ধস নামে কেন?
প্লিজ আমাকে বলেন এর উত্তর
Answers
Answer:
যেখানে পাহাড় আছে যেখানে হয়।
Explanation:
যেখানে পাহাড় আছে, সাধারণত সেখানে ভূমিধস হবে। সেটা আগ্নেয় শিলা, রূপান্তর শিলা বা পাললিক শিলা, যেটাই হোক না কেন, সব ক্ষেত্রেই পাহাড়ধস হবে।
আমেরিকার মতো উন্নত দেশেও ভূমিধস হচ্ছে। আমাদের দেশের অধিকাংশ পাহাড় পাললিক শিলা দিয়ে গঠিত। এখানে ভূমিধস বেশি হবে। কয়েক দশক আগেও ভূমিধস হতো। কিন্তু তখন এভাবে মানুষের মৃত্যু হতো না বলে মানুষ এ বিষয়টি জানতে পারত না। বর্তমানে পাহাড়ধস আগের থেকে বেড়ে গেছে। সিলেট থেকে টেকনাফ পর্যন্ত পাহাড়ের বিন্যাস হলো উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত। আমাদের দেশের পূর্বে ভারতের মণিপুর, মিজোরাম, এরও পূর্বে মিয়ানমারের পাহাড়গুলো একই রকম। এর মধ্যে কিছু পাহাড় উচ্চতা ও কিছু পাহাড় ভ্যালি তৈরি করে।
পাহাড়গুলোর মধ্যে তিন ধরনের ভূতাত্ত্বিক গঠন রয়েছে। এগুলো হলো বালুপ্রধান, স্যান্ডশেল অল্টারনেশনস (বালু–মাটির স্তরবিশিষ্ট) ও কাদাপ্রধান পাহাড়। স্যান্ডশেল অল্টারনেশনস পাহাড়গুলো ভূমিধসের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
অন্য পাহাড়েও ভূমিধস হতে পারে। আমাদের পাহাড়গুলোর পূর্বে ও পশ্চিমে ঢাল রয়েছে। যেসব পাহাড়ের ঢাল ও এর ভেতরের ভূতাত্ত্বিক স্তর যখন একই দিকে থাকবে, সে পাহাড়গুলো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। আবার যেসব পাহাড়ের ঢাল ও এর ভূতাত্ত্বিক স্তর বিপরীতমুখী, সেগুলো কম ঝুঁকিপূর্ণ।ছাত্রজীবনে ঘন বনায়নের জন্য এসব পাহাড়ে ঢুকতে পারতাম না। এখন সে অবস্থা নেই। বৃষ্টিপাত যে এখন বেশি হচ্ছে, তা নয়। আগেও ভারী বৃষ্টিপাত হতো। কিন্তু তখন ঘন বনায়নের জন্য বৃষ্টিপাত পাহাড়ের শিলাস্তরে ঢুকতে পারত না। বৃষ্টির পানি পাহাড়ের ওপর দিয়ে গড়িয়ে নিচে চলে আসত। এ জন্য পাহাড়ের ভেতরের মাটির গঠন ঠিক থাকত।
এখন পাহাড় ন্যাড়া হয়ে গেছে। পাহাড়ে ঘন বনায়ন নেই। এ জন্য বৃষ্টির পানি সরাসরি পাহাড়ের শিলাস্তরে প্রবেশ করে পাহাড়কে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। শুধু ভারী বৃষ্টির জন্যই পাহাড়ধস হচ্ছে না। আরও অনেক কারণ রয়েছে।
ভূমিকম্প, পাহাড় কাটা, বন উজাড় করা, প্রতিনিয়ত ভারী যানবাহনের ঝাঁকুনি—এমন বিভিন্ন কারণে পাহাড়ধস হতে পারে। এবার পাহাড়ধসে বেশি মানুষ মৃত্যুর জন্য এটা নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে। বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে ভবিষ্যতে হয়তো মৃত্যু কমে যাবে। কিন্তু পাহাড়ধসের প্রকৃত কারণ যদি চিহ্নিত করতে না পারি, তাহলে এ ধরনের মৃত্যু হতে থাকবে।
পাহাড়ধস একটি প্রাকৃতিক ঘটনা হলেও মানুষের অপরিণামদর্শী কর্মকাণ্ড পাহাড়ধসকে ত্বরান্বিত করেছে। এখানে যেকোনো ধরনের নির্মাণের জন্য ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যগুলো বিবেচনায় রাখা জরুরি। তা না হলে একটি সাধারণ প্রাকৃতিক ঘটনা কীভাবে মানবিক বিপর্যয়ের কারণ হয়, পার্বত্য চট্টগ্রামের সাম্প্রতিক পাহাড়ধস এর উদাহরণ।
এ অঞ্চলের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখা যাবে না।ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলো ভেঙে যোগাযোগব্যবস্থাকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে। ফলে মানবিক বিপর্যয় দেখা দেবে। আমার মতে, পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় একটা জরিপ হওয়া উচিত, কোন কোন রাস্তাগুলো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। এ জন্য স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি দুই ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে।
স্বল্প মেয়াদে রিটেনশন ওয়াল দিয়ে রাস্তাগুলোকে রক্ষার উদ্যোগ নিতে হবে। দীর্ঘ মেয়াদে বন বিভাগ, রোডস অ্যান্ড হাইওয়ে, পরিবেশ মন্ত্রণালয়, স্থানীয় প্রশাসন—সবাইকে সমন্বিতভাবে উদ্যোগ নিতে হবে।