পর্তুগিজদের নিকট থেকে ইংরেজরা কিভাবে মোস্বাই শহর লাভ করে?
Answers
Answer:
which language is this?
Answer:
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি রানী প্রথম এলিজাবেথ প্রদত্ত সনদের (১৬০০ সাল) মাধ্যমে সৃষ্ট ব্রিটিশ নৌ-সংগঠনটি প্রাচ্যের জলপথে একচেটিয়া বাণিজ্য করার অধিকার লাভ করে এবং পরবর্তীসময়ে ভারতে ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে। পনেরো ও ষোল শতকে আন্তঃমহাসাগরীয় যোগাযোগ উন্মক্ত হওয়ার পর পশ্চিম ইউরোপের নৌ-জাতিসমূহ বহির্দেশে উপনিবেশ স্থাপনের সুযোগ পায়।
অনেক বছর পর্যন্ত কেবল ব্যক্তিগতভাবে বিনিয়োগকারীরা নিজেরাই প্রাচ্যে সমুদ্রযাত্রার আয়োজন করত। ১৬০৮ সালে কোম্পানির এমনি একটি সমুদ্র যাত্রা সুরাটে পৌঁছালেও কোনো পণ্য আদান-প্রদান হয়নি। ভারত মহাসাগর নিয়ন্ত্রণকারী পর্তুগিজেরা তাদেরকে এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেয়। ১৬১২ সালে কোম্পানি মুগল প্রশাসন থেকে সুরাটে বাণিজ্য করার অধিকার লাভ করলে পর্তুগিজদের মোকাবেলা করার জন্য কোম্পানি তাদের সমশক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। রাজা প্রথম জেমস্ ১৬১৫ সালে স্যার টমাস রো’কে সম্রাট জাহাঙ্গীর এর দরবারে দূত হিসেবে প্রেরণ করেন। রো কর্তৃক রাজার পক্ষ থেকে সম্রাটকে উপঢৌকন প্রদান এবং তাঁর ব্যক্তিগত ব্যবহার সম্রাটকে সন্তুষ্ট করে। ফলশ্রুতিতে সম্রাট এর নিকট দূত এর সব প্রার্থনা মঞ্জুর হয় এবং কোম্পানি দক্ষিণ ভারতের পশ্চিম ও পূর্ব উপকূলে ‘ফ্যাক্টরি’ বা বাণিজ্যকুঠি নামে বাণিজ্য কেন্দ্র স্থাপন করার সুযোগ লাভ করে। ১৬৩৯ সালে কোম্পানি ওয়ান্ডিওয়াশ এর স্থানীয় প্রশাসকের কাছ থেকে মাদ্রাজে একটি দুর্গ প্রতিষ্ঠার ক্ষমতা লাভ করে এবং এর মাধ্যমে কোম্পানি এ স্থান নিজেদের ভূখন্ডের ন্যায় শাসন করার অধিকার পায়। কোম্পানি মাদ্রাজে সেন্ট জর্জ ফোর্ট নির্মাণের পর তা ভারতে কোম্পানি বাণিজ্যের সদর দফতরে পরিণত হয়।
চৌকি বা কাস্টম হাউস গুলিতে কোম্পানি কর্মকর্তাদের হয়রানির বিষয়টিতে কোম্পানি ক্ষুব্ধ হয়। তাছাড়া কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত ব্যবসায় কোম্পানির দস্তক এর ব্যবহার এবং বিনা শুল্কে ব্যবসা করার চেষ্টা প্রায়শ উভয় পক্ষের মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি করে। সঠিকভাবে মালামাল যাচাই করার অজুহাতে প্রায়ই কোম্পানির বানিজ্য নৌকাসমূহ চৌকীতে থামানো হতো। মুর্শিককূলী খান নতুন সুবিধা প্রদানে কোম্পানির দাবির প্রতি কখনও নত হন নি। সুযোগ সুবিধা লাভের লক্ষ্যে কলকাতা কাউন্সিল জন সারম্যান এর নেতৃত্বে প্রচুর উপঢৌকনসহ একটি প্রতিনিধি দল সম্রাট ফররুখ সিয়ার এর নিকট প্রেরণ করে। সারম্যান প্রতিনিধি দলকে সম্রাট উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান এবং হূষ্টচিত্তে একটি ফরমান প্রদান করেন। এটি সাধারণত ১৭১৭ সালের ফররুখ সিয়ারের ফরমান নামে পরিচিত। (ফরমানে বর্ণিত তারিখটি ছিল- ৩০ ডিসেম্বর, ১৭১৬) বাংলার সুবাহদারকে এ ফরমানের মাধ্যমে কোম্পানিকে নিম্নোক্ত সুবিধা প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়:
