Social Sciences, asked by adil3078, 3 months ago

বাংলার নবজাগরন ও তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তনে প্রতিনিধিত্বকারি বিভিন্ন ব্যক্তির গুরুত্বপূর্ণ অবদান বর্ননা কর।​

Answers

Answered by RIFAT99
2

Answer:

বাংলার নবজাগরণ বলতে বোঝায় ব্রিটিশ রাজত্বের সময় অবিভক্ত ভারতের বাংলা অঞ্চলে ঊনবিংশ ও বিংশ শতকে সমাজ সংস্কার আন্দোলনের জোয়ার ও বহু কৃতি মনীষীর আবির্ভাবকে।  বাংলার নবজাগরণ ও তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তনে বিভিন্ন ব্যক্তি গুরুত্বপূর্ণ অবদান সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো  

ওয়ারেন হেস্টিংস  (১৭৩২ - ১৮১৮): ওয়ারেন হেস্টিংস ছিলেন ভারতবর্ষের প্রথম গভর্নর জেনারেল। ১৭৫০সালে তিনি ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীতে যোগ দেন এবং কলকাতা আসেন। তৎকালীন সময়ে অনেক মুসলিম তাদের রাজ্য হারিয়েছিল। তাই তিনি মুসলিমদের রাজ্য হারানোর কষ্ট দূর করার জন্যে ১৭৮১ কলকাতা মাদ্রাসা প্ৰতিষ্ঠা করেন এবং এতে মুসলমিদের চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে ১৭৯১ সালে হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য প্ৰতিষ্ঠা করেন সংস্কৃত কলেজ।

স্যার উইলিয়াম কেরি (১৭৬১ – ১৮৩৪) : উইলিয়াম কেরি ছিলেন একজন মিশনারি ও বাংলায় গদ্য পাঠ্যপুস্তকের প্রবর্তক অনুবাদক, সামাজিক সংস্কারক। ধর্মপ্রচার ও শিক্ষা প্রসারের সুবিধার্থে কলকাতার অদূরে শ্রীরামপুরের ড্যানিশ কলোনিতে একটি ছাপাখানা স্থাপন করেন। এবং এই প্রেস থেকে ১৮০০ সালে ৫ই মার্চ ম্পূর্ণ বাংলা ভাষায় বাইবেলের নতুন নিয়ম প্রকাশ করেন। শুধু বাইবেল নয় তিনি বাংলা ব্যাকরণ রচনা, মুদ্রণযন্ত্র প্রতিষ্ঠা, সংবাদপত্র প্রকাশ, স্কুল টেক্সট বোর্ড গঠন অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজের পথ প্রদর্শক ছিলেন। ইংরেজরা উচ্চ শিক্ষার জন্য সারাদেশে স্কুল প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি কিছু কলেজও স্থাপন করে। অবশেষে ১৮৫৭ সালে উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণার প্রতিষ্ঠান হিসাবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় । ১৮১১ সালে শ্রীরামপুরে মুদ্রণযন্ত্র স্থাপনও বাংলার মানুষের মনকে মুক্ত করা ও জাগিয়ে তােলার ক্ষেত্রে আরেকটি পথ খুলে দেয়।

রাজা রামমোহন রায়  (১৭৭২ –  ১৮৩৩): রাজা রামমোহন রায় প্রথম ভারতীয় ধর্মীয়-সামাজিক পুনর্গঠন আন্দোলন ব্রাহ্মসমাজের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি দ্বারকানাথ ঠাকুরের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ব্রাহ্মসমাজ স্থাপন করেন।  ব্রাহ্মসমাজ এক সামাজিক ও ধর্মীয় আন্দোলন এবং বাংলার পুনর্জাগরণের পুরোধা হিসাবে কাজ করে এই জন্য তাকে ভারতের নবজাগরণের জনক বলা হয়। সতীদাহ প্রথা উচ্ছেদের জন্য তার উদ্যোগে প্রতিবাদে পুস্তিকা বের হল 'বিধায়ক নিষেধকের সম্বাদ'। রাজা রামমোহন রায়ের সামাজিক আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতেই ১৮২৯ সালের ৪ ডিসেম্বর ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সীতে সতিদাহ প্রথাকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল ঘোষণা করা হয়।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (১৮২০ –১৮৯১): ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর উনবিংশ শতকের একজন বিশিষ্ট বাঙালি শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক ও গদ্যকার। বাংলায় নারীশিক্ষার প্রসারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। তিনি ছিলেন নারীশিক্ষার বিস্তারের পথিকৃৎ। নারীমুক্তি আন্দোলনের প্রবল সমর্থক ছিলেন তিনি। হিন্দু বিধবাদের অসহনীয় দুঃখ, তাদের প্রতি পরিবারবর্গের অন্যায়, অবিচার, অত্যাচার গভীরভাবে ব্যথিত করেছিল তাকে। এই বিধবাদের মুক্তির জন্য তিনি আজীবন সর্বস্ব পণ করে সংগ্রাম করেছেন। তারই আন্দলনের কারনে  ১৮৫৬ সালে সরকার বিধবা বিবাহ আইনসিদ্ধ ঘোষণা করেন। এবং সেই সাথে বহুবিবাহের মতো একটি কুপ্রথাকে নির্মূল করতে সগ্রাম করেন।

