আমরা কালিও করতাম নিজেরাই। কালি তৈরির পদ্ধতি সপকে যা জান লেখো ।
Answers
Answer:
মাধ্যমিকের নমুনা প্রশ্ন :-
১. 'ফাউন্টেন পেন' বাংলায় কী নামে পরিচিত ? নামটি কার দেওয়া বলে উল্লেখ করা হয়েছে ? ফাউন্টেন পেনের জন্ম ইতিহাস লেখো । [মাধ্যমিক-২০১৭]
উঃ- বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক নিখিল সরকার ওরফে শ্রীপান্থ রচিত 'হারিয়ে যাওয়া কালি কলম' প্রবন্ধ অনুযায়ী 'ফাউন্টেন পেন' বাংলায় 'ঝরনা কলম' নামে পরিচিত ।
♦ উক্ত নামটি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দেওয়া বলে প্রাবন্ধিক উল্লেখ করেছেন ।
♦ তথাকথিত 'ফাউন্টেন পেন' -এর পূর্বনাম ছিল 'রিজার্ভার পেন' । একেই উন্নত করে 'ফাউন্টেন পেন' -এর রূপদান করা হয়েছিল । 'ফাউন্টেন পেন' -এর স্রষ্টা ছিলেন, লুইস অ্যাডসন ওয়াটারম্যান নামে জনৈক ব্যবসায়ী । তিনি একবার অন্য আরেক ব্যবসায়ীর সাথে চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করতে গিয়েছিলেন । কিন্তু চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করা কালীন দোয়াতে রাখা কালি কাগজের উপর উল্টে পড়ে যায়, ফলে ওয়াটারম্যানকে কালি সংগ্রহের জন্য পুনরায় বাইরে যেতে হয় । কিন্তু ফিরে এসে তিনি শোনেন ইতিমধ্যে অন্য এক তৎপর ব্যবসায়ী চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করে চলে গিয়েছেন । দোয়াতে রাখা কালির জন্য ঘটা এই দুর্ঘটনা যাতে আর না ঘটে, এই উদ্দেশ্যে ওয়াটারম্যান 'ফাউন্টেন পেন' -এর আবিষ্কার করেছিলেন । এইভাবে লুইস অ্যাডসন ওয়াটারম্যান ফাউন্টেন পেন আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে ''কালির ফোয়ারা খুলে দিয়েছিলেন ।
২ "আশ্চর্য, সবই আজ অবলুপ্তির পথে ।" — কোন জিনিস আজ অবলুপ্তির পথে ? এই অবলুপ্তির কারণ কী ? এ বিষয়ে লেখকের মতামত কী ? [মাধ্যমিক-২০১৮]
উঃ- নানা ধরনের ফাউনটেন পেন, কালি, দোয়াত, কলমদানি —এ সবই আজ অবলুপ্তির পথে ।
♦ কম্পিউটারের ব্যাপক ব্যবহার এই অবলুপ্তির কারণ ।
♦ লেখক এতে বিপন্ন বোধ করেন ।
♦ কলমের দ্বারা নিজের হাতে লেখাটা লেখকের কাছে অধিক প্রীতিকর । কিন্তু বিজ্ঞানের চরম উন্নতিতে লেখালেখির কাজকে অতি সহজবোধ্য ও উপযোগী করতে কম্পিউটারের ব্যবহার সর্বত্র । তাই লেখক কলমের অবলুপ্তির কথা ভেবে নস্টালজিক হয়ে পড়েন । তিনি আরও চিন্তিত এই কারণে যে হাতে লেখা হয়তো চিরতরে মুছে যাবে, কী হবে ক্যালিগ্রাফিস্টদের অস্তিত্ব ? এ সকল ভাবনায় লেখক বিপন্নবোধ করেন ।
৩. "আমরা কালিও তৈরি করতাম নিজেরাই ।" — কারা কালি তৈরি করতেন ? তাঁরা কীভাবে কালি তৈরি করতেন ? [মাধ্যমিক-২০১৯]