১. কোম্পানির বর্তমান সুবিধাদির অতিরিক্ত হিসেবে কলকাতা বসতির পাশ্ববর্তী ৩৮টি মৌজার জমিদারি দেওয়া হবে।
২. কোম্পানি এবং অন্যান্য ইংরেজদের কোনো পণ্য চুরি গেলে, চুরি হয়ে যাওয়া পণ্যসমূহ উদ্ধারের ব্যবস্থা অবশ্যই নিতে হবে। পণ্য উদ্ধারে ব্যর্থ হলে ক্ষতিপূরণ অবশ্যই প্রদান করতে হবে।
৩. সুরাট মানের মাদ্রাজি টাকার অবমূল্যায়ন না করে একই মানে বাংলায় তা চালু করতে হবে।
৪. মূল সনদ প্রদর্শনের জন্য দাবি করা যাবেনা।
৫. কোম্পানির কাছে দায়বদ্ধ বা ঋণগ্রস্ত এমন সব ব্যক্তিদেরকে ফ্যাক্টরি প্রধানের কাছে হস্তান্তর করতে হবে।
৫. কোম্পানির কাছে দায়বদ্ধ বা ঋণগ্রস্ত এমন সব ব্যক্তিদেরকে ফ্যাক্টরি প্রধানের কাছে হস্তান্তর করতে হবে।৬. ফ্যাক্টরি প্রধান কর্তৃক প্রদত্ত দস্তকপ্রাপ্ত পণ্য চৌকি দ্বারা থামানো বা পরীক্ষা করা যাবেনা।
৫. কোম্পানির কাছে দায়বদ্ধ বা ঋণগ্রস্ত এমন সব ব্যক্তিদেরকে ফ্যাক্টরি প্রধানের কাছে হস্তান্তর করতে হবে।৬. ফ্যাক্টরি প্রধান কর্তৃক প্রদত্ত দস্তকপ্রাপ্ত পণ্য চৌকি দ্বারা থামানো বা পরীক্ষা করা যাবেনা।৭. সুবাহদার কোম্পানিকে মুর্শীদাবাদ টাকশাল থেকে মুদ্র জারি করার বিষয়ে অনুমতি দিবে।
কোম্পানি ভাল করেই জানত যে, এ সনদ দ্বারা প্রাপ্ত অধিকারসমূহ সুবাহদার মানতে চাইবেন না। কারণ এ সনদটি সম্রাট এর কাছ থেকে অর্থের বিনিময়ে লাভ করা হয়েছিল যা রাজ্যের সার্বভৌমত্বকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ফরমানে দফাসমূহ বিস্তারিত ভাবে বলা হয়নি যা দস্তকের আওতাধীন ছিল। সুতরাং নওয়াবের চৌকিসমূহ এবং কোম্পানির কর্মকর্তাগণ এ বিষয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন এবং প্রায়শই বিরোধপূর্ণ পরিবেশ সৃস্টি করে যা কখনো কখনো খন্ড যুদ্ধের রূপ নেয়। যখন কোম্পানির কর্মকর্তাগণ লক্ষ করে যে, নওয়াব নিজেই আইনভঙ্গকারীদের গ্রেফতার ও অন্তরীণ করার জন্য নির্দেশ দিচ্ছেন, তখন তারা পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেয়। তবে মুর্শিদকুলী খান সচেতনভাবে প্রত্যক্ষ সংঘর্ষ পরিহার করার চেষ্টা করেন।
দুর্নীতি এবং বাড়াবাড়ির বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে আরও সংকট বড়ানো সমীচিন হবেনা। পরবর্তীতে মুর্শিদাবাদের মসনদে সিরাজউদ্দৌলা আসীন হওয়ার পর মারাঠাদের আক্রমণও বন্ধ হয়ে যায়। সিরাজউদ্দৌলা কোম্পানিকে বাংলায় ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করার জন্য তিনটি শর্ত মেনে চলার নির্দেশ দেন। (ক) কলকাতার অবৈধ প্রতিরক্ষা স্থাপনা ভেঙ্গে ফেলতে হবে (খ) ইংরেজগণ অবশ্যই দস্তকের অপব্যবহার বন্ধ করতে হবে এবং (গ) তাঁদের এদেশের আইন মেনে চলতে হবে। ফোর্ট উইলিয়ম কাউন্সিল নওয়াবের নির্দেশ অমান্য করায় নওয়াব কলকাতা অভিযান করেন এবং ইংরেজদের কলকাতা থেকে বিতাড়ন করেন। বিতাড়িত ইংরেজরা হুগলী নদীর ভাটিতে নিরাপদ আশ্রয় নেয়। এ বিজয়কে স্মরণীয় করার জন্য সিরাজউদ্দৌলা তাঁর মাতামহের নামানুসারে কলকাতার নাম রাখেন আলীনগর। ইংরেজদের বিরুদ্ধে সিরাজউদ্দৌলার এ অভিযানের প্রতি ফরাসিদের নৈতিক সমর্থন ছিল।
ItsHappyQueen03♡~