India Languages, asked by mahreenmurshed, 5 hours ago

সেই দেমাক তার ভেঙে গেল কীভাবে?​

Answers

Answered by VeerendraViolet
0

তাকে যেটা রেহাই দিয়েছিল সেটা ছিল এই তথ্য যে, লোকগুলো তাকে খেয়ালই করেনি, যদিও মেয়েটির ভেতরে কিছু একটা, যতই তার ষোড়শ বছর ধীরে-ধীরে তার কাছে ওই উত্তাপ আর ধোঁয়ার মধ্যে এসে পৌঁছয় – কিছু একটা প্রবল বিস্ময়ে যেন ভরে যায় – যা হয়তো কোনো-কোনো পুরুষকে বিস্মিত করে যাবে। যেন কেউ হঠাৎ তার কাঁধ স্পর্শ করেছে। হয়তো কোনো ছায়া। মাটির ওপর একটি মেয়ের বিশাল ছায়া পুরুষবিহীন, এক অনিশ্চয়তা যেটা স্ফটিকের মতো স্বচ্ছ হয়ে উঠতে পারে, যেটা কোনো মস্ত জনসাধারণের উৎসবে বৈচিত্র্যবিহীন এক জ্যামিতি, যেন তারা তার কাঁধটাকে ছুঁয়েছে। তারা তার দিকে তাকিয়ে আছে কিন্তু তাকে দেখতেই পাচ্ছে না যে, বাস্তবতা আছে চারদিকে তার চাইতেও বড় এক ছায়া সে ফেলেছে। বাসের মধ্যে মজুরেরা চুপচাপ বসে আছে, তাদের লাঞ্চের প্যাকেটগুলো তাদের কোলের ওপর, ঘুম যেন এখনো তাদের মুখ-চোখের ওপর ঘুরে বেড়াচ্ছে। মেয়েটি লজ্জায় ভরে গেল, যেহেতু সে তাদের বিশ্বাস করেনি। পরিশ্রান্ত ঠিক যেমন এই মজুরেরা। কিন্তু যতক্ষণ না সে তাদের ভুলে যেতে পারে সে কেমন যেন অস্বস্তিবোধ করে। আসলে ‘তারা জানত’, আর যেহেতু সে নিজেও জানত আর সেজন্যেই তার মধ্যে এমন অস্থির অশামিত্ম। তার বাবাও জানতেন, আর এক বুড়ো যে বাইরে হাত পেতে ভিক্ষে চাইছে, সেও জানত। বিলিয়ে দেওয়া হলো ধনসম্পদ আর স্তব্ধতা।

পরে এক সৈনিকের মতো পা ফেলে সে বেরিয়ে এল কোনো

আঘাত ছাড়াই লাংগো-ডা-লাপায়, যেখানে দিনটা ফেটে পড়েছে, এখানটায় এসে যেন লড়াইটাকে প্রায় জিতেই নেওয়া গেছে। ট্রামে উঠে সে বেছে নিল একটা সিট, যেটা খালি পড়ে ছিল। যদি তা আদৌ সম্ভব হয় অথবা যদি তার বরাতটা ভালো থাকে, সে বসে পড়ল এক মহিলার পাশে যার কোলে কাপড়ের একটা বান্ডিল তাকে আশ্বস্ত করে দিল, কারণ উদাহরণত সেটাই প্রথম সন্ধের মুহূর্ত। একবার স্কুলে পৌঁছে গেলে, একে তো তবু মুখোমুখি পড়তে হবে লম্বা করিডোরটার, যেখানে তার সহপাঠীরা দাঁড়িয়ে থেকে একে অন্যের সঙ্গে কথা বলবে আর যেখানে তার জুতোর হিলগুলো এমন একটা গোলমেলে আওয়াজ করবে, যেটা তার অস্থির পাগুলো চেপে রাখতে পারবে না, যেন সে মিথ্যেই চেষ্টা করে যাচ্ছে তার ধুকপুক করে ওঠা হৃৎপি-টাকে শান্ত করে রাখার – ওই জুতোগুলো যেগুলোর মধ্যে আছে তাদের নিজেদের নৃত্যের ছন্দ-তাল। এক অস্পষ্ট স্তব্ধতা ফুটে বেরল ছেলেদের মাঝখান থেকে, যারা হয়তো বুঝতে পেরেছে, মেয়েটির অছিলার মধ্য থেকে যে-মেয়েটি, আসলে হয়তো একজন রুচিবাগীশ। সে তার সহপাঠীদের মাঝখানকার ছোট গলিটা দিয়ে বেরিয়ে গেল, যে-সহপাঠীরা এখন ভারিক্কি হয়ে উঠছে আর সেই ছাত্ররা হয়তো জানেই না, কী যে বলবে বা কী ভাববে। মেয়েটির জুতো থেকে যে-আওয়াজ উঠছিল সেটা এতই বিচ্ছিরি মেয়েটি তার সব গোপন কথা যেন ফাঁস করে দিল তার জুতোর কাঠের হিলগুলো দিয়ে। যদি করিডোরটা আরো একটু লম্বা হয়, যেন সে ভুলেই গিয়েছে তার নিয়তিকে, সে হয়তো ছুঁয়েই যাবে তার কানে তার হাতদুটো চেপে। তার তো ওই রকমই শক্ত জুতো আছে। জুতোগুলো যেন এখনো সেই রকমই আছে যেগুলো তারা তার পায়ে তার জন্মের সময় পরিয়ে দিয়েছিল। সে করিডোরটা পেরিয়ে এল, যেটাকে মনে হলো ওই স্তব্ধতারই মতো দুর্ভেদ্য। আর তার মুখ-চোখের অভিব্যক্তির মধ্যে এমন কিছু ছিল যেটা এত হিংস্র, আর দাম্ভিকও তার ছায়ার জন্যে – যে-কেউ তার সঙ্গে একটিও কথা বললে না। নিষেধে ভরা সে তাদের ভাবতেও বারণ করল।

অবশেষে সে তার ক্লাসঘরে এসে পৌঁছল। যেখানে হঠাৎ সবকিছু যেন অনাবশ্যক হয়ে পড়েছে। আর হয়ে উঠেছে আরো দ্রম্নতগতি আর হালকা-পলকা। যেখানে তার মুখটা এখন যেন খুলে দেখিয়ে দিল কয়েকটা তিল, তার চুল এসে পড়েছে তার চোখের ওপর আর যেখানে তাকে প্রায় একটা ছেলের মতোই ব্যবহার করা হলো। যেখানে সে ছিল বুদ্ধি-সুদ্ধিতে ভরা। তার নিজের কাজে প্রচুর দক্ষ। দেখে মনে হলো, সে বাড়িতে খুব পড়াশোনা করেছে। তার কৌতূহল তাকে বাতলে দিল সে যেসব প্রশ্নের জবাব দিয়েছে তার চাইতেও বেশি কিছু। সে গভীরভাবে ভেবে দেখল – তার ব্যথার তিক্ত স্বাদ – সে ভেবে দেখল মন্ত্রমুগ্ধের মতো তার বীতরাগ, যেটা তার সহপাঠীরা তার মাথার মধ্যে সৃষ্টি করে দিয়েছে। যারা, আরো একবার আদপেই বুঝতে পারেনি তার সম্বন্ধে কী যে বলবে। প্রতিবারই আরো যেন প্রতারক হয়ে উঠেছে, অনেক বেশি বুদ্ধিমতী। সে এখন শিখে গিয়েছে কেমন করে ভাবতে হয়। অত্যাবশ্যকীয় বিসর্জন : এইভাবেই ‘কেউ কোনো সাহসই পেল না’।

মাঝে-মাঝে, যখন শিক্ষক কথা বলছেন, সে প্রখর তীব্র আর একটু যেন গুটিয়ে গিয়ে, তার নিজের খাতার ওপর লিখছে। ছন্দে ভরা সব লেখা আঁকল। যদি কোনো রেখা যাকে একই সঙ্গে হতে হবে শক্ত আর নমনীয়, কাল্পনিক বৃত্তের থেকে যারা বাইরে যেখানে আসলে তাদের জায়গা হওয়ার কথা সবকিছুই যেন ধসে পড়বে। সে হয়ে উঠল আত্মমগ্ন আর শুধু, তার আদর্শের দ্বারা পরিচালিত। মাঝে-মাঝে লাইন টেনে যাওয়ার বদলে সে আঁকল তারাদের, তারাদের, তারাদের এতগুলো তারা যারা এত উঁচুতে আছে যে, সে বেরিয়ে এল এই কাজটার মধ্যে থেকে অবসন্ন হয়ে ওঠার ভবিষ্যদ্বাণী করে, তার ঘুমে ঢলেপড়া মাথাটাকে তুলে ধরে।

Please mark as brainliest

Similar questions