1) দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি দরিদ্র মানুষের জীবনে একটি চরম অভিশাপ—এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন রচনা করাে।
Answers
Answer:
ভূমিকা :
আমাদের জীবনে অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের প্রাথমিক প্রয়ােজন না মেটাতে পারলে বেঁচে থাকা হয় অর্থহীন। খেয়ে-পরে সুস্থভাবে বাঁচতে পারলে তাে অন্য বিষয়ে মন দেওয়া সম্ভব। সাহিত্য, শিল্প, ধর্ম প্রভৃতির চর্চা করতে গেলেও তাে চাই অন্ন-বস্ত্র। সিদ্ধ-সাধকও বলতে দ্বিধা করেননি যে, খালি পেটে ধর্ম হয় না। আমাদের শাস্ত্রে তাই ব্রহ্মকে ‘অন্নময় বিশেষণ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই অন্নময় মানুষের সত্তাকে টিকিয়ে রাখার জন্য যে সব দ্রব্যের প্রয়ােজন, তাদের অভাব দেখা দিলে বেঁচে থাকাই হয় অসাধ্য। দ্রব্যমূল্য উত্তরােত্তর বেড়ে চললে এইসব দ্রব্য সাধারণ দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষের পক্ষে সংগ্রহ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। জীবন হয়ে ওঠে ‘শুধু দিন যাপনের গ্লানিতে পূর্ণ।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পরিচিত দৃষ্টান্ত
প্রায় প্রতি বছরই কতকগুলি অত্যাবশ্যক জিনিসের দাম বেড়ে যায়। একটি পরিচিত দৃষ্টান্ত ভােজ্য তেলের আকস্মিক মূল্যবৃদ্ধি এবং অভাব। হঠাৎ শােনা গেল, পশ্চিমবঙ্গে সরষের তেল পাওয়া যাচ্ছে না, ব্যবসায়ীরা অস্বাভাবিক দাম নিচ্ছে। সরকার কিলাে প্রতি পঁচিশ টাকা দাম বেঁধে দিলেন, কিন্তু বাজারে সেই দামে তেল পাওয়া তাে দূরের কথা, জিনিসটিই হয়ে গেল উধাও। তারপর অবশ্য সরকার বিকল্প কিছু ভােজ্য তেলের ব্যবস্থা করায় সরষের তেল বাজারে আবার মিলছে, কিন্তু কবে আবার নিরুদ্দেশের পথে পাড়ি দেবে কে জানে। হঠাৎ একদিন শােনা গেল, নুন পাওয়া যাচ্ছে না। দোকানে দোকানে ক্রেতার লাইন পড়ে গেল। কিলাে-প্রতি যে নুনের দাম ছিল চল্লিশ পয়সা, হঠাৎ তা দেড় টাকা, দুটাকা দামে বিক্রি করে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে দোকানদাররা হাজার হাজার টাকা লাভ করে বসলাে। এমনি ক্রেতার লাইন মাঝে মাঝে কেরােসিনের বেলাতেও দেখা যায়। সরকার নির্ধারিত মূল্য দুটাকা আটত্রিশ পয়সার বদলে তিন টাকা, চার টাকা, পাঁচ টাকা দরেও মানুষকে কেরােসিন কিনতে হয়। এইভাবে মাঝে মাঝে চালের দামও বেড়ে যায়। বাজার থেকে চাল পাওয়া কঠিন হয়। এর ফলে সাধারণ মানুষের অন্নগত প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে ওঠে।
উপসংহার
এই সমস্ত উপায় অবলম্বনের মূল উদ্দেশ্য হবে জনসাধারণের কষ্ট লাঘব করা। মানুষকে খেয়ে-পরে সুস্থভাবে বাঁচার প্রয়ােজনীয় উপকরণ সহজভাবে লাভ করতে দিতে হবে। আধুনিক কল্যাণরাষ্ট্রের প্রাথমিক কর্তব্যই হচ্ছে নাগরিকের কল্যাণের দিকে নজর দেওয়া। শুধু তাই নয়, সকল শ্রেণীর মানুষকেও এগিয়ে আসতে হবে জীবনধারণের মৌলিক অধিকার অর্জনের নিরন্তর প্রয়াসের শামিল হওয়ার জন্য।