বাংলাদেশের আথ -সামাজিক উন্নয়নে সুনাগরিক কীভাবে ভূমিকা রাখতে পারে
Answers
sorry I didn't understand your.. question??
Answer:
আর্থিক সাক্ষরতা আজকের বিশ্বের প্রধান চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একটি। পৃথিবীজুড়ে জাতীয় অর্থনীতিগুলো শক্তিশালী হচ্ছে এবং প্রতিদিন লাখো মানুষ মূলধারার অর্থনীতিতে সম্পৃক্ত হচ্ছে। বৈশ্বিক অর্থনীতির এই অভূতপূর্ব একীভূতকরণের ফলে দেশে দেশে উৎপাদনশীলতা বাড়ছে এবং বাড়ছে জনগোষ্ঠীর জীবনমান। বাংলাদেশের মতো দ্রুত বর্ধনশীল দেশগুলোর বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা করার সক্ষমতা তৈরি হচ্ছে। তবে অর্থনৈতিক উন্নয়নের দ্রুতগতি ও প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের ফলে ব্যক্তি মানুষের জন্য নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ জন্ম নিচ্ছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতেও আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণ কর্মসূচি পৌঁছে যাচ্ছে। ফলশ্রূতিতে প্রাতিষ্ঠানিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা দিনকে দিন প্রতিটি মানুষের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
আর্থিক সাক্ষরতা বলতে আমরা বুঝি, অর্থনৈতিক ব্যবস্থার অন্তর্নিহিত কার্যকারণ। মানুষ কীভাবে উপার্জন করে এবং কীভাবে খরচ করে, কীভাবে মূল্যস্ফীতি মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বদলে দেয়, সুদের হার কীভাবে ব্যক্তির সম্পদ ও দায়ের মূল্য প্রভাবিত করে, কী কারণে শেয়ারবাজারের ওঠানামা হয় প্রভৃতি বিষয়ে প্রাথমিক ধারণা থাকা। আর্থিক সাক্ষরতার লক্ষ্য হচ্ছে যে মানুষ তার অর্থনৈতিক পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন হবে এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে নিজের কাজে লাগিয়ে উপকৃত হবে।
আর্থিক সাক্ষরতা: দেশে-বিদেশে
সারণি ১: বাংলাদেশ ও পার্শ্ববর্তী দেশসমূহে আর্থিক সাক্ষরতার হার
দেশের নাম আর্থিক সাক্ষরতার হার
ভুটান ৫৪%
মিয়ানমার ৫২%
শ্রীলঙ্কা ৩৫%
পাকিস্তান ২৬%
ভারত ২৪%
বাংলাদেশ ১৯%
নেপাল ১৮%
বিশ্বে প্রতি তিনজন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে মাত্র একজন আর্থিকভাবে সাক্ষর। এই হার নারী, দরিদ্র ও অল্পশিক্ষিত লোকেদের মধ্যে আরও কম (Klapper, Lusardi & Van Oudheusden, 2015)। এই তথ্য থেকে সমস্যাটির ব্যাপকতা ও গভীরতা বুঝতে পারা যায়। যদিও উন্নয়নশীল দেশগুলোই আর্থিক সাক্ষরতার দিক থেকে পিছিয়ে আছে, উন্নত দেশগুলোর অবস্থাও তত ভালো নয়। অর্থনৈতিক পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রে মাত্র ৫৭% মানুষ আর্থিকভাবে সাক্ষর। সাক্ষরতার হার হিসাবে চিন্তা করলে এটি খুব একটা আশাব্যঞ্জক নয়। অন্যান্য উন্নত দেশ যেমন জাপান, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যে আর্থিক সাক্ষরতার হার যথাক্রমে ৪৩%, ৬৬% ও ৬৭%।
দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশ কেবল নেপাল বাদে অন্য প্রতিবেশীদের থেকে আর্থিক সাক্ষরতার দিক থেকে পিছিয়ে আছে
দেশের নাম সামগ্রিক অবস্থান প্রাথমিক অর্থ ব্যবস্থাপনা অর্থনৈতিক পরিকল্পনা বিনিয়োগ
বাংলাদেশ ১৫ ১৬ ১৪ ০৯
ভারত ১২ ১৪ ০৯ ০৮
ভিয়েতনাম ১১ ০৯ ০২ ১৩
মিয়ানমার ০৯ ১৩ ০৩ ১
এদিকে,বাংলাদেশসহ নিকটবর্তী ১৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৫তম। পার্শ্ববর্তী ভারতের অবস্থান ১২তম, এমনকি মিয়ানমার ৯ম স্থান দখল করে আছে।
