৪. হিমবাহের সঞ্চয় কার্যের ফলে গঠিত বিভিন্ন প্রকার গ্রাবরেখার সচিত্র বর্ণনা দাও।
Answers
হিমবাহের সঞ্চয় কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ:
♦ গ্রাবরেখা [Moraine]: হিমবাহের সঞ্চয়কাজের ফলে যে সমস্ত ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, গ্রাবরেখা [Moraine] হল তাদের মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপ । পার্বত্য অঞ্চল দিয়ে হিমবাহ প্রবাহিত হওয়ার সময় ক্ষয় পাওয়া শিলাখন্ড, নুড়ি, কাঁকর, বালি প্রভৃতি হিমবাহের সঙ্গে বয়ে চলে । এইসব বিচ্ছিন্ন ও ক্ষয়প্রাপ্ত শিলাখন্ড বা শিলাচূর্ণে কিছু অংশ হিমবাহের দু’পাশে, সামনে ও তলদেহে স্তূপাকারে সঞ্চিত হয় । এই সব সঞ্চিত শিলাস্তূপকে গ্রাবরেখা [Moraine] বলে ।
♦ গ্রাবরেখার শ্রেণিবিভাগ: গ্রাবরেখার অবস্থান অনুযায়ী গ্রাবরেখা নানান ধরনের হয়, যেমন:-
♦ গ্রাবরেখার শ্রেণিবিভাগ: গ্রাবরেখার অবস্থান অনুযায়ী গ্রাবরেখা নানান ধরনের হয়, যেমন:-
১) পার্শ্ব-গ্রাবরেখা [Lateral Moraine] : হিমবাহের সঞ্চয়কাজের ফলে যে সমস্ত ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, গ্রাবরেখা [Moraine] হল তাদের মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপ । পার্বত্য অঞ্চল দিয়ে হিমবাহ প্রবাহিত হওয়ার সময় ক্ষয় পাওয়া শিলাখন্ড, নুড়ি, কাঁকর, বালি প্রভৃতি হিমবাহের সঙ্গে বয়ে চলে। এই সব বিচ্ছিন্ন ও ক্ষয়প্রাপ্ত শিলাখন্ডের কিছু অংশ হিমবাহের দু’পাশে, সামনে ও তলদেশে স্তূপাকারে সঞ্চিত হয় । সঞ্চিত এইসব শিলাস্তূপকে গ্রাবরেখা বলে । শিলাখন্ড বা শিলাচূর্ণ, নুড়ি, কাঁকর, বালি প্রভৃতি হিমবাহের দু’পাশে স্তূপাকারে প্রাচীরের মতো সঞ্চিত হলে তাকে পার্শ্ব-গ্রাবরেখা [Lateral Moraine] বলে।
২) প্রান্ত-গ্রাবরেখা [Terminal Moraine]: হিমবাহের সঞ্চয়কাজের ফলে যে সমস্ত ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, গ্রাবরেখা [Moraine] হল তাদের মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপ । পার্বত্য অঞ্চল দিয়ে হিমবাহ প্রবাহিত হওয়ার সময় ক্ষয় পাওয়া শিলাখন্ড, নুড়ি, কাঁকর, বালি প্রভৃতি হিমবাহের সঙ্গে বয়ে চলে । এই সব বিচ্ছিন্ন ও ক্ষয়প্রাপ্ত শিলাখন্ডের কিছু অংশ হিমবাহের দু’পাশে, সামনে ও তলদেশে স্তূপাকারে সঞ্চিত হয় । সঞ্চিত এইসব শিলাস্তূপকে গ্রাবরেখা বলে । শিলাখন্ড বা শিলাচূর্ণ, নুড়ি, কাঁকর, বালি প্রভৃতি হিমবাহের সামনে স্তূপাকারে সঞ্চিত হলে তাকে প্রান্ত-গ্রাবরেখা [Terminal Moraine] বলে ।
