পূর্ব ভারতের লৌহ ইস্পাত শিল্প গড়ে ওঠার কারণ 10
Answers
Explanation:
ভারতের বেশির ভাগ লৌহ ইস্পাত শিল্প কেন্দ্র গুলি প্রধানত পূর্ব ও মধ্য ভারতের ছোটনাগপুর মালভূমি অঞ্চলের অন্তর্গত ঝাড়খণ্ড, ছত্তিশগড়, ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গে গড়ে উঠেছে। ভারতে স্বাধীনতার পূর্বে যে তিনটি শিল্প কারখানা গড়ে ওঠে তার মধ্যে দুটিই ( TISCO ও IISCO ) পূর্ব ভারতেই গড়ে ওঠে এবং স্বাধীনতার পরবর্তী কালেও বেশ কিছু কারখানা এই অঞ্চলেই গড়ে উঠেছিল। মধ্য ও পূর্ব ভারতের প্রধান প্রধান লৌহ ইস্পাত শিল্প কেন্দ্র গুলি হল - বোকারো, ভিলাই, জামসেদপুর, দূর্গাপুর, বানপুর, রৌরকেল্লা, দ্বৈতারি প্রভৃতি। পূর্ব ও মধ্য ভারতে লৌহ ইস্পাত শিল্পের কেন্দ্রীভবনের কারণ গুলি হল -
কাঁচামালের জোগান - লৌহ ইস্পাত শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল যেমন - আকরিক লোহা, কয়লা, চুনাপাথর, মাঙ্গানিজ প্রভৃতি এই অঞ্চলে প্রচুর পরিমানে পাওয়া যায়। যেমন -
আকরিক লৌহ ক্ষেত্র - দেশের প্রায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ লৌহ আকরিক মধ্য ও পূর্ব ভারতের এই রাজ্য গুলিতে পাওয়া যায়। প্রধান প্রধান লৌহখনি গুলি হল - ওড়িশার বাদামপাহাড়, কিরিবুরু, গোরুমহিষানী, সুন্দর গড়; ছত্তিসগড়ের দাল্লিরাজহারা, বায়লাডিলা; ঝাড়খন্ডের ডালটনগঞ্জ, নোয়ামুন্ডী প্রভৃতি খনি অঞ্চলে প্রচুর পরিমানে হেমাটাইট ও ম্যাগনেটাইট শ্রেনির আকরিক লোহা পাওয়া যায়।
কয়লা উৎপাদক অঞ্চল - ছোটনাগপুর অঞ্চলে গন্ডোয়ানা যুগের বিটুমিনাস শ্রেনির কয়লা প্রচুর পরিমানে সঞ্চিত আছে। এই বিটুমিনাস শ্রেনির কয়লা থেকে ভালো মানের কোক উৎপাদিত হয়। প্রধান প্রধান কয়লা খনি অঞ্চল গুলি হল - ঝাড়খন্ডের গিরিডি, ঝরিয়া; ছত্তিশগড়ের কোরবা; ওড়িশার তালচের এবং পশ্চিমবঙ্গের রানিগঞ্জ, আসানসোল প্রভৃতি অঞ্চল থেকে সংগৃহীত কয়লা লৌহ ইস্পাত শিল্প কেন্দ্র গুলিতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
অন্যান্য কাঁচামাল - লৌহ ইস্পাত শিল্পের প্রয়োজনীয় অন্যান্য কাঁচামাল , যেমন - চুনাপাথর, ডলোমাইট, মাঙ্গানিজ প্রভৃতি এই অঞ্চলের খনি অঞ্চল থেকে অতি সহজেই পাওয়া যায়।
উন্নত পরিবহন - এই শিল্পাঞ্চলটি্র সড়ক পথ ও রেল পথ ব্যবস্থা অনেক উন্নত। জালের মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রেলপথ ও সড়ক পথের মাধ্যমে শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল যেমন সহজেই খনি অঞ্চল থেকে শিল্প কেন্দ্রে নিয়ে আসা সম্ভব হয়, তেমনি উৎপাদিত দ্রব্য দেশের বাজারে অনায়াসে পৌছে দেওয়া যায়।
বন্দরের নৈকট্য- এই শিল্পাঞ্চলের পাশেই রয়েছে দুটি বিখ্যাত বন্দর- পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা ও ওড়িশার পোরবন্দর। যার দ্বারা অস্ট্রেলিয়া, জাপান, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে শিল্পের কাঁচামাল ও উন্নত যন্ত্রপাতি আমদানি এবং উৎপাদিত লৌহ ইস্পাত বিদেশে সহজেই রপ্তানী করা যায়।
বিদ্যুতের জোগান - লৌহ ইস্পাত শিল্পে প্রচুর পরিমানে বিদ্যুতের দরকার পড়ে। যা এই অঞ্চলে প্রাপ্ত কয়লা থেকে উৎপাদিত বিপুল পরিমানে তাপবিদ্যুৎ থেকে সরবরাহ করা হয়। এছাড়া DVC তে উৎপাদিত জলবিদ্যুৎ এই অঞ্চলের লৌহ ইস্পাত কেন্দ্র গুলিতে ব্যবহার করা হয় বলে শিল্পের প্রয়োজনীয় বিদ্যুতের অভাব হয় না।
সুলভ স্বচ্ছ জলের জোগান - অন্যান্য শিল্পের মতো ইস্পাত শিল্পেও প্রচুর পরিমানে স্বচ্ছ জলের দরকার হয়। যা এই অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত দামোদর, সূবর্নরেখা, মহানদী ও তাদের অসংখ্য শাখানদী গুলি থেকে পাওয়া যায় বলে জলের কোন অভাব হয় না ।
চাহিদা ও বাজার - দেশের মানুষের অথনৈতিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে, তাছাড়া দেশের পরিকাঠামো গত উন্নতি ঘটানোর প্রয়োজনেও প্রচুর পরিমানে ইস্পাতের দরকার পড়ছে। ভারত বিশ্বের জনবহুল দেশ হওয়ায় এই শিল্পের উৎপাদিত দ্রব্যের অভ্যন্তরীণ চাহিদা র সাথে সাথে প্রচুর বৈদেশিক চাহিদাও রয়েছে। যা এই শিল্পের বিকাশে সাহায্য করেছে।
সুলভ ও দক্ষ শ্রমিক - এই অঞ্চলটি অন্যতম জনবহুল দেশ হওয়ায় শিল্পের প্রয়োজনীয় দক্ষ, অদক্ষ ও সুলভ শ্রমিকের অভাব হয় না ।
এই সব সুযোগের উপস্থিতি ভারতের এই অঞ্চলে এই লৌহ ইস্পাত শিল্পের বিকাশে যথেষ্ট সাহায্য করে।