ব্রাহ্ম আন্দোলনের স্বরূপ ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা কর।
Answers
Answer:
উনিশ শতকের বাংলায় ধর্মসংস্কার আন্দোলনে ব্রাহ্মসমাজ উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে । একেশ্বরবাদ প্রচারের উদ্দেশ্যে রাজা রামমোহন রায় ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দের ২০শে আগস্ট 'ব্রাহ্মসভা' প্রতিষ্ঠা করেন । ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দের ২৩শে জানুয়ারি ব্রাহ্মসভার নাম হয় ব্রাহ্মসমাজ । ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দের ২৭শে সেপ্টেম্বর রাজা রামমোহন রায়ের মৃত্যুর পর ব্রাহ্মসমাজ আন্দোলনের গতি কিছুদিনের জন্য স্তিমিত হয়ে গেলেও দ্বারকানাথ ঠাকুরের পুত্র দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রাহ্মসমাজে যোগ দেওয়ার পর তাঁর নেতৃত্বে ব্রাহ্ম আন্দোলন আবার্ গতিশীল হয়ে ওঠে । ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দের ৬ই অক্টোবর দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের উদ্যোগে 'তত্ত্ববোধিনী সভা' প্রতিষ্ঠিত হয় । ১৮৪২ খ্রিস্টাব্দে তত্ত্ববোধিনী সভা ব্রাহ্মসমাজের সঙ্গে মিশে যায় । ১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের উদ্যোগে ব্রাহ্মসমাজের মুখপত্র 'তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা' প্রকাশিত হয় । ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে কেশবচন্দ্র সেন ব্রাহ্মসমাজের সঙ্গে যুক্ত হন । দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে তাঁর মতপার্থক্য ঘটলে কেশবচন্দ্র সেন ও তাঁর অনুগামীরা ব্রাহ্মসমাজ থেকে পৃথক হয়ে ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে 'ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ' গঠন করেন । দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের নেতৃত্বাধীন ব্রাহ্মসমাজ 'আদি ব্রাহ্মসমাজ' নামে পরিচিত হয় । কেশবচন্দ্র সেনের সঙ্গে বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী, শিবনাথ শাস্ত্রী, আনন্দমোহন বসু, দ্বারকামোহন গঙ্গোপাধ্যায়, দুর্গামোহন দাস প্রমূখ তরুণ ব্রাহ্মদের সঙ্গে পুনরায় মতপার্থক্য দেখা দিলে তারা ভারতবর্ষীয় ব্রহ্মসমাজ থেকে পৃথক হয়ে গিয়ে ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দের ১৫ই মে 'সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ' গঠন করেন । কেশবচন্দ্র সেনের নেতৃত্বাধীন ব্রাহ্মসমাজ 'নববিধান' নামে পরিচিত হয় । বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামীর উদ্যোগে ব্রাহ্ম আন্দোলন শহর ছাড়িয়ে বিভিন্ন জেলায় বিস্তার লাভ করে । বৈষ্ণব ধর্মের জনপ্রিয় ঐতিহ্য ও ব্রাহ্ম ধর্মাদর্শের মধ্যে সংযোগ তৈরিতে বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন ।