ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন তথ্য প্রযুক্তি ভূমিকা
Answers
তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি দিয়ে কমপিউটার, কমপিউটার সফটওয়্যার ও টেলিযোগাযোগের মাধ্যমে তথ্য রূপান্তর, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ, স্থানান্তর এবং স্থানান্তর ও তথ্য উদ্ধার করা সম্ভব হয়। আর এ প্রযুক্তিই বিশ্বে নাটকীয় পরিবর্তন এনেছে। আজ থেকে বিশ বছর আগে প্রয়োজনীয় তথ্য আহরণ ও স্থানান্তর প্রক্রিয়া যে দুরূহ ছিল, তা আজকের দিনে আমাদের কাছে গল্পের খোরাক সৃষ্টি করে। এভাবেই এখন থেকে দশ বছর পর মানুষ হয়তো আরো নতুনভাবে চিমত্মা করবে এবং নতুনভাবে একে অন্যের সাথে যোগাযোগ করবে। বিগত কয়েক বছরের মধ্যে অনেক দেশ এ তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা নিয়ে প্রচুর উন্নতিসাধন করেছে। দেরি হলেও বাংলাদেশ তার আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্র প্রসারের উদ্যোগ নিয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি দেশের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তথ্যপ্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার, ব্যবস্থাপনা ও কর্মদক্ষতা বাড়ানোর মাধ্যমে আমাদের দেশের জাতীয় জীবনে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা সম্ভব। তথ্যপ্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে আমাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন করার জন্য ২০০২ সালে প্রথম জাতীয় আইসিটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছিল এবং তা উচ্চাভিলাষী এবং বাস্তববহির্ভূত হওয়ায় এ নীতিমালার অনেক পরিকল্পনাই বাস্তবায়ন হয়নি। সুতরাং আমাদেরকে অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে বর্তমান বাস্তবতার আলোকে সঠিক আইসিটি নীতিমালা প্রণয়ন করা উচিত। আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে এবং সে লক্ষ্যে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
ই-কমার্স
ই-কমার্সের অর্থ অনলাইনে ব্যবসায়ের কার্যক্রম। একজন ক্রেতা কোনো প্রতিষ্ঠানের তৈরি পণ্য এখন অনলাইনে বসেই কেনার অর্ডার দিতে পারছেন। এতে ক্রেতা ঘরে বসেই পেয়ে যাচ্ছেন তার প্রয়োজনীয় পণ্য। ঘরে বসেই ব্যবসায়ের লেনদেন, ব্যাংকিং ইত্যাদি করতে পারছেন। আর দিন দিন তাই তথ্যপ্রযুক্তি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ফলে এধরনের প্রযুক্তির উন্নয়ন ও প্রসারের তাগিদ অনুভব করা গেছে। আর এ চাহিদা থেকেই দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার জন্য প্রশিক্ষণ, কর্মসংস্থান ও অভিজ্ঞতা বাড়ানোর প্রকল্প নেয়া খুবই প্রয়োজন। সীমিত হলেও বাংলাদেশে কিছু অনলাইন বুকস্টোর, অনলাইনে টেন্ডার সেন্টার, অনলাইন শপিং মল এবং অনলাইন নিলাম সেন্টার, ই-কমার্সকেন্দ্রিক ব্যাংক, অনলাইন মিউজিক শপ, অনলাইন শাড়ির মল, হোটেল রিজার্ভেশন লক্ষ করা গেছে, যারা ই-কমার্সকে কাজে লাগিয়ে তাদের ওয়েবসাইট গড়ে তুলেছে। কিন্তু তাদের বেশিরভাগই টাকার লেনদেনের কাজটুকু গতানুগতিক পদ্ধতিতেই করে যাচ্ছে। কারণ, আমাদের দেশে এখনও অনলাইন লেনদেনের বৈধতা দেয়া হয়নি, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
ই-গভর্নেন্স
ই-গভর্নেন্স হলো সেই সব প্রক্রিয়ার সমষ্টি, যা অফিস-আদালতে গতানুগতিক কাগজনির্ভর নোটিস, জরিপ, বিল এবং কন্ট্রাক্ট বিষয়কে তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন উপাদান ব্যবহার করে ইলেকট্রনিক রূপ দান করে অফিসকে কাগজবিহীন অফিসে রূপান্তর করতে পারে এবং এর উৎপাদনশীলতা বাড়াতে সহায়তা করে। এর ব্যবহার একটি প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন শ্রেণীর কর্মকর্তাদের মাঝে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মনোভাব সৃষ্টি করতে পারে। বাংলাদেশে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে হজ অফিস হজযাত্রীদের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় তথ্যবহুল ওয়েবসাইট দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করে। এছাড়া বাংলাদেশ সড়ক ও জনপদ বিভাগ সড়ক উন্নয়নের কাজে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে জোনভিত্তিক কার্যক্রম, কন্ট্রাক্টর ডাটাবেজ, টেন্ডার ডাটাবেজ এবং প্রজেক্ট মনিটরিং করে। রাজশাহী সিটি করপোরেশন EBRS (Electronic Birth Registration System) চালু করেছে। এছাড়া বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে DAM (Department of Agricultural Marketing) দেশের বিভিন্ন বাজারের প্রতিদিনের পণ্যের বাজার মূল্য প্রকাশ করে থাকে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের BANBEIS এবং বাংলাদেশ ব্যাংক ছাড়াও বেশ কিছু ই-গভর্নমেন্টকেন্দ্রিক ওয়েবসাইট লক্ষ করা যায়। বর্তমানে ই-গভর্নেন্সের কার্যক্রমে আমরা বেশ কিছু সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। বেশিরভাগ ই-গভর্নেন্স কার্যক্রম বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় কার্যক্রমগুলো সব মন্ত্রণালয় আলাদা আলাদাভাবে সম্পন্ন করছে এবং এ কারণে আমাদের অর্থের এবং সময়ের অপচয় হচ্ছে। ই-গভর্নেন্সের সাথে আমাদের প্রয়োজন ই-গভর্মেন্ট, যার মাধ্যমে এক প্রতিষ্ঠান অন্য প্রতিষ্ঠানের সাথে তাদের কার্যক্রম বিনিময় করতে পারবে।
তথ্য প্রচার ও প্রসার
তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে যেকোনো তথ্য যেকেউ যেকোনো অবস্থানে বসেই তথ্যপ্রযুক্তিসংশ্লিষ্ট যোগাযোগ উপাদানের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত তথ্য পেয়ে যাচ্ছেন। এর মাধ্যমে যেকোনো তথ্য প্রচার ও প্রসার করতে পারেন। তথ্য প্রচার ও প্রসারে বিভিন্ন ক্ষেত্রগুলো মানব উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে।
শিক্ষাক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অফিস-আদালতের তুলনায় অনেক বেশি। ছাত্রছাত্রীরা তাদের কোর্সবিষয়ক যেকোনো সহায়ক তথ্য সহজেই ইন্টারনেট থেকে পেয়ে যাচ্ছে। আর নিজেদেরকে বাইরের বিশ্বের সর্বাধুনিক শিক্ষার সাথে সামঞ্জস্য রেখে চলতে পারছে।