ইংরেজ শাসনামলে বাংলার রাজনৈতিক পরিবর্তনের সংক্ষি বর্ণনা কর।
Answers
Answer+Explanation:
ভূমিকাঃ প্রচলিত শাসন ব্যবস্থা থেকে শাসন ব্যবস্থায় পরিবর্তন ঘটতে শুরু করে ইংরেজ শাসনামলে। ইংরেজদের আগমনে সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন ঘটে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে। এসময় উপমহাদেশে জাতীয়তাবাদ বিকশিত হতে শুরু করে।
বাংলায় ইংরেজ শাসনের সূচনা পর্বঃ উপমহাদেশে জমি ছিল অভিজাত্যের প্রতীক। ফলে নিম্ন বর্গের অনেক ব্যক্তি সাধারণ মানুষ যারা কোম্পানির সঙ্গে ব্যবসা বাণিজ্য করে প্রচুর অর্থের মালিক হন, তারা জমিদারি কিনে অভিজাত্যের মর্যাদা লাভে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন। ফলে দেশীয় পুঁজি, দেশীয় শিল্প গড়ে ওঠার সম্ভাবনা ধ্বংস হয়ে যায়। অপরদিকে কোম্পানিও সম্ভাব্য এদেশীয় প্রতিদ্বন্দ্বীর হাত থেকে বেঁচে যায়। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে কৃষকরা সরাসরি জমিদার কর্তৃক শোষিত হতে থাকে।
প্রতিরোধ আন্দোলনঃ ইংরেজ শাসনামলে বাংলায় কিছু প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে উঠে। নিম্নে সংক্ষেপে সেসকল আন্দোলন সমূহ তুলে ধরা হলো।
ফকির সন্ন্যাসী আন্দোলনঃ বাংলার ফকির সন্ন্যাসী আন্দোলন ছিল একটি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন। পলাশী যুদ্ধের পর থেকে এই আন্দোলন শুরু। নবাব মীর কাশিম ইংরেজদের সঙ্গে যুদ্ধে ফকির সন্ন্যাসীদের সাহায্য চান। নবাবকে সাহায্য করার কারণে ইংরেজরা তাদের গতিবিধির প্রতি করা নজর রাখেন।
তিতুমিরের সংগ্রামঃ ইংরেজ, জমিদার, নীলকরদের দ্বারা নির্যাতিত কৃষকরা দলে দলে তিতুমীরের বাহিনীতে যোগ দিলে ধর্ম সংস্কারের আন্দোলন একটি ব্যাপক কৃষক আন্দোলনে রূপ নেয়। ইংরেজদের গোলাবারুদ, নীলকর জমিদারদের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের মুখে তাঁর বাঁশের কেল্লা ছিল দুঃসাহস আর দেশপ্রেমের প্রতীক। যা যুগে যুগে বাঙালিকে অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে সাহস যুগিয়েছে, প্রেরণা জুগিয়েছে স্বাধীনতার পথে এগিয়ে যেতে।
নীল বিদ্রোহঃ ইংরেজরা এদেশে এসেছিল ব্যবসায় বাণিজ্য করতে। ঐ সময় নীল ব্যবসা ছিল খুবই লাভজনক। বাংলা হয়ে ওঠে নীল সরবরাহের প্রধান কেন্দ্র। জিনিসপত্রের মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নীল চাষের খরচও বৃদ্ধি পায়। নীলকররা বিষয়টি বিবেচনায় রাখত না। ফলে ক্রমাগত নীলচাষ চাষিদের জন্য অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। ১৮৬১ সালে ব্রিটিশ সরকার ইন্ডিগো কমিশন বা নীল কমিশন গঠন করে। পরবর্তীকালে নীলের বিকল্প কৃত্রিম নীল আবিস্কৃত হওয়ায় ১৮৯২ সালে এদেশে নীল চাষ চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়।
ফরায়েজী আন্দোলনঃ ফরায়েজী আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা হাজী শরীয়তউল্লাহ। তিনি দীর্ঘ ২০ বছর মক্কায় অবস্থান করেন। সেখানে তিনি ইসলাম ধর্মের ওপর লেখাপড়া করে অগাধ পান্ডিত্য অর্জন করেন।
নবজাগরণ ও সংষ্কার আন্দোলনঃ ১৭৫৭ সালে পলাশী যুদ্ধের পর এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অবস্থার পরিবর্তনের সূচনা হয়। এই সময়ে প্রচলিত ধর্ম, শিক্ষা, সংস্কৃতি, সাহিত্য সামাজিক রীতিনীতি ও ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে এক ধরনের চিন্তার বিপ্লব সূচিত হয়। এই পরিণতিতে উদ্ভব ঘটে নতুন ধর্মমত, নতুন সাহিত্য, নতুন সামাজিক আদর্শ ও রীতিনীতির।
রাজা রামমোহন রায়ঃ বাংলার নবজাগরণের স্রষ্টা ভারতরে প্রথম আধুনিক পুরুষ ছিলেন রাজা রামমোহন রায়। আধুনিক ভারতের রূপকার রাজা রামমোহন তৎকালীন সমাজের সামাজিক ও রাজনৈতিক গতিধারা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি হিন্দু সমাজের সতীদাহ, বাল্যবিবাহ, কৌলিন্য প্রথা ও অনান্য কুসংস্কার দূর করতে প্রচেষ্টা চালান।
ডিরোজিও ও ইয়াংবেঙ্গল মুভমেন্টঃ রাজা রামমোহন রায়ের নীতি ও ধারা টিকিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন ডিরোজিও এবং তার ছাত্রবৃন্দ। তিনি তার অনুসারীদের স্বাধীন মতামত ব্যক্ত করার শিক্ষাদেন। তরুন সমাজের পুরোনো ধ্যানধারণা পাল্টে দিতে ডিরোজিও কর্তৃক ১৮২৮ সালে প্রতিষ্ঠিত একাডেমি অ্যাসেসিয়েশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরঃ পান্ডিত্য, শিক্ষা বিস্তার, সমাজ সংস্কার, দয়া ও তৈজস্বিতায় ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন উনিশ শতকের বাংলার একক ব্যক্তিত্ব।
হাজী মুহম্মদ মহসীনঃ তিনি হুগলীতে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। ঢাকা, চট্টগ্রাম, যশোর প্রকৃতি স্থানের মাদ্রসার উন্নতি সাধনের জন্য তিনি প্রচুর অর্থ ব্যয় করেন। মৃত্যুর ৬ বছর পূর্বে ১৮০৬ সালে একটি ফান্ড গঠন করে জনহিতকর কার্যে সমস্ত সম্পত্তি দান করেন। এছাড়াও চিকিৎসালয় সহ নানা সেবামূলক কাজে তিনি প্রচুর অর্থ সম্পদ দান করেন।
নওয়াব আব্দুল লতিফঃ তিনি বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে প্রথম ইংরেজ শিক্ষঅর বিস্তারের প্রয়োজন এবং তাদের ইংরেজ শিক্ষার গুরুত্ব বুঝতে পারেন। তাই তিনি মুসলমানদের আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তাদের কল্যানের জন্য প্রচেষ্টা চালান।
এছাড়াও সৈয়দ আমির আলী, বেগম রোকেয় এসময়কার সমাজ সংস্কৃতি শিক্ষা ব্যবস্থাকে সমানের দিকে নিয়ে যেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।