ডিরোজিয়ো (১৮০৯ –১৮৩১) ঃ  হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিয়ো একজন ইউরেশীয় কবি, যুক্তিবাদী চিন্তাবিদ ও শিক্ষক। বহু যুগের কুসংস্কার আর ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে বদ্ধ, জীর্ণ এই সমাজে তিনি ঝড় তুলেছিলেন। জন্ম সূত্রে বাঙালি না হলেও বাঙালিদের সঙ্গে মনে প্রাণে জড়িয়ে ছিলেন তিনি। ১৮ বছর বয়সে তিনি হিন্দু কলেজের ইংরেজি সাহিত্য এবং ইতিহাসের অধ্যাপক হয়েছিলেন। রাজা রামমোহন রায় ব্রাহ্ম সমাজ প্রতিষ্ঠা করার পর থেকে সেই সময় হিন্দু সমাজ যথেষ্ট অশান্তির মধ্যে দিয়ে চলছিল। কারন যারা হিন্দু আদর্শকে মানলেও পৌত্তলিকতাকে অস্বীকার করেছিল। যার ফলশ্রুতিতে ডিরোজিয়োর সমাজ পরিবর্তনের ধারণা ব্যাপকভাবে সাড়া ফেলেছিল। বিশেষ করে তরুন্দের মধ্যে। তিনি তাঁদেরকে মুক্ত চিন্তা, প্রশ্ন করা এবং অন্ধভাবে সবকিছু গ্রহণ না-করতে অনুপ্রাণিত করতেন।  এটাকেই বলা হয়েছিল ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলন।

মাইকেল মধুসূদন দত্ত (১৮২৪ –১৮৭৩):  মাইকেল মধুসূদন দত্ত ঊনবিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঙালি কবি ও নাট্যকার। তাকে বাংলার নবজাগরণ সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব গণ্য করা হয়। আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রথম বিদ্রোহী কবি হিসেবেও তিনি পরিচিত। মাইকেল মধুসূদন বাংলা ভাষায় সনেট ও অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক। মাইকেল মধুসূদন দত্ত একাধারে ছিলেন বহু ভাষাবিদ। মাতৃভাষা ছাড়া তিনি আরো বারোটি ভাষা জানতেন। বাংলা সাহিত্যে তারঅবদান অনস্বীকার্য। তার সময়ে বাংলা সাহিত্যের বিকাশ ঘটে।  

কাজী নজরুল ইসলাম ( ১৮৯৯ - ১৯৭৬) ঃ কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম অগ্রণী বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার এবং বাংলাদেশের জাতীয় কবি। বাংলার নবজাগরণের পিছনে কাজী নজরুল ইসলামের অবদান অনেক। তার সময়ে কবিতা ও গানের ধারাকে সম্পূর্ণ বদলে দিয়েছিলেন। । তার কবিতায় বিদ্রোহী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তাকে বিদ্রোহী কবি নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। র কবিতার মূল বিষয়বস্তু ছিল মানুষের ওপর মানুষের অত্যাচার এবং সামাজিক অনাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১ -  ১৯৪১) : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন অগ্রণী বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী ও দার্শনিক। বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক তিনি। রবীন্দ্রনাথকে গুরুদেব, কবিগুরু ও বিশ্বকবি অভিধায় ভূষিত করা হয়। সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ এই কবি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে পৌঁছে দিয়েছে গোটা বিশ্বের কাছে।  বিংশ শতাব্দীর বাঙালি সংস্কৃতিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রভাব অত্যন্ত ব্যাপক। তিনি একাধারে কবিতা, গান, নাটক, ছোট গল্প, উপন্যাস, চিত্রকলা, সংগীত ও নৃত্যকলা, প্রবন্ধ ও পত্রসাহিত্য রচনা করে গেছেন।

Explanation:

Similar questions