১১।
অন্তু সবসময় মাংস, তৈলাক্ত খাবার ও চকলেট খায়। একদিন অন্তর বিরিয়ানি
খাওয়ার পর তার বদহজম হয়। তার মা তাকে কোমল পানীয় খাওয়ালে সে সুস্থ হয়ে
ওঠে। অন্যদিকে তার বােন শৈলী সয়াদুধ, সয়ামাখন এবং ফলমূল বেশি পছন্দ করে।
ক) আচার সংরক্ষণে কোন এডিস ব্যবহার করা হয়?
খ) দুর্বল এডিস বলতে কী বােঝায়?
গ) অন্তু কীভাবে সুস্থ হলাে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ) অন্তু ও শৈলীর খাবারের মধ্যে কোনটি এসিডিটির কারণ বিশ্লেষণ কর।
২
Answers
Answer:
Explanation:
সাম্প্রতিক সময়ে যে কয়েকটি খাদ্য-উপাদান নিয়ে ব্যাপক গবেষণা হয়েছে, সয়াবিন তার মধ্যে অন্যতম। সয়াবিন আমাদের কাছে ভোজ্য তেলের উৎস হিসেবে পরিচিত হলেও, নানা গবেষণা ও তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে বিজ্ঞানীরা একে একটি পুষ্টিকর খাদ্য-উপাদান হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
সয়াবিন হতে পারে দৈনন্দিন পুষ্টির চমৎকার উৎস। বিজ্ঞানীরা বলছেন- এটি হৃদরোগ, স্তন ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার, বার্ধক্যজনিত হাড়ক্ষয় বা অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ করতে সক্ষম। মস্তিষ্কের ক্ষমতা এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতেও সয়াবিনের ভূমিকা খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা। শুধু তাই নয়, গুঁড়োদুধে মেলামিন সংক্রান্ত জটিলতার পর সয়াদুধকে গরুর দুধের অন্যতম বিকল্প হিসেবে রায় দিয়েছেন দেশি-বিদেশি চিকিৎসকরা।
হরেক উপকারিতা সয়াবিনে
গবেষণায় দেখা গেছে, সয়াবিন প্রোটিনের একটি সমৃদ্ধ উৎস। শরীরের জন্যে প্রয়োজনীয় আটটি এমাইনো এসিড রয়েছে এতে। এ-ছাড়া সয়াবিন থেকে তৈরি খাবার ও সয়াদুধে রয়েছে কোলেস্টেরলমুক্ত অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড এবং হৃৎস্বাস্থ্যের জন্যে উপকারী ওমেগা-৩।
সয়াতে বার্ধক্য ও রোগ-প্রতিরোধী বিভিন্ন এন্টি-অক্সিডেন্ট ছাড়াও ভিটামিন বি, ফলেট ও আয়রনের অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন পুষ্টিবিজ্ঞানীরা। এতে আরো আছে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদান। সাথে প্রচুর ফাইবার বা আঁশ তো আছেই।
উচ্চ কোলেস্টেরল, হৃদরোগ আর স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়
রক্তের মাত্রাতিরিক্ত কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমানোর ক্ষেত্রে সয়াবিনের উল্লেখযোগ্য ভূমিকার প্রমাণ পেয়েছেন গবেষকরা। নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন-এ প্রকাশিত একটি নিবন্ধে বলা হয়েছে, শরীরের জন্যে ক্ষতিকর অতিরিক্ত এলডিএল কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইডের পরিমাণ কমাতে সয়া প্রোটিন বেশ কার্যকরী-অন্য যে-কোনো প্রাণিজ প্রোটিনের চেয়ে। আর এটি বাড়ায় হিতকরী কোলেস্টেরল এইচডিএল-এর পরিমাণ।
কোলেস্টেরল সংক্রান্ত সয়া প্রোটিনের এ ভূমিকা এখন স্বীকৃত এবং বেশ কয়েকটি স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক প্রমাণিত। আর এভাবে করোনারি হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে সয়াবিন।
কমায় ক্যান্সারের ঝুঁকি
এশিয়ার দেশগুলোতে মহিলাদের স্তন ক্যান্সার ও পুরুষদের প্রোস্টেট ক্যান্সারের হার তুলনামূলক কম। এর সাথেও রয়েছে সয়াবিনের যোগসূত্র। চীনে চৌদ্দশ স্তন ক্যান্সার রোগীর কেস-স্টাডি পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, বয়ঃসন্ধিকালে যারা সপ্তাহে অন্তত একবার সয়াজাত খাবার খেয়েছেন, পরবর্তীতে তাদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে গেছে উল্লেখযোগ্য হারে।
