১.
সৃজনশীল প্রশ্ন
ফাহিম একটি বনে বেড়াতে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের গাছপালার মাঝে বিভিন্ন রকমের প্রাণীর উপস্থিতি
লক্ষ করল। এদের মধ্যে ছিল খরগােশ, হরিণ, বানর, বাঘ, শূকর ইত্যাদি প্রাণী। সে খেয়াল করল বনের
একটি অংশে বড় বড় গাছপালা কেটে ফেলা হয়েছে আর সে অংশে ঐ সকল প্রাণীর উপস্থিতি খুবই কম।
বাস্তুতন্ত্র কী?
গ,
বিযােজক বলতে কী বােঝায় ?
ফাহিমের দেখা জীবগুলাে দিয়ে একটি খাদ্যশৃঙ্খল তৈরি করে শৃঙ্খলটি ব্যাখ্যা কর।বড় বড় গাছপালা কেটে ফেলা অংশে প্রাণীর সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণ বিশ্লেষণ কর।
Answers
পরামর্শ
রবিউল কবীর চৌধুরী
বিশেষজ্ঞ (পরীক্ষক ও মূল্যায়ন)
বাংলাদেশ পরীক্ষা উন্নয়ন ইউনিট
সমন্বয়, সৃজনশীল প্রশ্নপদ্ধতিবিষয়ক মাস্টার ট্রেইনার প্রশিক্ষণ কর্মসূচি
সৃজনশীল পদ্ধতিতে প্রশ্নগুলোর উত্তর সঠিকভাবে লিখতে হলে শিক্ষার্থীকে ভালো করে অবশ্যই পাঠ্যবই পড়তে হবে।
সৃজনশীল প্রশ্নপদ্ধতির দুটি অংশ—বহুনির্বাচনী (এমসিকিউ) এবং ব্যাখ্যামূলক (সৃজনশীল প্রশ্ন)। উভয় অংশেই শুধু মুখস্থ করে উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্র সীমিত। বহুনির্বাচনী এবং ব্যাখ্যামূলক বা সৃজনশীল অংশে কিছু প্রশ্ন থাকবে যা শিক্ষার্থী মুখস্থ করে উত্তর দিতে পারবে। কিছু প্রশ্ন থাকবে শিক্ষার্থী পাঠ্যবইয়ের বিষয়বস্তু বুঝে উত্তর দেবে। কিছু প্রশ্ন থাকবে, যার মাধ্যমে শিক্ষার্থী পাঠ্যবইয়ের যে বিষয়বস্তুগুলো আত্মস্থ করেছে তা বাস্তব জীবনে কতটুকু প্রয়োগ করতে পারে, তা দেখা হবে। কিছু প্রশ্ন থাকবে যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীর আগের জানা তথ্য ব্যবহার করে নতুন কোনো পরিস্থিতিতে বিচার-বিশ্লেষণ করার, সিদ্ধান্ত গ্রহণের এবং মূল্যায়নের দক্ষতাকে দেখা হবে।
বহুনির্বাচনী অংশ: বহুনির্বাচনী প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে চারটি বিকল্প উত্তর (ক, খ, গ, ঘ) থেকে একটি সঠিক উত্তর বেছে নিতে হয়। কিছু কিছু বহুনির্বাচনী প্রশ্নের শুরুতেই একটি দৃশ্যকল্প বা উদ্দীপক থাকে। প্রশ্নের শুরুতে যখনই কোনো দৃশ্যকল্প বা উদ্দীপক থাকবে শিক্ষার্থীকে তখন বুঝতে হবে যে তার (শিক্ষার্থী) কাছ থেকে পাঠ্যবইয়ের কোনো সুনির্দিষ্ট তত্ত্ব, তথ্য, ধারণা, নিয়মনীতি, সূত্র ইত্যাদি প্রয়োগ চাওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ শিক্ষার্থী পাঠ্যবইয়ের সেই সুনির্দিষ্ট বিষয়গুলো বাস্তব জীবনের কোনো পরিস্থিতিতে প্রয়োগ করতে পারছে কি না, তা দেখা হবে। শিক্ষার্থীর জানা জ্ঞানকে বাস্তব জীবনের নতুন পরিস্থিতিতে শুধু প্রয়োগ করার ক্ষমতাই দেখা হবে না, বরং শিক্ষার্থী পাঠ্যবইয়ের তথ্যের ভিত্তিতে সেই নতুন পরিস্থিতি বিচার-বিশ্লেষণ করতে পারছে কি না, তা-ও দেখা হবে।
সৃজনশীল অংশ: সৃজনশীল অংশের প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়ার আগে শিক্ষার্থীর সামনে একটি নতুন পরিস্থিতি তুলে ধরা হবে। এ নতুন পরিস্থিতি হচ্ছে দৃশ্যকল্প বা উদ্দীপক। এ উদ্দীপকটি পাঠ্যবইয়ের তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়। পাঠ্যবইয়ের বিষয়বস্তুকে শিক্ষার্থী কতটুকু বুঝতে পেরেছে তা যাচাই করার জন্য উদ্দীপকটি তৈরি করা হয়। উদ্দীপকটির মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থী পাঠ্যবইয়ের মূল বিষয়বস্তুর মধ্যে প্রবেশ করবে।