৩) মধ্য-গ্রাবরেখা [Medival Moraine] : হিমবাহের সঞ্চয়কাজের ফলে যে সমস্ত ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, গ্রাবরেখা [Moraine] হল তাদের মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপ । পার্বত্য অঞ্চল দিয়ে হিমবাহ প্রবাহিত হওয়ার সময় ক্ষয় পাওয়া শিলাখন্ড, নুড়ি, কাঁকর, বালি প্রভৃতি হিমবাহের সঙ্গে বয়ে চলে। এই সব বিচ্ছিন্ন ও ক্ষয়প্রাপ্ত শিলাখন্ডের কিছু অংশ হিমবাহের দু’পাশে, সামনে ও তলদেশে স্তূপাকারে সঞ্চিত হয় । সঞ্চিত এইসব শিলাস্তূপকে গ্রাবরেখা বলে । শিলাখন্ড বা শিলাচূর্ণ, নুড়ি, কাঁকর, বালি প্রভৃতি হিমবাহের দু’পাশে স্তূপাকারে প্রাচীরের মতো সঞ্চিত হলে তাকে পার্শ্ব-গ্রাবরেখা বলে। যখন দুটি হিমবাহ, দুদিক থেকে এসে একসঙ্গে মিলিত হলে উভয়ের পরস্পর সন্নিহিত পার্শ্ব-গ্রাবরেখা দুইটি মিশে গেলে তাকে মধ্য-গ্রাবরেখা [Medival Moraine] বলে ।
৪) তলদেশ-গ্রাবরেখা [Ground Moraine] : হিমবাহের সঞ্চয়কাজের ফলে যে সমস্ত ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, গ্রাবরেখা [Moraine] হল তাদের মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপ । পার্বত্য অঞ্চল দিয়ে হিমবাহ প্রবাহিত হওয়ার সময় ক্ষয় পাওয়া শিলাখন্ড, নুড়ি, কাঁকর, বালি প্রভৃতি হিমবাহের সঙ্গে বয়ে চলে। এই সব বিচ্ছিন্ন ও ক্ষয়প্রাপ্ত শিলাখন্ডের কিছু অংশ হিমবাহের দু’পাশে, সামনে ও তলদেশে স্তূপাকারে সঞ্চিত হয় । সঞ্চিত এইসব শিলাস্তূপকে গ্রাবরেখা বলে । শিলাখন্ড বা শিলাচূর্ণ, নুড়ি, কাঁকর, বালি প্রভৃতি হিমবাহের তলায় স্তূপাকারে সঞ্চিত হলে তাকে ভূমি-গ্রাবরেখা বা তলদেশ-গ্রাবরেখা [Ground Moraine] বলে ।
৫) আবদ্ধ গ্রাবরেখা: হিমবাহের সঞ্চয়কাজের ফলে যে সমস্ত ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, গ্রাবরেখা [Moraine] হল তাদের মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপ । পার্বত্য অঞ্চল দিয়ে হিমবাহ প্রবাহিত হওয়ার সময় ক্ষয় পাওয়া শিলাখন্ড, নুড়ি, কাঁকর, বালি প্রভৃতি হিমবাহের সঙ্গে বয়ে চলে। এই সব বিচ্ছিন্ন ও ক্ষয়প্রাপ্ত শিলাখন্ডের কিছু অংশ হিমবাহের দু’পাশে, সামনে ও তলদেশে স্তূপাকারে সঞ্চিত হয় । সঞ্চিত এইসব শিলাস্তূপকে গ্রাবরেখা বলে । শিলাখন্ড বা শিলাচূর্ণ, নুড়ি, কাঁকর, বালি প্রভৃতি হিমবাহের মধ্যে আটকে পড়ে স্তূপাকারে সঞ্চিত হয়ে আবদ্ধ-গ্রাবরেখার সৃষ্টি করে ।
উদাহরণ: তিস্তা নদীর উচ্চ অববাহিকায় লাচুং ও লাচেন অঞ্চলে নানা ধরনের গ্রাবরেখা দেখা যায়।
♦ অবক্ষেপ [Drift]: পর্বতের নিম্নাংশ ও নিম্নভূমিতে হিমবাহ প্রধানত অবক্ষেপণ করে থাকে । নদী যেমন তার বাহিত বস্তুগুলিকে যথা- নুড়ি, পাথর, কাদা, বালি, কাঁকর প্রভৃতি আকৃতি অনুসারে বিভিন্ন অংশে সঞ্চিয় করে, হিমবাহ তা করে না । হিমবাহ উপর থেকে বিভিন্ন আকৃতির শিলাচূর্ণ একই সঙ্গে নিয়ে এসে এক জায়গায় জমা করে, এগুলিকে একত্রে অবক্ষেপ [Drift] বলে ।
♦ আগামুক বা ইরাটিক [Erratics] : হিমবাহ উপর থেকে বিভিন্ন আকৃতির শিলাচূর্ণ একই সঙ্গে নিয়ে এসে এক জায়গায় জমা করে, এগুলিকে একত্রে অবক্ষেপ [Drift] বলে । হিমবাহ অবক্ষেপিত বৃহৎ শিলাখন্ডগুলির সঙ্গে আঞ্চলিক শিলাসমূহের আকৃতিগত ও প্রকৃতিগত কোনো সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয় না, তাই ওই হিমবাহ অবক্ষেপিত বৃহৎ শিলাখন্ডগুলিকে আগামুক [Erratics] বলে। কাশ্মীরের পহেলগামের উঁচু পার্বত্য অঞ্চলে এই ধরনের আগামুক [Erratics] দেখা যায় ।
