১. ইসলামের সাথে ইমানের সম্পর্ক খুবই নিবিড়” কথাটি
ব্যাখ্যা কর।
২, কপটতার নিদর্শন গুলাে কী কী?
৩. নবি-রাসুলের পার্থক্য বর্ণনা কর।
৪. হাশরের ময়দানে কয় ধরণের শাফায়াত কার্যকর হতে
ব্যাখ্যা কর।
Answers
Answer:
ইসলামের সাথে ইমানের সম্পর্ক খুবই নিবিড়” কথাটি ইসলামের সাথে ইমানের সম্পর্ক খুবই নিবিড়” কথাটি ব্যাখ্যা কর।
ইসলামের সাথে ইমানের সম্পর্ক খুবই নিবিড় কথাটির ব্যাখ্যা:
ইমানের শাব্দিক অর্থ বিশ্বাস, স্বীকার, আস্থা, মান্য, কৃতজ্ঞ। মুমিন হওয়ার মূল শর্ত হলো ইমান আনা। আর ইমানের তিনটি দিক থাকে। তা হলো :
- অন্তরে বিশ্বাস করা,
- মুখে স্বীকার করা এবং
- আমল করা।
আর এই তিনটি দিক সরাসরি ইসলামের সাথে নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত। ইসলাম শব্দের শাব্দিক অর্থ হলো বশ্যতা, সমর্পণ, আত্মসমর্পণ, অনুগত করা।
ইমানের ৭টি স্তরের প্রথম স্তরটি হলো আল্লাহর উপর বিশ্বাস ও ইমান আনা। তিনি আমাদের বর, বিচার দিনের মালিক, সর্ব ক্ষমতার অধিকারী, ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।
ইমানের দ্বিতীয় স্তরটি হলো ফেরেশতাগণের প্রতি বিশ্বাস করা। ফেরেশতাগণ নূরের তৈরি এবং অদৃশ্য। তারা পুরুষ নন নারীও নন।
ইমানের তৃতীয় স্তরটি হলো আসমানি কিতাবের প্রতি বিশ্বাস করা। মানবজাতির কল্যাণের জন্য আল্লাহ প্রত্যেক নবীদের উপর কিতাব নাজিল করেছেন।
মহান আল্লাহর বাণী মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কাজটি শুরু হয়েছিল এই কিতাবসমূহের মাধ্যমে যাকে বলা হয় আসমানি কিতাব।
ইমানের চতুর্থ স্তরটি হলো নবি-রাসুলগণের প্রতি বিশ্বাস করা। মানজাতির হিদায়েত ও কল্যাণের জন্য আল্লাহ যুগে যুগে অসংখ্য নবি-রাসুল পাঠিয়েছেন।
পঞ্চম স্তরটি হলো আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস করা। আখিরাত হল পরকাল। যার শুরু আছে কিন্তু শেষ নেই।
ইমানের ষষ্ঠ স্তরটি হলো তকদিরে বিশ্বাস করা। তকদির মানে হলো ভাগ্য। যা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত একজন মানুষের সাথে যা যা হয় সবই আল্লাহর হুকুমে।
শেষ ও সপ্তম স্তরটি হলো মৃত্যুর পর পুনুরুত্থানের প্রতি বিশ্বাস করা। পৃথিবী সৃষ্টির শুরু থেকে কিয়ামত পর্যন্ত যত মানুষ আছে আল্লাহ সবাইকে পুনরায় জীবিত করা হবে।
আমাদের সকল কাজের হিসাব দিতে হবে। আল্লাহ খুব সূক্ষ ও দ্রুত হিসাব নিতে সক্ষম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
ইমান হলো- “তুমি বিশ্বাস করবে আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাগণের প্রতি, তাঁর কিতাব সমূহের প্রতি, তাঁর রাসুলগনে প্রতি ও শেষ দিবসের (আখিরাতে) প্রতি এবং ভাগ্যের (তকদিরে) ভাল মন্দের প্রতি বিশ্বাস করবে”।
[মুসলিম শরীফ হাদীস নং-১, হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রাযিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত]
আল্লাহ কুরআনে বলেন,
“আর যে আল্লাহকে ও তাঁর ফেরেশতাদেরকে ও তাঁর কিতাবসমূহকে ও তাঁররাসুলগণকে এবং শেষ দিবসকে অস্বীকার করবে, সে বহুদুরে পথভ্রষ্ঠতায় পথভ্রষ্ট হয়েছে”। আন-নিসা, ৪/১৩৬
যে ইমান বা বিশ্বাস করে সে মুমিন। যে বাহ্যিক আমলগুলি করে সে মুসলিম। আমাদের উভয় আমল করতে হবে।
কপটতার নিদর্শন গুলাে কী কী?
