সুরা মায়িদার ৬ নং আয়াতে বর্ণিত বিধি
বিধানগুলাে তােমার বাস্তব জীবনে যেভাবে
বাস্তবায়ন কর তা বুঝিয়ে লেখ।
Answers
Answer:
(৬) হে বিশ্বাসীগণ! যখন তোমরা নামাযের জন্য প্রস্তুত হবে, তখন তোমরা তোমাদের মুখমন্ডল ও কনুই পর্যন্ত হাত ধৌত কর[1] এবং তোমাদের মাথা মাসাহ কর[2] এবং পা গ্রন্থি পর্যন্ত ধৌত কর।[3] আর যদি তোমরা অপবিত্র থাক, তাহলে বিশেষভাবে (গোসল করে) পবিত্র হও।[4] যদি তোমরা পীড়িত হও অথবা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেউ প্রস্রাব-পায়খানা হতে আগমন করে, অথবা তোমরা স্ত্রী-সহবাস কর এবং পানি না পাও, তাহলে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম কর; তা দিয়ে তোমাদের মুখমন্ডল ও হস্তদ্বয় মাসাহ কর।[5] আল্লাহ তোমাদেরকে কোন প্রকার কষ্ট দিতে চান না,[6] বরং তিনি তোমাদেরকে পবিত্র করতে চান ও তোমাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করতে চান,[7] যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর।
[1] ‘মুখমন্ডল ধৌত কর’ অর্থাৎ, একবার, দুইবার অথবা তিনবার করে দুই হাত কব্জি পর্যন্ত ধৌত করা, কুল্লী করা বা কুলকুচা করা অতঃপর নাকের ভিতরে পানি টেনে নিয়ে নাক ঝাড়ার পর -- যেমনটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। মুখমন্ডল ধৌত করার পর দুই হাত (আঙ্গুলের ডগা হতে) কনুইসহ ধৌত করতে হবে।
[2] পুরো মাথা মাসাহ করতে হবে। যেমনটি হাদীস থেকে প্রমাণিত যে, (দুই হাতকে ভিজিয়ে আঙ্গুলগুলিকে মুখোমুখি করে) মাথার সামনের দিক থেকে (যেখান থেকে চুল গজানো শুরু হয়েছে সেখান) থেকে পিছন দিক (গর্দানের চুল যেখানে শেষ হয়েছে সেখান) পর্যন্ত, তারপর সেখান থেকে শুরু করে সামনের দিকে নিয়ে এসে যেখান থেকে শুরু করেছিল সে পর্যন্ত মাসাহ করতে হবে। ঐ সঙ্গে কানও মাসাহ করতে হবে। যদি মাথার উপর পাগড়ি বা শিরস্ত্রাণ থাকে, তাহলে হাদীসের নির্দেশানুসারে মোজার উপর মাসাহর মত তার উপরেও মাসাহ বৈধ। (মুসলিমঃ পবিত্রতা অধ্যায়) মাসাহ সংক্রান্ত বর্ণিত হাদীসে একবার মাসাহ করাই যথেষ্ট বলা হয়েছে।
[3] أَرْجُلَكُمْ এর সংযোগ وُجُوهَكُمْ এর সঙ্গে, যার ভাবার্থ হচ্ছে; পায়ের গাঁট বা গোড়ালির উপরের হাড় পর্যন্ত ধৌত কর। পক্ষান্তরে পায়ে যদি চামড়া বা কাপড়ের মোজা থাকে (এবং তা যদি ওযু থাকা অবস্থায় পরিধান করা হয়), তাহলে হাদীসের নির্দেশানুসারে পা ধোয়ার পরিবর্তে মোজার উপর নিয়মিত মাসাহ করা বৈধ।
আনুষঙ্গিক বিষয়াবলীঃ (ক) ওযু থাকলে পুনরায় ওযু করা জরুরী নয়। তবে প্রত্যেক নামাযের জন্য নতুনভাবে ওযু করা উত্তম। (খ) ওযু করার পূর্বে নিয়ত করা ফরয। (গ) ওযু করার পূর্বে ‘বিসমিল্লাহ’ বলা জরুরী। (ঘ) দাঁড়ি ঘন বা জমাট হলে তা খেলাল করতে হবে। (ঙ) ওযুর অঙ্গগুলিকে পর্যায়ক্রমে ধৌত করতে হবে। (চ) একটি অঙ্গ ধোয়ার পর দ্বিতীয় অঙ্গ ধোওয়ায় যেন দেরী না হয়; বরং একের পর এক যেন নিরবচ্ছিন্নভাবে ধৌত করা হয়। (ছ) ওযুর অঙ্গগুলির মধ্যে কোন অঙ্গ যেন শুষ্ক না থেকে যায়, কেননা শুষ্ক থাকলে ওযু হবে না। (জ) ওযুর কোন অঙ্গকে তিনবারের বেশী যেন ধোওয়া না হয়, কারণ এটা সুন্নতের পরিপন্থী। (তাফসীরে ইবনে কাসীর, ফাতহুল ক্বাদীর ও আইসারুত তাফাসীর)
[4] অপবিত্রতা; ঐ অপবিত্রতাকে বুঝানো হয়েছে, যা স্বপ্নদোষ অথবা স্ত্রী সহবাস (বা যৌনতৃপ্তির সাথে বীর্যপাতের) ফলে হয়। আর একই বিধান মহিলাদের মাসিক ও (প্রসবোত্তর) নিফাসজনিত অপবিত্রতারও। যখন মহিলার মাসিক বা নিফাস বন্ধ হয়ে যাবে, তখন পবিত্রতা অর্জনের জন্য গোসল করা জরুরী। গোসলের পানি না পাওয়া গেলে তায়াম্মুম করা বিধেয়; যেমনটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। (ফাতহুল ক্বাদীর ও আইসারুতর তাফাসীর)
[5] আয়াতের এই অংশের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা এবং তায়াম্মুমের পদ্ধতি সূরা নিসার ৪৩নং আয়াতে উল্লেখ হয়েছে। সহীহ বুখারীতে এই আয়াতের শানে নুযূল (অবতীর্ণ হওয়ার কারণ) সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে যে, কোন এক সফরে আয়েশা (রাঃ) এর গলার হার বাইদা নামক স্থানে হারিয়ে যায়। তা খোঁজার জন্য তাঁদেরকে সেখানে থামতে হয়। ফজরের নামাযের জন্য তাঁদের নিকট পানি ছিল না এবং অনুসন্ধান করার পরও তাঁরা পানি সংগ্রহ করতে পারলেন না। এমতাবস্থায় (আল্লাহ তাআলা) এই আয়াত অবতীর্ণ করলেন, যাতে তায়াম্মুম করার অনুমতি দেওয়া হল। উসাইদ বিন হুযাইর (রাঃ) এই আয়াত শুনে বললেন, ‘হে আবু বাকরের বংশধর! তোমাদের কারণে আল্লাহ তাআলা মানুষের জন্য বরকত অবতীর্ণ করেছেন। আর এটা তোমাদের প্রথম বরকত নয়। (বরং তোমরা মানুষের জন্য সর্বদাই বরকতময়)।’ (বুখারীঃ সূরা মায়েদার তাফসীর)
[6] এই জন্যই তিনি তায়াম্মুমের অনুমতি প্রদান করেছেন।
[7] এই জন্যই হাদীসে ওযু করার পর দু’আ করার ব্যাপারে উৎসাহিত করা হয়েছে। দু’আর বই-পুস্তক থেকে এই দু’আ মুখস্থ করে নিন