১. নিজে ভেবে লেখাে : ১১ তােমার বাড়িতে বাবা/মা/দাদা/ভাই/দিদি/বােন কে বেশি কাজ করে? তারা কী কী কাজ করে? ১.২ বাড়িতে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হয়। এ বিষয়ে তােমার কী মনে। হয় তা লেখাে। ১.ত ছেলে এবং মেয়ের মধ্যে তফাত করা উচিত নয় - এই নিয়ে যুক্তি দিয়ে পাঁচটি বাক্য লেখাে।
Answers
Answer:
না ঠিক তা নয়, তবে উল্টোটা সত্যি। মেয়েরা বাবাকে ও ছেলেরা মাকে বেশি ভালোবাসে। তবে সেটাও ছোট বয়সে। বড় হবার সাথে সাথে এই অযথা পক্ষপাতিত্ব কেটে যাবার কথা।
মা বাবার ভালোবাসা সব সন্তানের জন্য সমান থাকলেও ছোটবেলায় মেয়েরা একটু বাপসোহাগী হয়, আর ছেলেরা মায়ের ন্যাওটা।
মনোবিজ্ঞানে একথা প্রথম বলা হয় 1899 সালে। বলেন সিগমুন্ড ফ্রয়েড তাঁর বিখ্যাত theory of psychosexual development এ।
Explanation:
ফ্রয়েড একটি শিশুর জন্ম থেকে ব্যক্তিত্বের পরিপূর্ণ বিকাশ পর্যন্ত সময়কে কতগুলো ধাপ(stage) এ ভাগ করেছেন। তিনি বলেন, প্রত্যেক শিশুকে তার সামগ্রিক বিকাশের প্রত্যেক ধাপে এক একটি নতুন চ্যালেঞ্জ বা বাধা অতিক্রান্ত করতে হয়। সবগুলি বাধা সাফল্যের সাথে পার হলে তার ব্যক্তিত্বের বিকাশ সঠিক ভাবে হতে পারে এটাই ছিল ফ্রয়েডের মত।
তাঁর থিওরি অনুযায়ী, তিন থেকে পাঁচ বা ছয় বছর বয়সের(phallic stage) শিশুরা সমলিঙ্গের পিতা বা মাতার সঙ্গে নিজেকে মেলাতে (identify) শুরু করে। এর ফলে বিপরীত লিঙ্গের পিতা বা মাতার প্রতি তার বিশেষ আকর্ষণ ও অধিকার বোধ জন্মায় আর সমলিঙ্গের পিতা বা মাতাকে সে প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবতে থাকে। এর জেরে একটি কন্যা শিশু তার বাবার প্রতি ও একটি পুত্র শিশু তার মায়ের প্রতি বেশি ঝুঁকে পড়ে। এই ধাপের থেকে পাওয়া চ্যালেঞ্জটি হলো, এমন পক্ষপাতিত্ব থেকে বেরিয়ে আসা। তবেই পরবর্তী জীবনে বিপরীত লিঙ্গের মানুষদের সাথে অর্থপূর্ণ সম্পর্কে জড়াতে সে সক্ষম হবে।
যদি কোনো শিশু ধরুন একটি ছেলে এই সমস্যা বা চ্যালেঞ্জটা অতিক্রম করতে না পারে, সাইকোলজির ভাষায় যা হলো fixation, তবে সারাজীবন সে মনের মধ্যে মাকেই তার একমাত্র রোমান্টিক সঙ্গী হিসেবে ভাববে। যার ফলে প্রেমিকা বা স্ত্রী থাকলেও তাদের সাথে একটি সুন্দর তৃপ্তিদায়ক পরিপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারবে না।
এই গেল ফ্রয়েড এর মতবাদ। পরবর্তী কালে অনেক মনোবিজ্ঞানী ফ্রয়েড এর সাথে পুরোপুরি একমত না হলেও এই থিওরি অস্বীকার করতেও পারেননি।
আমার নিজস্ব observeson হল:-
একাধিক সন্তান থাকলে, মা-বাবা অপেক্ষাকৃত দুর্বল (আর্থিক ভাবে) বা অসুস্থ সন্তানের প্রতি বেশি স্নেহবান হয়ে থাকেন তা সে ছেলে হোক বা মেয়ে।
সন্তান বড় হবার সাথে সাথে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক পুরোনো হতে থাকে, মানে পারস্পরিক আকর্ষণও কমতে থাকে। এই সময় অনেক মা স্বামী কে মনে মনে বাতিল (discard) করে ছেলেকে বেশি করে আঁকড়ে ধরতে যান। অনেক বাবা মেয়েকে স্ত্রীর থেকে বেশি মূল্য দিয়ে মাথায় চড়িয়ে ফেলেন। বলা বাহুল্য এর একটাও সুস্থ ভালোবাসা নয়। এমন ঘটনা ছেলেটি বা মেয়েটির জীবনে খারাপ বই ভালো প্রভাব ফেলে না।
একই বাবা মায়ের একাধিক সন্তান ভিন্ন ধারার ও ভিন্ন মানসিকতার হয়েই থাকে। দেখা গেছে, প্রায়শঃ দ্বিতীয় সন্তান প্রথম সন্তানের তুলনায় বেশি চালাক চতুর হিসেবে জন্মায় (বাবা ও মায়ের সম্ভাব্য genetic mutation এর জন্য দায়ী) । আর প্রথম সন্তান তুলনায় একটু সাদাসিধা ও ভালো মানুষ হয়ে থাকে। উপরন্তু প্রথম সন্তান সর্বদাই মাতৃত্ব ও পিতৃত্বের প্রথম অনুভূতি উপহার দেয়। তাই প্রথম সন্তানের জন্য বাবা মা এর মনে সারাজীবন আলাদা জায়গা করা থাকে।
বর্তমান যুগ নিউক্লিয়ার ফ্যামিলির যুগ। একটি সন্তান ও বাবা-মা। সন্তান ছেলে হোক বা মেয়ে, বাবামায়ের একমুখী ভালোবাসার স্টেনগান তাদের অনেকের জীবনকে ঝাঁঝরা করে দেবার মত অবস্থায় নিয়ে যায়। লিঙ্গ বিচার নেই এই ভালবাসায়। তবু এমন ভালোবাসা অস্বাস্থ্যকর।
বাবা বা মা যে কোনো একজন সন্তানকে অন্যদের তুলনায় বেশি ভালোবাসেন এমন ঘটনা বিরল নয়। কিন্তু এর জন্য একটিমাত্র কারণ সবক্ষেত্রে লাগসই হবে না। বিভিন্ন আলাদা আলাদা সঙ্গত ও অসংগত কারণ খুঁজে পাওয়া যাবে প্রত্যেক ঘটনার পিছনে। তাদের মধ্যে লিংগবিচার আমার মতে খুবই গৌণ ভূমিকার অধিকারী।