‘ক’ ও ‘খ’ প্রশ্নের উত্তর: উদ্দীপক বা দৃশ্যকল্পের ওপর ভিত্তি করে চারটি প্রশ্ন করা হয় (ক, খ, গ ও ঘ)। ‘ক’ ও ‘খ’ প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে একজন শিক্ষার্থীকে সাধারণত উদ্দীপকে যেতে হবে না। অর্থাৎ ‘ক’ এবং ‘খ’ প্রশ্ন দুটি উদ্দীপকের ওপর সরাসরি নির্ভরশীল নয়। তবে পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল। অর্থাৎ উদ্দীপকটি পাঠ্যবইয়ের যে অধ্যায় বা অধ্যায়গুলোর বিষয়বস্তুর ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে, সেই অধ্যায়/অধ্যায়গুলো থেকেই ‘ক’ এবং ‘খ’ প্রশ্নটি করা হবে।
‘ক’ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে একজন শিক্ষার্থীকে শুধু পাঠ্যবইয়ের তথ্য মনে রাখলেই হবে। অর্থাৎ শিক্ষার্থী পাঠ্যবইয়ের কোনো তথ্য মুখস্থ করে এ অংশের উত্তর দিতে পারবে। যেমন ঈমান অর্থ কী? আধুনিক যুগকে কিসের যুগ বলা হয়? ফকির মজনু শাহ কত সালে মৃত্যুবরণ করেন? ইত্যাদি প্রশ্নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর স্মৃতিশক্তিকে যাচাই করা হয়। এ প্রশ্নের নম্বর বরাদ্দ ১ এবং ‘ক’ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য এক বা দুইটি শব্দ বা বাক্যই যথেষ্ট।
শিক্ষার্থী পাঠ্যবইয়ের কোনো তথ্য ভালোভাবে বুঝেছে কি না, তা যাচাই করার জন্য ‘খ’ প্রশ্নটি করা হয়। বঙ্গবন্ধুর ভাষণকে ঐতিহাসিক ভাষণ বলা হয়েছে কেন, ব্যাখ্যা করো? সামাজিক পরিবর্তনের যেকোনো একটি কারণ ব্যাখ্যা করো। জাকাতের সামাজিক উপযোগিতা ব্যাখ্যা করো ইত্যাদি প্রশ্নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর পাঠ্যবইয়ের কোনো তথ্য বোঝার ক্ষমতাকে মূল্যায়ন করা হয়। ‘খ’ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীকে তার পাঠ্যবইয়ের তথ্য মনে রাখলেই হবে না, তাকে সেই তথ্য বুঝতে হবে এবং বুঝে নিজের ভাষায় উত্তর দিতে হবে। ‘খ’ প্রশ্নের নম্বর বরাদ্দ ২ এবং সর্বোচ্চ চার-পাঁচটি বাক্যের মাধ্যমে উত্তর দেওয়াটা বাঞ্ছনীয়।
‘গ’ প্রশ্নের উত্তর: ‘গ’ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য পরীক্ষার্থীকে উদ্দীপক বা দৃশ্যকল্পটি ভালো করে বুঝে পড়তে হবে। কেননা ‘গ’ অংশের উত্তর দেওয়ার জন্য শিক্ষার্থীকে উদ্দীপকের সাহায্য নিতে হবে। সাধারণত পাঠ্যবইয়ের সুনির্দিষ্ট কোনো ধারণা, সূত্র, তত্ত্ব, নিয়ম, নীতি, সংজ্ঞা ইত্যাদি শিক্ষার্থী কতটুকু বুঝতে পেরেছে, তা যাচাই করার জন্য উদ্দীপকটি তৈরি করা হয়। অর্থাৎ একজন শিক্ষার্থী পাঠ্যবইয়ের কোনো সুনির্দিষ্ট ধারণাকে উদ্দীপকের মধ্যে খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করবে। পাঠ্যবইয়ের বাংলাদেশের অর্থনীতি/ বাস্তুসংস্থান/ ক্ষারক ইত্যাদি ধারণার প্রয়োগ করতে চাইলে উপরিউক্ত সুনির্দিষ্ট ধারণাগুলোর আলোকে উদ্দীপকটি তৈরি করা হবে। উদ্দীপকটি হবে সম্পূর্ণ নতুন এবং বাস্তব জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত। শিক্ষার্থী এই অপরিচিত নতুন পরিস্থিতির মধ্যে ওপরের সুনির্দিষ্ট ধারণাকে খুঁজে বের করবে। সেই ধারণাটি পাঠ্যবইয়ের তথ্যের আলোকে ব্যাখ্যা করবে এবং নতুন পরিস্থিতিতে (উদ্দীপকের মধ্যে) সেই সুনির্দিষ্ট ধারণাটি কীভাবে প্রতিফলিত হয়েছে, তা লিখবে।
‘গ’ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য শিক্ষার্থীকে তার নিজস্ব শব্দচয়ন ও বাক্যগঠন ব্যবহার করতে হবে। আগে থেকে প্রস্তুত করা কোনো নোট মুখস্থ করে এ ‘গ’ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সম্ভব হবে না। শিক্ষার্থী তার নিজস্ব প্রজ্ঞা ও মেধা ব্যবহার করে এ প্রশ্নের উত্তর দেবে। এ ‘গ’ প্রশ্নের জন্য নম্বর বরাদ্দ ৩ এবং উত্তর সর্বোচ্চ ৯-১০টি বাক্যে হওয়া বাঞ্ছনীয়।