History, asked by rajinurhasan, 5 months ago

মমনে কর তুমি শিক্ষা সফরে কোন বিশেষ স্থানে গিয়েছো।সেখানে গিয়ে তুমি কোন কোন ধরনের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছ তার একটি বিবরণ লিপিবদ্ধ কর।​

Answers

Answered by nazirkh680
2

Answer:

শীতের সকাল। কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে একটি বাস অপেক্ষা করছে। শূন্য বাস একে একে পূর্ণ হতে লাগল। বাসের সামনে ‘শিক্ষা সফর’-এর ব্যানার ঝুলাতে ব্যস্ত এক জোড়া কর্মঠ তরুণ। কিছুক্ষণের মধ্যেই যাত্রা শুরু হবে কুমিল্লার ময়নামতির উদ্দেশে। প্রাচীন ঐতিহাসিক স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হলো এই ময়নামতি।

বাস চলা শুরু করল। প্রচণ্ড শীত সঙ্গী করে একদল ভ্রমণপিপাসু যাত্রী চলতে লাগল ময়নামতির পথে। কেউবা বাসের সিটে হেলান দিয়ে ঘুমাচ্ছে, কেউবা কানে হেডফোন গুঁজে গান শুনছে। বাসের পরিবেশ দেখে ভ্রমণে যাচ্ছি, তা বোঝার উপায় নেই। শীতে কাবু সবাই কেমন যেন নিস্তেজ হয়ে আছে। ভ্রমণ মানেই তো সবাই মিলে একসাথে হৈ-হুল্লোড়। কিন্তু এখানে তার বিন্দুমাত্র ছাপ পাওয়া যাচ্ছে না।

বাসের নীরব পরিবেশ উপেক্ষা করে বরাবরের মতো আমি জানালার বাইরে তাকিয়ে আছি। দেখছি জীবনানন্দের রূপসী বাংলা কতটা পাল্লা দিয়ে চলতে থাকে বাসের সাথে! পিচঢালা সড়কে লেগে আছে ভোরের শিশির। নরম রোদের আলো আছড়ে পড়ছে শিশিরভেজা পিচঢালা পথে। চিকচিক করে উঠছে সড়ক।

কুয়াশার চাদর সরিয়ে শুরু হয় নাগরিক ব্যস্ততা। এরই মধ্যে বাসে কেটে গেলো ঘণ্টা তিনেক।

এবার যাত্রাবিরতি। এর মাঝেই শেষ হয় সকালের নাস্তা। অতঃপর পুনরায় যাত্রা।

বাস চলতে থাকে। তবে এবার বাসের অভ্যন্তরীণ চিত্র ভিন্ন। নীরবতা ভেঙে নাচ আর গানে এক আলাদা আমেজ। বাস তার আপন গতিতে চলতে থাকে। নাচ আর গানের আনন্দ শেষ না হতেই গন্তব্যে পৌঁছে যায় বাস। শুরু হয় দিকনির্দেশনা। কে কোথায় যাবে? কোনদিকে... আরো কত্তো কী! একে একে বাস থেকে নামতে শুরু করে সবাই। শূন্য বাস এক বিশাল মাঠে রেখে শুরু হয় ময়নামতি দর্শন।

প্রথমেই চলতে শুরু করি পাঠ্য বইয়ের পড়া, শালবন বৌদ্ধ বিহার। লালমাই পাহাড়ের মাঝামাঝি স্থানে এই বিহারটি অবস্থিত। চারপাশ ছেয়ে আছে শাল আর গজারিতে। এটি প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শনগুলোর একটি।

এরপর একদল তরুণ প্রতিযোগিতা শুরু করে ছোটোবড় টিলা-পাহাড়গুলোতে ওঠার। ওঠেও কেউ কেউ। কেউবা মাঝ রাস্তায় ক্লান্ত হয়ে ফিরে আসে।

শাল আর গজারি বনের ভেতর দিয়ে হাঁটতে থাকে আমাদের দল। প্রকৃতির নিবিড় স্পর্শে শালবন রোমঞ্চকর ঠেকে কারো কারো। অনেকেই ব্যস্ত ছবি তোলায়।

দুপুর হয়েছে অনেক আগেই। শালবনের ভেতর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে সেই মাঠে পৌঁছালাম। যেখানে বাস দাঁড়িয়ে আছে। বাস থেকে খাবার নামানো হলো। গাছের ছায়ায় মাদুর বিছিয়ে খাওয়া-দাওয়ার প্রস্তুতি চলছে। এ এক অন্যপ্রকার ভালোলাগা।

সূর্য পশ্চিমাকাশে হেলে পড়ছে। এখনো যেন ভ্রমণের কিছুই হলো না। তাড়াতাড়ি করে সবাই ছুটলাম ময়নামতি জাদুঘরে। অল্প সময়ে ময়নামতি নিয়ে বিশদ ধারণা এখান থেকেই পাওয়া সম্ভব। কোটবাড়ির শালবন বিহারের দক্ষিণে ময়নামতি জাদুঘরের অবস্থান। স্বর্ণ-রৌপ্য মুদ্রা, ব্রোঞ্জ, তামা ও লোহার সামগ্রী, পোড়ামাটির ফলক, তুলট কাগজে লেখা প্রাচীন হস্তলিপির পাণ্ডুলিপি নিয়ে জাদুঘরটি সাজানো।

আকাশ রক্তবর্ণ ধারণ করে ফেলেছে ইতোমধ্যে। বাসে ফিরে যাওয়া শুরু করেছে সফরসঙ্গীরা। শূন্য বাস ধীরে ধীরে আবার পূর্ণ হয়ে উঠল। বাস চলা শুরু করল বাড়ির পথে।

Similar questions