আর্থিক সাক্ষরতার অভাব ব্যক্তি তার জীবনে বহুভাবে অনুভব করে। স্বাভাবিকভাবেই আর্থিকভাবে সাক্ষর মানুষ তাদের সম্পদ ও দায় বিচক্ষণতার সাথে দেখাশোনা করে। এটা প্রমাণিত, যেসব ভোক্তা চক্রবৃদ্ধি সুদের হার ধারণাটি বোঝেন না, তাঁরা সুদ ও লেনদেন ব্যয়ে বেশি খরচ করেন এবং বেশি ঋণ গ্রহণ করেন। তাঁরা একই সাথে কম সঞ্চয় ও কম ধার নেওয়ার অভ্যাস বজায় রাখতে পারেন না। অপর দিকে আর্থিকভাবে সাক্ষর মানুষ অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ও অবসর পরিকল্পনা ভালোভাবে করেন। তাঁরা তাঁদের সঞ্চয় অনেকগুলো বিনিয়োগে ছড়িয়ে রাখেন, যাতে কম ঝুঁকি নিতে হয়।
এর পাশাপাশি জনগণের মধ্যে অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তির সুবিধা পুরোপুরি পৌঁছাতে আর্থিক সাক্ষরতা প্রয়োজন। বিশ্বে ৫৭% মানুষ সঞ্চয় করেন, কিন্তু মাত্র ২৭% মানুষ সঞ্চয় করেন ব্যাংকের মাধ্যমে। ব্যাংক একাউন্টের মালিকদের মধ্যে মাত্র ৪২% তাঁদের একাউন্টের মাধ্যমে সঞ্চয় করেন। এটা একেবারেই কাকতালীয় নয় যে ব্যাংক একাউন্টের মালিকদের মধ্যে ৪৫% আর্থিকভাবে সাক্ষর। অন্যরা তাঁদের একাউন্টের পরিপূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে পারছে না, আর্থিক সাক্ষরতার অভাবে (Klapper, Lusardi, & Van Oudheusden, 2015)। বাংলাদেশে পরপর দুই দশকে দুটি শেয়ারবাজার ধস হয়েছে, যার পেছনে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সচেতনতার অভাব অন্যতম মূল নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে।
আর্থিক সাক্ষরতার বিকাশ: বাংলাদেশ
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণতা ও প্রত্যক্ষ দিকনির্দেশনায় আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশও আর্থিক সাক্ষরতা অভিযান শুরু করেছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও সরকারের নিরলস পরিশ্রমে ইতিমধ্যে লক্ষণীয় অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (BSEC) দীর্ঘদিন ধরে বিনিয়োগকারীদের জন্য সচেতনতা কর্মসূচি পরিচালনা করছে, যেটি বাংলাদেশের প্রথম দিকের আর্থিক সাক্ষরতা কর্মসূচির একটি। কমিশন সাম্প্রতিক কালে জাতীয়ভাবে একীভূত আর্থিক সাক্ষরতা কর্মসূচির সাথে নিজেকে একত্র করেছে। BSEC চেয়ারম্যান মহোদয়ের নেতৃত্বে একটি স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করেছে, যার কাজ হচ্ছে কমিশনের আর্থিক সাক্ষরতা কর্মসূচিকে দিকনির্দেশনা দেওয়া। একটি টেকনিক্যাল কমিটিও গঠন করা হয়েছে, যার কাজ হচ্ছে কর্মসূচি তৈরি করা, কার্যপ্রণালি নির্ধারণ করা, গবেষণা ও মাধ্যম নিয়ে কাজ করা, যাতে আর্থিক শিক্ষা সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়। এ ছাড়া কার্যনির্বাহী কমিটি তৈরি করা হয়েছে, যাতে এসব কাজ সুচারুভাবে সম্পাদন করা যায়। BSEC ২০১৬ সালে জাতীয় আর্থিক শিক্ষা কার্যক্রমের ব্যাপারে জনগণের মতামত নেওয়ার জন্য তা অবমুক্ত করেছে। কমিশনের পরিকল্পনা হচ্ছে একটি জাতীয় উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা এবং আর্থিক শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে একটি আলাদা বিভাগ গঠন করা। একই সাথে সাফল্য অর্জনের জন্য কমিশন স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য নির্ধারণের পরিকল্পনাও উত্থাপন করেছে।
এর পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকও ২০১৩ সালে Financial Literacy Project -এর সূচনা করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক জাতীয় পর্যায়ে আর্থিক সাক্ষরতাবিষয়ক সভা-সমিতি পরিচালনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। MASTERCARD ও BURO সাথে নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক আর্থিক সাক্ষরতা কর্মসূচি পরিচালন করে, যা ২০১৬-এর প্রথম দিক পর্যন্ত ১৩ হাজার ৫০০ নারীকে আর্থিকভাবে সাক্ষর করে তোলে।