প্রাচীন ভারতে জলসেচ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল কেন ? সে যুগের জলসেচ ব্যবস্থার সঙ্গে আজকের দিনের জলসেচ ব্যবস্থার কোন পার্থক্য তােমার চোখে পড়ে কি ?
Answers
Answer:
বৈদিক যুগের চিন্তাশীল মানুষেরা প্রকৃতি ও পরিবেশের মাঝে শক্তি ও সৌন্দর্য সন্ধান ও আবিষ্কার করেছেন। ঋগ্বেদের যুগে পশুদের জন্য জলপানের ব্যবস্থা ও মানুষের পানীয় জলের বিশুদ্ধিকরণ ও সংরক্ষণের কথা পাওয়া যাচ্ছে। সামবেদে জীবন ও জলের গুরুত্ব, বাস্তুতন্ত্রে জলের ভূমিকা, জলচক্র ইত্যাদি সম্বন্ধীয় পরিবেশ ভাবনা লক্ষণীয়। বৈদিক যুগে ‘গো’ শব্দের অর্থ জল, রশ্মি, বাক্য, পৃথিবী, গোরু ইত্যাদি এবং বৈদিক ভাষায় জলের 101 নাম প্রচলিত ছিল। এ যুগে জলকে বলা হয় most democratic liquid, সে যুগে elixir of life, অন্নের ( = খাদ্যের ) আশ্রয় জল। ‘অন্তঃকোষ’ পদার্থে জলই হল প্রধান প্রবাহী তরল। তাই জলধারার সঙ্গে জীবনধারার তুলনা করা হয়। ‘হে জল তুমি সুখের আধারস্বরূপ’ । ‘হে মন্ডুক কন্যা, যেরূপ শব্দে বৃষ্টি হয়, সেইরূপ শব্দ কর’. জীবনযাত্রার সব পর্যায়ে জলের উপর এই নির্ভরতা আজও রাজনীতির মানদন্ড। চিরপ্রবাহী নদীর উপর বড়ো বড়ো বাঁধ না দেওয়া, নদী পথের ভৌগোলিক পরিবর্তন না করা, জলচক্রীয় সংস্থানের বিকৃতি না ঘটানো, অন্যকে বঞ্চিত করে জলের স্বার্থপর মজুতদারি বন্ধ করা; কূপ জলাশয় বা পুষ্করিণী থেকে পানীয় জল অপহরণ না করা, দিঘি ও হ্রদের জল অপব্যবহার না করা - এসব যদি প্রাচীন ভারতে মান্য হয়, আজকে নয় কেন ? গঙ্গা জলের ও গঙ্গা নদীর পবিত্রতা বজায় রাখার জন্য ব্রাহ্মান্ড পুরাণে কঠোর নির্দেশ ছিল। এমনকি গঙ্গার পবিত্র পানিতে শৌচ্য, আচমন, গাত্র সংবাহন, মল ঘর্ষণ, বস্ত্র ত্যাগ, ফুল – মালা - নির্মাল্য ইত্যাদি বিসর্জন না দেবার 13টি বিধি ছিল।