জমি জরিপ ও রাজস্ব নির্ণয় ক্ষেত্রে ঔপনিবেশিক প্রশাসন কি কি পদক্ষেপ নিয়েছিল??
Answers
Answer:
ভূমি জরিপ কোন নির্দিষ্ট জনপদে একটি নির্ধারিত হারে রাজস্ব সংগ্রহের উদ্দেশ্যে জমির অবস্থান, তার প্রমিত পরিমাপ ও মালিকানা নির্ণয়ের জন্য পরিচালিত জরিপ। সুলতান শেরশাহের (১৫৪০-৪৫) শাসনামলে প্রথমবারের মতো উপমহাদেশে ভূমি জরিপের গুরুত্ব সবিশেষ মনোযোগ লাভ করে। শেরশাহ ভূমি পরিমাপ, ভূমির কর নির্ধারণ ও কর আদায়ের একটি নিয়মিত ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। তবে সম্রাট আকবরের অর্থ ও রাজস্ব মন্ত্রী তোডর মল (১৫৭১-৮২) জমির সঠিক কর নির্ধারণ, সেইসাথে জমির সর্বাঙ্গীণ জরিপ ও জমি পরিমাপের একটি একক ও অভিন্ন প্রমিতি প্রতিষ্ঠায় কার্যকর ও বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তাঁর কর নির্ধারণ ব্যবস্থার আওতায় বাংলা-বিহার-উড়িষ্যা সুবায় (প্রদেশে) জমির খাজনা বা ভূমিরাজস্ব ক্রমেই বৃদ্ধি পায়। এ সময় জমিতে উৎপন্ন ফসলের নির্ধারিত একাংশ হিসেবে খাজনা আদায় করা হতো। আর্থিক প্রশাসনের প্রধান হিসেবে দীউয়ান নিযুক্তির মাধ্যমে এই আমলের এক গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পরিবর্তন সাধিত হয়। তোডর মলের কর নির্ধারণ ব্যবস্থাটি ১৭৬৫ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলায় রাজস্ব ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের আগে পর্যন্ত প্রচলিত ছিল। তবে এর আগে, ১৬৮৫ ও ১৭৫০ সালে এ ব্যবস্থার কিছু কিছু উন্নতি সাধন করা হয়। তাত্ত্বিক দিক থেকে, আবাদি জমির পরিমাপ ও জমির মাটির শ্রেণীবিভাগ বা বিন্যাসের ভিত্তিতে কর নির্ধারণ করা হলেও বাংলা ও তার বাইরের প্রদেশগুলিতে বাস্তবিকপক্ষে কোন জরিপ পরিচালনা করা হয় নি। সে সময় বেশ বড় বড় এলাকা কৃষিখামার বা তালুক হিসেবে আমিল বা রাজস্ব সংগ্রাহকের নিয়ন্ত্রণে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। আপাতদৃষ্টে জমির কর নির্ধারণ ও সংগ্রহের বিষয়টি ছিল আমিলদের নিজস্ব ব্যবস্থার আওতায়। ১৭৬৯ সন পর্যন্ত এ ব্যবস্থা অপরিবর্তিত থাকে, এরপর সাবেক শাসকরা বাঙালি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ের কাজ দেখাশোনার জন্য তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ করে। ১৭৭২ সালে এসব তত্ত্বাবধায়ককে জেলায় জেলায় রাজস্ব সংগ্রাহক কর্মকর্তা বা রেভিনিউ কালেক্টর করা হয়।