কপটতা মানে হলো ভণ্ডামি, দ্বিমুখী নীতি, প্রতারনা করা। ইসলামি পরিভাষায় একে বলা হয় “নিফাক” আর যে ব্যক্তি নিফাক করে তাকে বলা হয় মুনাফিক।
কপটতার নিদর্শন গুলো নিচে তুলে ধরা হলো:
১. যখন কথা বলে তখন মিথ্যা কথা বলে;
২. ওয়াদা করলে ভঙ্গ করে;
৩. আমানত রাখলে তার খিয়ানত করে এবং
৪. ঝগড়া করলে অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করে।
৫. নিজেদেরকে মুসলমান বলে দাবি করে কিন্তু গোপনে ইসলামকে অস্বীকার করে।
৬. কপটতারকারী সামাজিক ও পার্থিব লাভের আশায় মত্ত থাকে।
নবি-রাসুলের পার্থক্য বর্ণনা কর।
আল্লাহ্ তায়ালা মানজাতির হিদায়তের জন্য বহু নবি-রাসুল দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ বলেছেনঃ “আর প্রত্যেক জাতির জন্য পথপ্রদর্শক রয়েছে”। (সূরা আর-রা’দ ১৩ , আয়াত ৭)
যাদের উপর মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে আসমানী কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে তাদেরকে রাসুল বলা হয়। যাদের উপর আসমানী কিতাব অবতীর্ণ হয়নি এবং পূর্ববর্তী রাসুলের উপর যে আসমানী কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে সেই কিতাবের অনুসরণ করে মানুষদের হেদায়াত করেছেন তাদেরকে নবী বলা হয়।
প্রত্যেক রাসুলই নবি ছিলেন কিন্তু প্রত্যেক নবি রাসুল নন।
আমাদের প্রিয় নবি হযরত মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর প্রেরিত সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবি ও রাসুল।
হাশরের ময়দানে কয় ধরনের শাফায়াত কার্যকর হবে?
কিয়ামতের পরের ধাপটি হল হাশর। সেদিন পৃথিবী সৃষ্টি থেকে শুরু করে ধ্বংস হওয়ার পর্যন্ত সমস্ত মানুষকে জমায়েত করা হবে।
মূলত দুটি কারণে শাফায়াত করে হবে। যথা:
১. পাপীদের ক্ষমা করা বা পাপ মার্জনা করার জন্য;
২. পুণ্যবানদের মর্যাদা বৃদ্ধি ও কল্যাণ লাভের জন্য;
আর শাফায়াত দুই ধরনের। যথা:
১. শাফায়াতে কুবরা:
শাফায়াতে কুবরা হলো সর্বশ্রেষ্ঠ শাফায়াত। শাফায়াতে কুবরা মূলত হিসাব কার্য শুরু করার শাফায়াত। কারণ হাশরের সময়টা এতো কষ্টদায়ক ভবে যে, সূর্যের প্রচন্ড তাপে কারও হাঁটু , কারো কোমড় কারো বা বুক পানিতে ডুবে যাবে তাদের শরীরের ঘামে। শুধুমাত্র আমাদের প্রীয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা) এই শাফায়াত করতে পারবেন।
২. শাফায়াতে সুগরা:
কিয়ামতের দিন পাপীদের ক্ষমা ও পুণ্যবানদের মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য শাফায়াত করা হবে। এটাই শাফায়াতে সুগরা। নবি-রাসুল, ফেরেশতা, শহিদ, আলিম, হাফেজ এ শাফায়াতের সুযোগ পাবে।