♦ বোল্ডার ক্লে [Boulder Clay]: হিমবাহ গলে গেলে তার নীচে হিমবাহের সঙ্গে বয়ে আনা বালি ও কাদার সঙ্গে বিভিন্ন আকৃতির নুড়ি-পাথর অবক্ষেপ হিসাবে সঞ্চিত হলে তাদের একসঙ্গে বোল্ডার ক্লে বা হিমকর্দ [Boulder Clay] বলা হয়।
Explanation:
Answer:
পৃথিবীর বিভিন্ন ভূমিরূপ পরিবর্তনকারী শক্তিগুলির মধ্যে অন্যতম হলো হিমবাহের সঞ্চয়কার্য। হিমবাহ অধ্যুষিত উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে ও পর্বতের পাদদেশে হিমবাহের সঞ্চয় কার্যের ফলে বিভিন্ন ধরনের বৈচিত্র্যপূর্ণ ভূমিরূপ সৃষ্টি হয়। সেগুলি হল-
A)উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে হিমবাহের সঞ্চয় কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপ☞উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে হিমবাহের সঞ্চয় কার্যের ফলে নিম্নলিখিত ভূমিরূপ গঠিত হয়-
১)গ্রাবরেখা☞উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে বিভিন্ন আকৃতির বিচ্ছিন্ন ও ক্ষয়প্রাপ্ত শিলাখণ্ড, নুড়ি, কাঁকড় ইত্যাদি হিমবাহের সঙ্গে সঞ্চিত হতে হতে নিচের দিকে এগিয়ে যায়। হিমবাহ বাহিত এই স্তূপাকারে সঞ্চিত পদার্থগুলিকে একত্রে গ্রাবরেখা বলে। হিমবাহ অধ্যুষিত পার্বত্য অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের গ্রাবরেখা দেখা যায়। প্রকৃতি ও অবস্থান অনুসারে গ্রাবরেখাকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন-
অ)পার্শ্ব গ্রাবরেখা☞হিমবাহের দু'পাশে যে গ্রাবরেখা সঞ্চিত হয়, তাকে পার্শ্ব গ্রাবরেখা বলে।
আ)প্রান্ত গ্রাবরেখা☞হিমবাহ যে স্থানে এসে শেষ হয় অর্থাৎ গলে যায় সেই স্থানে যে গ্রাবরেখা সঞ্চিত হয় তাকে প্রান্ত গ্রাবরেখা বলে।
ই)মধ্য গ্রাবরেখা☞দুটি হিমবাহের পাশাপাশি মিলনের ফলে তাদের মধ্যবর্তী অঞ্চলে যে গ্রাবরেখা সৃষ্টি হয়, তাকে মধ্য গ্রাবরেখা বলে।
ঈ)ভূমি গ্রাবরেখা☞হিমবাহের তলদেশে যে গ্রাবরেখা সঞ্চিত হয় তাকে ভূমি গ্রাবরেখা বলে।
উ)অবিন্যস্ত গ্রাবরেখা☞হিমবাহের অগ্রভাগে ইতস্তত বিক্ষিপ্ত ভাবে যে গ্রাবরেখা সৃষ্টি হয়, তাকে অবিন্যস্ত গ্রাবরেখা বলে।
ঊ)হিমাবদ্ধ গ্রাবরেখা☞সময় বিভিন্ন আকৃতির প্রস্তরখণ্ড, নুড়ি, কাঁকর প্রভৃতি হিমবাহের ফাটলের মধ্যে প্রবেশ করে আবদ্ধ হয়ে পড়ে। একে হিমাবদ্ধ গ্রাবরেখা বলে।
এ)রোজেন গ্রাবরেখা☞কয়েকটি গ্রাবরেখা পরস্পরের ওপরে বা স্তরে স্তরে সঞ্চিত হলে, তাকে রোজেন গ্রাবরেখা বলে।
ঐ)বলয়ধর্মী গ্রাবরেখা☞গ্রাবরেখা বলয়ের আকারে সঞ্চিত হলে, তাকে বলয়ধর্মী গ্রাবরেখা বলে।
উদাহরণ☞তিস্তা নদীর উচ্চ অববাহিকিয় লাচুং ও লাচেন অঞ্চলে এবং কাশ্মীরের লিডার ও কোলাহই নদীর উপত্যকায় গ্রাবরেখা দেখা যায়