেশ্যে। তারপর শুরু হল আমাদের ট্যুরের সবচেয়ে এ্যাডভেনঞ্জারের মূহুর্তটুকু। একটা জিদের বসেই সবাই মিলে হাঁটতে শুরু করলাম। ছেড়া দ্বীপ থেকে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে। অবাস্তব কল্পনাকেও আমরা হার মানালাম। যারা পারছেনা তারা একজন আর একজনের ব্যাগ ধরে হাঁটছে। প্রতিটি সময়ই ছিল নতুন কিছু আবিস্কারের নেশা। দু’পাশ দিয়ে জনবসতিকে কেয়া গাছ দিয়ে ঘিরে রেখেছে। আর তার দুপাশ দিয়ে বয়ে চলেছে সমুদ্র সৈকত। পথেই দেখলাম পরিবেশ মন্ত্রনালয়ের তত্ত্বাবধানে নির্মিত টারটেল হ্যাচারী। ১৫০কেজি ওজনের টারটেলের বাচ্চাগুলো এত ছোট হতে পারে বিশ্বাসই হচ্ছিল না। শামুক ও ঝিনুক দিয়ে সি-বিচে গালিচা বিছানো রাস্তা, সাথে সাথে সূর্যাস্ত সব কষ্টকে ম্লান করে দিল। এই অনুভূতিগুলোকে ধরে রাখা যায় শেয়ার করা যায় না। রাতের সেন্টমার্টিন আরও সুন্দর। সমুদ্রের গর্জন আর সাথে সাথে ফসফরাসের আভা মনে হয় ঢেউয়ের সাথে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিল। আকাশে চাঁদ ছিল না তাই সমুদ্রের সাথে আমরা ভালই মানিয়ে গিয়েছিলাম।
প্রতি বছর ট্যুর শেষ হয়ে গেলেই সবকাজ শেষ হয়ে যায় না। ট্যুর নিয়ে চলে সেমিনার, এক্সিবিশন। এর সম্ভবনা নিয়ে আলোচনাও হয়, হয় সমালোচনা। আর এখান থেকেই বেড়িয়ে আসে এক একটি ভাল সিদ্ধান্ত যা প্রকৃতি, পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী রক্ষায় খুবই জরুরী। এ ট্যুরের শিক্ষাই যেন আগামী প্রজন্মের জন্য আরও সুখকর হয় এ কামনায় করি।