পূর্ণবয়স্কদের মধ্যেও যারা সয়াজাত খাবারে অভ্যস্ত তাদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে ৪৭ শতাংশ। স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানোর ক্ষেত্রে সয়াজাত খাদ্যের ভূমিকা নিয়ে ১৯৭৮ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত পরিচালিত মোট ১৮টি গবেষণা রিপোর্টের ভিত্তিতে এ তথ্য দিয়েছেন গবেষকরা।
উন্নত দেশগুলোতে দিন দিন বেড়ে চলেছে প্রোস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্তের পরিমাণ। এর মধ্যে ব্যতিক্রম জাপান। জাপানে প্রোস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্তের হার অন্যান্য ধনী দেশগুলোর তুলনায় বিস্ময়করভাবে কম। পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, এর পেছনে সয়াবিনের ভূমিকাই মুখ্য। কারণ, পৃথিবীর অন্যান্য স্থানের তুলনায় জাপানে সয়াজাত খাবারের প্রচলন বেশি।
এ-ছাড়াও অতিভোজন এবং অতিরিক্ত আমিষ সমৃদ্ধ খাবারকে প্রোস্টেট ক্যান্সারের কারণ হিসেবে উল্লেখ করে গবেষকরা এটি প্রতিরোধে সয়াবিনের পাশাপাশি পূর্ণ-শস্যদানা জাতীয় খাবার, বিভিন্ন ধরনের বীজ থেকে আহরিত তেল ও বাদাম খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
স্মৃতিশক্তি বাড়ে
সয়াবিন স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতিশক্তি বাড়ায়। শুধু তা-ই নয়, সুবিন্যস্ত কর্মপরিকল্পনার জন্যে প্রয়োজনীয় মানসিক দক্ষতা ও উদ্যম বৃদ্ধিতেও সয়াবিন সহায়ক। লন্ডন কিংস কলেজের সেন্টার ফর নিউরোসায়েন্স-এ ছাত্রদের ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা এর প্রমাণ পেয়েছেন। তাদেরকে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ সয়াজাত খাবার দিয়ে দেখা গেছে, ১০ সপ্তাহ পর তাদের স্মৃতিশক্তি বেড়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। তাদের কর্মপরিকল্পনার ক্ষেত্রেও লক্ষ্য করা গেছে তুলনামূলক বেশি দক্ষতা।
হাড়ক্ষয় রোধ করে
বার্ধক্যজনিত কিছু সমস্যা সমাধানেও রয়েছে সয়াবিনের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। এর মধ্যে একটি হলো অস্টিওপোরোসিস বা হাড়ক্ষয়। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন ৪০ গ্রাম সয়া প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার হাড়ক্ষয় প্রতিরোধের পাশাপাশি কোমরের হাড়ের ঘনত্ব বাড়ায়। ইউরোপিয়ান জার্নাল অব নিউট্রিশন-এ প্রকাশিত একটি গবেষণা রিপোর্টে এ তথ্য পাওয়া যায়। এতে দেখা যায়, খাবারে সয়া প্রোটিনের পরিমাণ যত বেড়েছে, কোমর ও উরুর হাড়ক্ষয় তত কমেছে।
মেনোপজ পরবর্তী জটিলতা রোধ করে
মেনোপজ বা রজঃনিবৃত্তির পর মহিলারা সাধারণত যে সমস্যাগুলো অনুভব করেন, এর হার পশ্চিমা দেশগুলোর তুলনায় জাপানে অনেক কম। দৈনন্দিন খাবারে পর্যাপ্ত সয়া প্রোটিনের উপস্থিতিই এর অন্যতম কারণ। এসময় বিব্রতকর হটফ্লাশসহ মেনোপজ-পরবর্তী অন্যান্য জটিলতাগুলোও তাদের ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত কম।
শুধু তা-ই নয়, মেনোপজ হয়ে যাওয়া মহিলাদের ক্ষেত্রে সয়া প্রোটিনকে এখন হরমোন প্রতিস্থাপন চিকিৎসার (এইচআরটি) বিকল্প হিসেবেও ভাবা হচ্ছে। কারণ সয়াবিনে থাকা ফাইটোইস্ট্রোজেন-এ মহিলাদের প্রজনন হরমোন ইস্ট্রোজেন-সদৃশ কিছু বৈশিষ্ট্য খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা।