বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র ভাষা ধর্ম ও উৎসবের ভূমিকা ব্যাখ্যা কর
Answers
Answer:
Here is your answer
Explanation:
বাংলাদেশ একটি ছোট্ট দেশ। আমরা বাঙালী জাতি। বাঙালী জাতির প্রধান বৈশিষ্ট হচ্ছে ছোট বড়, ধনী, দরিদ্র, জাত-পাত ইত্যাদি ভেদাভেদ না করে সকলেই একত্রে আনন্দ উৎসবের সহিত জীবন নির্বাহ করা। এখানে আমাদের আছে সম্মৃদ্ধি এক সাংস্কৃতি যা অন্য কোথাও দেখা যায়না। ১৯৫২ সালে এই বাঙালী জাতি অতি সাধারন মূখের ভাষার জন্য, মাতৃভাষা রক্ষার জন্য জীবন দিয়েছিল। আর এখান থেকেই নানা বৈশিম্য নীতি ,শাসন শোষন ইত্যাদির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ স্বরুপ এদেশ স্বাধীন হয় ১৯৭১ সালে। আর এজন্যই আজ আমাদের সাংস্কৃতি আজও অক্ষয় আছে। নানা ক্ষেত্রে এদেশের নানা রকম কর্মকান্ড দেখা যায় যা বাংলাদেশের সাংস্কৃতি বহন করে।
বাংলাদশের সাংস্কৃতিক বৈচিত্রে ধর্মের ভূমিকাঃ বাংলাদেশের মানুষ উচু মাত্রায় ধর্ম পরায়ণ। ধর্ম তাই এদেশে হয়ে উঠেছে সাংস্কৃতির প্রধান উপাদান। আদিকাল থেকে উপমহাদেশের প্রধান ধর্ম ছিল সনাতন। পরবর্তীতে বৈদেশিক নানা ধর্মের মানুষের আগমনের ফলে ধর্মপ্রান, বিশ্বাসী ও শান্তিপ্রিয় বাঙালী জাতি তা গ্রহন করতে থাকে। তাই আজ গড়ে উঠেছে বেশ কিছু ধর্ম ও ধর্ম বৈচিত্র।
একারনে বহু আগের মানুষের মাঝে অধিকাংশ দেখা যায় প্রকৃতি পূজারী মানুষ। তারা প্রকৃতির বড় শক্তি হিসাবে আকাশ, বাতাস, সূর্য, চন্দ্রকে পূজা করত। নানা ভয়ঙ্কার প্রাণীকেও পূজা করা হত। এই পূজার সংস্কৃতি থেকে আসতে আসতে মানুষের মনে সিদ্ধি লাভ হতে থাকে। ঈশ্বর জ্ঞান প্রাপ্ত হতে থাকে। শুরু হয় সৃষ্টিকর্তাসহ নানা দেব দেবীর পূজা আর্চনা। যাই হোক এই সকল পূজা আর্চনার মূকপ্রতিপাদ্য হচ্ছে আনন্দ উদযাপন করা।
তাই বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের বৃহত্তম তথা প্রধান ধর্ম হচ্ছে ইসলাম। আর তাই বছরে দুটি ঈদ, রোজা, যাকাত, সহ বিভিন্ন বিশেষ দিনে মিলাদ মাহফিল ইত্যাদি আয়োজন করা হয়। এই সকল অনুষ্ঠানে আনন্দ উদযাপন করা হয়। এই উদযাপন উপলক্ষে ছোট ছেলেমেয়ারা বিভিন্ন রঙ বেরঙ্গের পোষাক পরে, বড়রা ধর্মী পরিচয় বহনকারী পোষাক পরেন। এবং সকলেই নানা সাজে নানা ধ্যানে আনন হইহুল্লোড় করেন। এই সকল অনুষ্ঠানে কোন বিভেদ থাকেনা। নানা ধর্মের মানুষও এখানে আনন্দ উদযাপন করেন। নানা মিষ্টি, খেলনা ইত্যাদি বিক্রি করেন। ফলে শিশুদের খেলনার আনন্দ, অতিথি আপ্যায়ন ইত্যাদি এক জমকালো পরিবেশের সৃষ্টি করে। আর এই অনুষ্ঠান সকল মানুষকে এক সূত্রে বাঙালী বন্ধনে বেধে থাকে।
