সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় এর আত্মজীবনী কি
Answers
Answer:
সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় এর জীবনী – SurendraNath Banerjee Biography in Bengali : স্বাধীনতার সূর্য ডােবার সঙ্গে শুরু হল ইংরেজ জাতির শাসন ও শােষণ আমাদের সােনার দেশ তার গৌরব হারাতে বসলাে ।
অনেক মনীষীই দেশে মান মর্যাদা ফিরিয়ে আনার সংকল্প নিলেন শুরু হলাে আন্দোলন ও সংগঠনের কাজ । এই সঙ্গে আর একজন মনীষীর নাম ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে আছে তার নাম সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় । তখন বাংলাদেশকে ভেঙে দুভাগে ভাগ করার চেষ্টা । চলছে । ইংরেজদের কূটনীতি বুঝতে পারলেন সুরেন্দ্রনাথ । সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় (SurendraNath Banerjee) এই অভিসন্ধির বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানালেন গড়ে তুললেন বিরাট আন্দোলন । এই আন্দোলনের নেতা সুরেন্দ্রনাথকেসবাই স্বীকার করে নিলেন । সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় (SurendraNath Banerjee) রাষ্ট্রগুরু এই আখ্যায় ভূষিত হলেন।সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় এর জন্ম ও পরিবার – SurendraNath Banerjee Birthday and Family :
১৮৪৮ খ্রিঃ ১০ ইনভেম্বর জন্ম হয় সুরেন্দ্রনাথের । বাবা দুর্গাচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় নাম করা ডাক্তার । সংসারে কোনাে অভাব ছিল না । এই সচ্ছল পরিবেশে সুরেন্দ্রনাথ বড়াে হতে লাগলেন ।সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় এর শৈশব ও শিক্ষাজীবন – SurendraNath Banerjee Childhood and Education Life :
ছেলেবেলা থেকেই তিনি ছিলেন মেধাবী পড়াশােনায় তার আগ্রহ ছিল প্রবল । স্কুল কলেজের প্রতিটি পরীক্ষায় তিনি খুব ভালাে ফল করতেন । তার মধ্যে লক্ষ্য করা যেত নিষ্ঠা ও সংকল্প । তাকে যে বড়াে হতেই হবে , তাই তিনি স্থির করলেন কলেজের পড়া শেষ করেই সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা দেবেন । তাহলেই তিনি শাসন বিভাগে উচ্চ পদ লাভ করতে পারবেন । কিন্তু তাকে এই পরীক্ষা দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হল না । তিনি নাকি বয়সের সীমা অতিক্রম করে গেছেন কিন্তু সুরেন্দ্রনাথ কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে রাজী হলেন না । তাই তিনি এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানালেন কিন্তু তাতে কোনাে কাজ হল না অবশেষে তিনি মামলা শুরু করলেন । এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিলাতের আদালতে শেষপর্যন্ত তিনি মামলায় জয়ী হলেন তারপর তিনি এই পরীক্ষায় বসার সুযােগ পেলেন ।
সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় এর কর্মজীবন – SurendraNath Banerjee Work Life :
সুরেন্দ্রনাথের পক্ষে এই পরীক্ষার উত্তীর্ণ হওয়া কঠিন হবে না । তিনি সীমিত সময়ের মধ্যেই সাফল্য লাভ করলেন। সরকারকে শ্রীহট্ট জেলার সহকারী জেলাশাসক পদে নিয়ােগ করলেন । তখন ওই জেলার শাসক ছিলেন সাদারল্যান্ড নামে একজন ইংরেজ । তিনি সুরেন্দ্রনাথকে খুব ভালাে চোখে দেখতে পারলেন না । কারণ , সুরেন্দ্রনাথ ছিলেন সাহসী নিউকিও সত্যবাদী । তাঁর স্বাধীন মনােভাব কখনােই কোনাে অন্যায়কে প্রশ্রয় দিত না । আর জেলাশাসক সাদারল্যান্ড এই কারণে সুরেন্দ্রনাথের সঙ্গে একমত হতে পারলে । সামান্য খুঁটিনাটি ব্যাপার নিয়ে প্রায়ই দুজনের মধ্যে গন্ডগোল বাধতাে । একদিন উভয়ের মধ্যে চরম মতভেদ দেখা দিল। সাদারল্যান্ড সুরেন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযােগ এনে মামলা দায়ের করলেন । ফলে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হলেন কিন্তু তাতে তিনি ভেঙে পড়লেন না বরঞ্চ অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের সংকন তারমধ্যে আরও দৃঢ় হল । সুরেন্দ্রনাথ যে তেজস্বী পুরুষ ছিলেন তা অনেক ঘটনা থেকে বােঝা যায় । তিনি অন্যায়ের প্রতিবাদে হাইকোর্ট বিচারপতির সমালােচনা করে প্রবন্ধ লিখলেন তখন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি ছিলেন নরিস সাহেব । তিনি অনেক কাজই অন্যায়ভাবে করতেন এবং এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কই ছিল সুরেন্দ্রনাথের লক্ষ্য । ইংরেজ সরকার যুবক সুরেন্দ্রনাথের ঔদ্ধত্যকে মেনে নিল না তার বিরুদ্ধে সরকার আদালতে মামলা শুরু করল বিচারে সুরেন্দ্রনাথের দু মাসের কারাদন্ড হল । তিনি হাসি মুখে কারাবরণ করলেন আর তার এই তেজবিতায় দেশবাসী খুশি হলেন । তারা বুঝলেন যে এই মানুষটির মধ্যে লুকিয়ে আছে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে দেশকে মুক্ত করবার নেতৃত্ব দেবার অসাধারণ ক্ষমতা ।সুরেন্দ্রনাথ এর মানুষের মধ্যে স্বাধীনতাবোধ ও মুক্তিচেতনা জাগিয়েতলার চেষ্টা :
তখন পরাধীনতা থেকে মুক্তি পাবার জন্যে দেশের মানুষ পাগল হয়ে উঠেছে । চারিদিকে অসন্তোষকে কাজে লাগাবার জন্য সুরেন্দ্রনাথ চেষ্টা করছিলেন । তাদের মনে স্বাধীনতাবােধ ও মুক্তিচেতনা জাগিয়ে তােলাই ছিল এই গণবিপ্লবের উদ্দেশ্য কাজটা খুব সহজ ছিল না । তাই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে স্বাধীনতার জয়গান গাইতে শুরু করেন অগণিত মানুষ মাঝে মাঝে বক্তৃতা ও প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করেন ।
সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় এর ভারতীয় কংগ্রেস দলের সুপ্রতিষ্ঠা – SurendraNath Banerjee Established The Congress party :
এর ফলে মানুষের মন নতুন প্রেরণা পেল । তাদের মধ্যে জাগলাে উৎসাহ ও উদ্যম । জাগরণের মন্ত্রে তারা খুঁজে পেল এক নতুন আদর্শের । তাদের নিয়ে সুরেন্দ্রনাথ তৈরি করলেন একটি সমিতি । তার নাম দেওয়া হল ‘ ভারতসভা বা ইন্ডিয়ান এসােসিয়েশন । এই সমিতি ক্রমে সুপ্রতিষ্ঠিত হল । পরবর্তীকালে তা হয়ে উঠলাে একটি বিরাট রাজনৈতিক দল — ভারতের জাতীয় কংগ্রেস ।সে সময়টা ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের কথা তখন বাংলাদেশে স্বাধীনতা আন্দোলন প্রবল হয়ে উঠছে দেখে তখনকার বড়লার্ট লর্ড কার্জন বাংলাদেশকে দু ভাগে ভাগ করার প্রস্তাব করলেন । শাসনকার্যের সুবিধার জন্যেই নাকি তিনি এই প্রস্তাব করছেন এমনই একটি ধারণা সকলের মনে গেঁথে দেওয়ার চেষ্টা করলেও দেশের মানুষ তার কুট উদ্দেশ্য বুঝতে পারলাে । সারা দেশে এই অন্যায় দেশ বিভাগের প্রতিবাদ তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠলাে । গড়ে উঠলাে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন আর সেই আন্দোলনের নেতা হলেন সুরেন্দ্রনাথ দেশের মানুষের মনকে তিনি জয় করে নিলেন ।
সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় রাষ্ট্রগুরু :
এই মহামানবের দৃঢ় সংকল্প দেখে ইংরেজ সরকার স্তম্ভিত হলেন বাধ্য হয়ে তারা বঙ্গভঙ্গের প্রস্তাব তুলে নিলেন । সার্থক হল সুরেন্দ্রনাথের স্বপ্ন তিনি যে সত্যই রাষ্ট্রগুরু ।
সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় এর মৃত্যু – SurendraNath Banerjee Death :
১৯২৫ খ্রিঃ ৬ ই আগস্ট এই মহান নেতা অমৃতলােকে যাত্রা করেন ।