ইংরেজ শাসনামলে বাংলার রাজনৈতিক পরিবর্তনের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা কর।
Answers
Answer:
can't understand the language
Answer:
প্রাচীনকাল থেকে ভারতীয় উপমহাদেশে বিশেষ করে বাংলা অঞ্চল ধন-সম্পদের পূর্ণ ছিল । বাংলা ছিল স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্থাৎ জীবন যাপনের জন্য যা কিছু প্রয়োজন সবকিছুই তখন এখানে পাওয়া যেত । নানা ধরনের বাণিজ্যিক পণ্য মসলা ও কুটির শিল্পের পাশাপাশি বিশ্ব জগৎ বিখ্যাত মসলিন কাপড় । এসব পণ্যের আকর্ষণেই অনেকে এদেশে বাণিজ্য করতে এসেছিল ।
ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এ দেশে এসেছিল ব্যবসা-বাণিজ্য করতে । এদেশে আগত অন্যান্য ইউরোপীয় কোম্পানিগুলো কে পরাজিত করে এবং স্থানীয় শাসকদের বিরুদ্ধে নানামুখী ষড়যন্ত্র করে ইংরেজ কোম্পানি এ দেশে স্থায়ী আসনে গেড়ে বসে যার স্থায়ীত্ব প্রায় দু’শো বছর ।
বাংলায় ইংরেজদের আগমনঃ ইংল্যান্ডের একদল বণিক ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি গঠন করে ১৬০০ খ্রিস্টাব্দের রানী এলিজাবেথের কাছ থেকে ১৫ বছরের মেয়দি প্রাচ্যে একচেটিয়া বাণিজ্য করার সনদপত্র লাভ করে । তারা বাণিজ্য সুবিধা লাভের আশায় সম্রাট আকবরের দরবারে আসে । এরপর ক্যাপ্টেন হকিন্স ১৬০৮ খ্রিস্টাব্দে জেমস এর সুপারিশ পত্র নিয়ে বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সম্রাট জাহাঙ্গীরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তার অনুমতি নিয়ে .১৬১২ খ্রিস্টাব্দে সুরাটে বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করেন । ১৬১৯ সালের মধ্যে কোম্পানির সুরাট আগ্রহ আহমেদবাগ প্রভৃতি স্থানে বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করে তাদের বৃত্তি মজুদ করে তুলে । কোম্পানি তার দ্বিতীয় বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করে মুসলিমপট্টমে। এরপর বাংলার বাংলাসোরে আরেকটি বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করে । বাংলার সুবেদার শাহ সুজার আনুমধন লাভ করে তারা ১৬৫৮ খ্রিস্টাব্দে হুগলিতে বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করে । এভাবে কম্পানি কাশিমবাজার, ঢাকা , মালদহে বাণিজ্যকুঠি নির্মাণ করে এবং বাংলায় তাদের আগমনকে সুদীর্ঘ করে।
জব চার্নক নামের আরেক জন ইংরেজ ১৬৯০ খ্রিস্টাব্দে ১২০০ টাকার বিনিময়ে কলকাতা, সুতানুটি , গোবিন্দপুর নামে তিনটি গ্রামের জমিদারী স্বত্ত্ব লাভ করেন । ভাগীরথী নদীর তীরের তিনটি গ্রাম কে কেন্দ্র করে পরবর্তীকালে কলকাতা নদীর জন্ম হয় । এখানেই ১৭০০ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের রাজা তৃতীয় উইলিয়ামের নাম অনুসারে ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ নির্ণয় করে । ধীরে ধীরে এটি ইংরেজদের বাণিজ্যিক স্বার্থ রক্ষা এবং রাজনৈতিক বিস্তারের শক্তিশালী কেন্দ্রে পরিণত হয় ।
পলাশীর যুদ্ধ:
ইংরেজদের একের পর এক ঔদ্ধত্যপুর্ণ আচরণ ও অবাধ্যতা নবাবকে শেষ পর্যন্ত ক্ষুব্দ করে তোলে এবং এর সমাধান শেষ পর্যন্ত যুদ্ধের রুপ নেয় যা ইতিহাসে পলাশীর যুদ্ধ নামে খ্যাত ।
আলীবর্দী খান ১৭৪০ সাল থেকে ১৭৫৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বাংলা, বিহার , উড়িষ্যার নবাব ছিলেন । তিনি সুকৌশলে ইংরেজ কোম্পানিকে নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন।আলীবর্দী খান মৃত্যুর আগে তার কনিষ্ঠ কন্যা আমেনা বেগমের পুত্র সিরাজউদ্দৌলাকে বাংলার উত্তরাধিকার মনোনীত করে যান । মাত্র ২২ বছর বয়সে নবাবের ক্ষমতা গ্রহণ করে সিরাজউদ্দৌলা নানামুখী ষড়যন্ত্র ও অনেক সমস্যার সম্মুখীন হন । তার প্রথম সমস্যা ছিল তার বড় খালা ঘসেটি বেগম যিনি সিরাজের নবাব হবার নিতে পারেননি । ঘসেটি বেগমের সঙ্গে যোগ দেন তার দেওয়ান রাজা রাজবল্লভ , পূর্ণিয়ার শাসনকর্তা সিরাজের খালাতো ভাই শওকত জঙ্গ , ব্যবসায়ী জগৎশেঠ , রায়দুর্লভ , রাজা রাজবল্লভ এবং সিরাজের সেনাপতি মীরজাফর প্রমুখ ।
পলাশী যুদ্ধের কারণসমূহঃ
ক) প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী সিরাজুদদুল্লাহ সিংহাসনে বসার পর ইংরেজরা তাকে কোন উপঢৌকন পাঠায়নি এবং সৌজন্য মূলক সাক্ষাৎ করেনি । এতে নবাব ক্ষুব্দ হন ।
খ ) নবাবের নিষেধাজ্ঞা সত্বেও তারা কলকাতা দুর্গ নির্মাণ অব্যাহত রাখেনবাবের নিষেধাজ্ঞা সত্বেও তারা কলকাতা দুর্গ নির্মাণ অব্যাহত রাখে
গ) ইংরেজি কোম্পানির দস্তকের অপব্যবহার করলে দেশীয় বণিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয় । নবাব নিষেধ করল ইংরেজরা তাদের আদেশ অগ্রাহ্য করে ।
ঘ ) চুক্তি ভঙ্গ করে ইংরেজরা নবাবকে কর দিতে অস্বীকৃতি জানায় এছাড়াও তারা বাংলার জনগণকে নির্যাতন করতে শুরু করে ।
ঙ) রাজা রাজবল্লভের পুত্র কৃষ্ণদাস প্রচুর ধন-সম্পদ নিয়ে ইংরেজদের কাছে আশ্রয় নেয় । তাকে ফেরত দেওয়ার জন্য নবাব ইংরেজদের কাছে দুত পাঠালেও তারা দুত কে আপমান করে তাড়িয়ে দেয় । এছাড়া নবাবের বিরুদ্ধে ষড়ন্ত্র ইংরেজরা শওকত জঙ্গকে সমর্থণ দেয় ।