India Languages, asked by sanudana123gmailcom, 2 months ago

পোস্টমাস্টার গল্পে রতন চরিত্রের সম্পর্কে যা জানে লিখ​

Answers

Answered by payalchatterje
4

Answer:

পোস্টমাস্টার গল্পে রতন চরিত্র:

গল্পের নাম পোস্টমাস্টার হলেও গল্পের প্রধান চরিত্র হচ্ছে রতন। গল্পটিতে প্রকৃতি কেবলমাত্র স্থানিক ও ভৌগোলিক পরিচয় বহন করেনি, গল্পের প্রধান দুটি চরিত্রের আবেগকে নিয়ন্ত্রিত করেছে, প্রকৃতি ও মানবমন কখনও বা সমান্তরালভাবে চিত্রিত হয়েছে। গল্পের বিস্তার ও পরিণতিতে প্রকৃতি অমোঘ প্রভাব বিস্তার করেছে। গল্পটির মোট সময়কাল নির্ধারণ করা না গেলেও এটা যে স্বল্পদৈর্ঘ্যরে তার ইঙ্গিত এ গল্পে স্পষ্ট করা হয়েছে। এই গল্পজুড়ে বর্ষা ঋতুকে চিত্রিত করা হয়েছে তাই বলা যেতে পারে যে এটি কোন এক বর্ষাকালেরই। বর্ষাকালের মেঘমুক্ত দ্বিপ্রহর– এই সময়টাতে রতন ও পোস্টমাস্টার পরস্পরের হৃদয়ের কাছাকাছি এসেছে, গল্পের মাঝের অংশে কিংবা সম্পর্কের মধ্যভাগেও রয়েছে শ্রাবণের অন্তহীন বর্ষণ এবং গল্পের শেষাংশে পোস্টমাস্টারের বিদায় যাত্রায় রয়েছে বর্ষাবিস্ফোরিত নদীর বর্ণনা। কেবল পটভূমি রচনাতেও নয়, প্রকৃতিতে বর্ষার ছবি বেশ কিছু জায়গায় রতনের আবেগকে চমৎকারভাবে ইঙ্গিত করেছে। রতনের অশিক্ষাকে দূর করার চেষ্টায় পোস্টমাস্টার রতনকে নিয়মিত অক্ষরজ্ঞান দিতে শুরু করল। পোস্টমাস্টারের আন্তরিকতা রতনের মনে ভালবাসার বীজ বুনল, রতন মহা আনন্দ নিয়ে যুক্তাক্ষর পর্যন্ত শিখে ফেলল। পোস্টমাস্টার ও রতন- এই দুটি চরিত্রের শ্রেণীগত অবস্থান ভিন্ন। এ ভিন্নতা জোরালো হয়েছে তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে। যদিও পোস্টমাস্টার উচ্চবিত্ত শ্রেণীর নয়, সে সামান্য বেতনের একজন পোস্টমাস্টার কিন্তু রতনের অবস্থান তার অনেক নিচে, মনিবভৃত্যের সম্পর্কের মতো কারণ কাজের বিনিময়ে রতন চারটে খেতে পায়। খানিকটা বর্ণনা ও খানিকটা কথোপকথনের রীতিতে গল্পটি নির্মাণ করা হয়েছে। গ-গ্রামে পোস্টমাস্টারের একাকীত্ব দূর করেছে হতদরিদ্র বালিকা রতন। তাকে সে সঙ্গ দিয়েছে, সেবা দিয়েছে, গ্রাম্য সারল্যে তাকে আপন করে নিয়েছে। পোস্টমাস্টারের ঘরের লোকদের সে নিজের অজান্তেই মা, দিদি, দাদা বলে সম্বোধন করতে লাগল। লেখাপড়া শেখার ফাঁকে ফাঁকে পোস্টমাস্টার ও রতনের গল্প জমে উঠতে লাগল। পোস্টমাস্টার অসুস্থ হয়ে পড়লে দিনরাত সেবা করে তাকে সুস্থ করে তুলল। সে সময় লেখকের উচ্চারণে ‘বালিকা রতন আর বালিকা রহিল না’ এই কথাটিতে পাঠকমাত্র বুঝতে পারে যে সে শুধু জননীর পদ অধিকার করে নাই, প্রেমিকার পদেও নিজেকে অধিষ্ঠিত করেছে। পোস্টমাস্টার চলে যাবার কথা রতনকে বলার পর পর পুরো পরিবেশটা এভাবে চিত্রিত হয়েছেÑ অনেকক্ষণ আর কেউ কোন কথা কহিল না। মিটমিট করিয়া প্রদীপ জ্বলিতে লাগিল এবং এক স্থানে ঘরের জীর্ণ চাল ভেদ করিয়া একটি মাটির সরার ওপর টপটপ করিয়া বৃষ্টির জল পড়িতে লাগিল। এ চিত্রটি রতনের মনের অবস্থাকে চিত্রিত করে। পোস্টমাস্টারের প্রতি রতনের প্রেমের সূত্রটি খুবই ক্ষীণ মিটমিট করে জ্বলা প্রদীপের মতো এবং আসন্ন বিচ্ছেদের আশঙ্কায় রতনের হৃদয়বেদনা টপটপ করে পড়া বৃষ্টির জলের মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে। ‘দাদাবাবু আমাকে তোমাদের বাড়ি নিয়ে যাবে?’ এবং ‘সে কী করে হবে ‘-এই দুটি সংলাপ অসম সামাজিক স্তরের দুটি মানব-মানবীর বাস্তব অবস্থানকে চিহ্নিত করে। সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের মতে পোস্টমাস্টার গল্পটিতে রবীন্দ্রনাথ প্রথম থেকেই প্রেম রচনা করে আসছিলেন। তাঁর মতে – রতনের প্রেম তার আপনার গড়া; রতনের প্রেম তার আপনার ভেতরেই থেকে গেছে শেষ পর্যন্ত। গল্পের শেষাংশের দীর্ঘশ্বাসজনিত উচ্চারণ ‘হায় বুদ্ধিহীন মানব হৃদয় ‘রতনের নারী প্রেমকে উপস্থাপিত করে। প্রেমিকা রতন আবেগ দ্বারা তাড়িত, পোস্টমাস্টারের বিচ্ছেদে পাগল প্রায় আর অন্যদিকে পোস্টমাস্টারের হৃদয়ে রতনের জন্য প্রেম থাকলেও তা সে বাস্তবের তাড়নায় তা অস্বীকার করে ‘পৃথিবীতে কে কাহার ‘এই ভেবে সামনে এগিয়ে যায়, অজপাড়াগাঁ ছেড়ে কলকাতা শহরের দিকে তার মন ধাবিত, তাই ফিরে যাবে কীনা এই দ্বিধাকে সে সহজে এড়িয়ে যেতে পারে। দুই সামাজিক মেরুর দুই প্রান্তের দু’জন নর-নারীর পক্ষে সমাজকে অস্বীকার করে শুধু হৃদয়ের টানে সারা জীবন কাছাকাছি থাকার স্বপ্ন দেখা রবীন্দ্রনাথের সময়ের সমাজ বাস্তবতায় একেবারে সম্ভব ছিল না, এখনও যে সম্ভব তা জোর দিয়ে বলা যায় না।

এটি একটি বাংলা প্রশ্ন l

আরও দুটি বাংলা প্রশ্ন:

https://brainly.in/question/9179234

https://brainly.in/question/5630001

Similar questions