উঃ- প্রাবন্ধিক শ্রীপান্থ ও তাঁর সতীর্থরা কালি তৈরি করতেন ।
♦ প্রাবন্ধিক শ্রীপান্থ ও তাঁর সতীর্থরা নিজেরাই কালি তৈরি করতেন । যদিও তাঁর মা, পিসি ও দিদিরা এই কালি তৈরি করতে সাহায্য করতেন । এই কালি তৈরি করা নিয়ে প্রাচীনেরা বলতেন— "তিল ত্রিফলা শিমুল ছালা / ছাগ দুগ্ধে করি মেলা / লৌহ পাত্রে লোহায় ঘসি / ছিঁড়ে পত্র না ছাড়ে মসি ।" ভালো কালি তৈরি করতে গেলে এই ছিল ব্যবস্থাপনা । প্রাবন্ধিকরা এত কিছুর আয়োজন করতে পারতেন না, তাই তাঁরা সহজ কালি তৈরির পদ্ধতি অবলম্বন করতেন । বাড়ির রান্না হত কাঠের আগুনে, সেখানে রান্নার পর কড়াইয়ের নীচে প্রচুর কালি জমত । লাউপাতা দিয়ে তা ঘষে তুলে একটা পাথরের বাটিতে রেখে তাঁরা জল দিয়ে গুলতেন । এভাবেই প্রাবন্ধিকরা কালি তৈরি করতেন । তবে যারা কালি তৈরিতে ওস্তাদ ছিল, তারা ওই কালো জলে হরতকী ঘষত । কখনো কখনো আতপ চাল ভেজে পুড়িয়ে তা বেটে ওই কালো জলে মেশাত । সব ভালোভাবে মেশানোর পর খুন্তির গোড়ার দিকটা পুড়িয়ে লাল টকটকে করে সেই জলে ছ্যাঁকা দিত জল ফোটানোর জন্য । কিছু সময় টগবগ করে ফোটানোর পর ন্যাকড়ায় ছেঁকে দোয়াতে ঢেলে নিলেই লেখার জন্য কালি প্রস্তুত হয়ে যেত ।
*******
মাধ্যমিকের সম্ভাব্য প্রশ্ন :-
১. "আমরা কালিও তৈরি করতাম নিজেরাই।"— প্রবন্ধ অনুসরণে কালি তৈরি পর্বের বর্ণনাটি নিজের ভাষায় লেখ ।
উত্তর:- 'হারিয়ে যাওয়া কালি কলম' প্রবন্ধে লেখক শ্রীপান্থ তাঁর ফেলে আসা শৈশবের কথা স্মৃতিচারণ করেছেন । লেখার জন্য কালি তাঁদের নিজেদের তৈরি করতে হত । কালি তৈরি করার পদ্ধতিটি বেশ জাঁকজমকপূর্ণ ছিল । কাঠের উনুনে রান্না সময়ে লোহার কড়াই এর তলায় যে কালি পড়ত, তা লাউপাতা দিয়ে ঘষে তুলে একটি পাথরের বাটিতে রাখা জলে গুলে নিতে হত । অনেকে আবার সেই জলে হরীতকী ঘসত । আবার কখনো আতপচাল ভেজে পুড়িয়ে তা ভালো করে গুড়ো করে কালির জলে মেশানো হত । তারপর খুন্তির গোড়া পুড়িয়ে লাল করে তাতে ছ্যাঁকা দিতে হত । এরপর পাতলা কাপড়ে ছেঁকে তৈরি হত কালি । লেখক শ্রীপান্থ কালি তৈরির এই অপরূপ পদ্ধতির বর্ণনা এই প্রবন্ধে তুলে ধরেছেন ।
২. "সব মিলিয়ে লেখালেখি রীতিমতো ছোটখাটো একটা অনুষ্ঠান"— প্রবন্ধ অনুসরণে মন্তব্যটির বিশ্লেষণ কর ।
উত্তর:- আলোচ্য উদ্ধৃতাংশটি 'হারিয়ে যাওয়া কালি কলম' প্রবন্ধ থেকে নেওয়া হয়েছে । লেখক শ্রীপান্থ তাঁর কিশোর বয়সের লেখাপড়া বিষয়ে উপরিউক্ত মন্তব্যটি করেছেন । লেখক গ্রামের ছেলে ছিলেন বলে লেখাপড়ার প্রথম জীবনে ফাউন্টেন পেন হাতে পায়নি । বাঁশের কঞ্চির কলম ব্যবহার করতেন । যে কলম তিনি নিজের হাতে তৈরি করতেন । কলমের কালিও তাঁকে তৈরি করে নিতে হত । কলমের মুখটা সূঁচালো করে কেটে আবার মাঝখান দিয়ে চিরে দিতেন । দোয়াতের কালিতে কলম ডুবিয়ে ডুবিয়ে লিখতেন । কালি তৈরীর জন্য বাড়ির রান্নার কড়াই -এর তলার কালি লাউ পাতা দিয়ে ঘষে তুলে পাথরের বাটিতে জলে গুলে নিতেন । কালি বেশি ভালো করার জন্য অর্থাৎ যাতে দীর্ঘক্ষণ লেখা স্থায়ী থাকে তার জন্য আতপ চাল ভেজে গুঁড়ো করে কালিতে মেশাতেন এবং হরিতকী ঘসে পোড়া খন্তির ছ্যাঁকা দিতেন । লেখক দোয়াতের কালি আর বাঁশের কঞ্চি অনেকদিন ব্যবহার করতেন । কৈশোরে এইভাবে লেখাপড়া করার প্রসঙ্গে লেখক উপরিউক্ত মন্তব্য করেছেন ।
লেখক শ্রীপান্থ কঞ্চির কলম ছেড়ে ছিলেন শহরে এসে হাইস্কুলে ভর্তি হবার পর । প্রথমে কালির বড়ি দিয়ে লিখতেন । পরে কাজল কালি, সুলেখা কালি বাজারে কিনতে পাওয়া গেলে সেই দিয়ে লেখাপড়ার কাজ করতেন । খাতার লেখা ভালোভাবে শুকিয়ে নেয়ার জন্য ব্লটিং পেপার বা বালি ব্যবহার করতেন । লেখাপড়ার জন্য বিশেষ করে লেখালেখির জন্য, সঠিক জায়গায় লেখা উপস্থাপিত করার জন্য বিশাল আয়োজন করতে হত । এই সব কারণে লেখক উক্ত মন্তব্য করেছেন ।
follow me
বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক নিখিল সরকার ওরফে শ্রীপান্থ রচিত 'হারিয়ে যাওয়া কালি কলম' প্রবন্ধ অনুযায়ী 'ফাউন্টেন পেন' বাংলায় 'ঝরনা কলম' নামে পরিচিত ।
♦ উক্ত নামটি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দেওয়া বলে প্রাবন্ধিক উল্লেখ করেছেন ।
♦ তথাকথিত 'ফাউন্টেন পেন' -এর পূর্বনাম ছিল 'রিজার্ভার পেন' । একেই উন্নত করে 'ফাউন্টেন পেন' -এর রূপদান করা হয়েছিল । 'ফাউন্টেন পেন' -এর স্রষ্টা ছিলেন, লুইস অ্যাডসন ওয়াটারম্যান নামে জনৈক ব্যবসায়ী । তিনি একবার অন্য আরেক ব্যবসায়ীর সাথে চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করতে গিয়েছিলেন । কিন্তু চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করা কালীন দোয়াতে রাখা কালি কাগজের উপর উল্টে পড়ে যায়, ফলে ওয়াটারম্যানকে কালি সংগ্রহের জন্য পুনরায় বাইরে যেতে হয় । কিন্তু ফিরে এসে তিনি শোনেন ইতিমধ্যে অন্য এক তৎপর ব্যবসায়ী চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করে চলে গিয়েছেন । দোয়াতে রাখা কালির জন্য ঘটা এই দুর্ঘটনা যাতে আর না ঘটে, এই উদ্দেশ্যে ওয়াটারম্যান 'ফাউন্টেন পেন' -এর আবিষ্কার করেছিলেন । এইভাবে লুইস অ্যাডসন ওয়াটারম্যান ফাউন্টেন পেন আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে ''কালির ফোয়ারা খুলে দিয়েছিলেন ।
Hope it helps
Mark me as brainliest and follow me nd be happy