সনাতন ধর্ম কম হলেও এদেশে জুড়ে আছে সবার মাঝে। হিন্দুদের নানা সার্বজনীন পূজা উৎসবে উপাসনালয় সহ নানা স্থান বাড়ি লাইটিং করে সাজানো হয়। নানা বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে দেব দেবীর অঞ্জলী দিয়ে আনন্দ উদযাপন করা হয়। এই উদযাপন হিন্দু সম্প্রদায় ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ে সবার মাঝে। সনাতন ধর্মে ১২ মাসই কোন না কোন অনুষ্ঠান পুজা থাকেই, তাই এসকল অনুষ্ঠান সারা বছরই মানুষকে এক আনন্দের মায়াডোরে বেধে রাখে। যা আমাদের মাঝে বৈষম্য ভেদাভেদ কমিয়ে দিয়ে সবার উপরে মানুষ সত্য হিসাবে গড়ে তোলে আমাদের।
খ্রিস্ট ও বৌদ্ধ ধর্ম অনেকটা কম হলেও আঞ্চলিক বা স্থানীয় পর্যায়ে অত্যান্ত আনন্দ বিনোদনের সাথে পালিত হয়। এছাড়া উপজাতীয় দের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে নাচ গান সহ বিভিন্ন প্রকার কৃষ্টি কালচার পালিত হয়।
এসকল যাবতীয় ধর্ম মূলত বাংলাদেশের মানুষের মাঝে এক অনাবিল ভালবাসা সৃষ্টি করে, সুখে দুখে, আনন্দে একই মায়ার বাধনে বেধে রাখে এই ধর্মীয় আনন্দ।
ভাষা ও উৎসবের ভূমিকাঃ আমাদের প্রধান ভাষা বাংলা। মাতৃভাষা বাংলা। বিভিন্ন অঞ্চলে আঞ্চলিক পর্যায়ের ভাষার রীতি বা টান বা কথনে সামান্য পার্থক্য হলেও বাংলাদেশের সকল স্থানে বাংলা ভাষাই পরিলক্ষিত হয়। অর্থাৎ আমাদের দেশে ভাষা গত বৈচিত্র একটু কম। আদিবাসী বা নৃগোষ্ঠির মাঝে ভিন্ন ভাষা দেখা গেলেও তাদের পরিমান খুবই কম।
বাঙ্গালীর ভাষা এক বিখ্যাত অর্জন, এক মাত্র বাঙ্গালী জাতিই ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছেন, অর্জন করেছেন স্বাধীনতা।
তাই ভাষা দিবস উদযাপন একটি বড় উৎসব হয়ে উঠেছে বাংলাদেশে। এটি রাষ্ট্রীয় উৎসব। সারা বিশ্বই এই উৎসব উদযাপন করে থাকে ২১শে ফেব্রুয়ারী। এই দিন তাই বাঙ্গালীর কাছে অধিকার আদায়ের এক গুরুত্বপূর্ন তাতপর্য বহনকারী দিবস।
যা পৃথিবী সকল মানুষের ভাষা সহ যেকোন অধিকারের বিষয়ে সতর্ক ও সচেতন করে তোলে।
১লা বৈশাখ বাঙ্গালীর এক বড় উৎসব । এই উৎসবের কোন জুড়ি নেই। এটি আমাদের সকল সাংস্কৃতিকে ধারন করে। তথা ভাষা ধর্ম, মানুষ, আনন্দ, কৃষ্টি কালচার, রীতি নীতি আচার ব্যবহার ইত্যাদি বাংগালীকে এক সাথে বেধে রাখে। তাই ঐক্যবদ্ধ্য বাঙ্গালী জাতি হিসাবে গড়ে ঊঠতে এসকল নানা উৎসবের জড়ি মেলা ভার।
পরিশেষে বলা যায় যায় এসকল ধর্মীয় অনুষ্ঠানের বিভিন্নতা রীতি নীতি, ভাষা, উৎসব ইত্যাদির নানা বৈচিত্রতা বাঙ্গালী জাতির এক উন্নত মানব ওমানবতার অবতার, হৃদয়বান, প্রেমময়, ভালবাসা ময়, অতিথিপরায়ন জাতি সত্ত্বায় গড়ে তুলেছে। বাংলাদেশের বাঙালী জাতির জীবনে তাই এসকল উপাদানের গুরুত্ব অপরিসীম।