India Languages, asked by dhittika90, 1 month ago

মনে করো তুমি গুপি গাইন কে হতো তোমার পছন্দের বাঘা বাইন এবং ভূতের রাজার তিনটি বর পেলে তুমি কি কি চাইতে এবং কেন (250 words) ​

Answers

Answered by guddiaupendra1
2

ছেলেবেলায় একটু একগুঁয়েমো প্রায় সকলেরই থাকে। আমার কথা শুনিয়া কেহ চটিবেন না। চটিলেও বড় একটা অসুবিধা বোধ করিব না। অনেকের অভ্যাস আছে, তাহারা খাঁটি কথা শুনিলে বিরক্ত হয়, কিন্ত কাহাকেও বিরক্ত করা আমার উদ্দেশ্য নহে। আমার নিজের দশা দেখিয়াই আমি উপরের কথাগুলিতে বিশ্বাস স্থাপন করিয়াছি।

ছেলেমানুষের একটা রোগ আছে। অনেক কাজ তাহারা আপনা আপনি করিয়া অন্য লোককে বিরক্ত করে, আবার যদি কেহ সেই কাজ তাহাদিগকে করিতে বলিল, অমনি সেই কাজের মিষ্টতাটুকু তাহাদের নিকট হইতে চলিয়া যায়। দাদা প্রথমে বই পড়িতে শিখিয়াছে, তাহার বইয়ে সুন্দর সুন্দর ছবি। পড়িবার সময় দাদা বই খুঁজিয়া পাইত না। আমার চোখে পড়িলেই আমি বইখানা হস্তে করিয়া, কেহ খুঁজিয়া না পায় এমন জায়গায় যাইয়া বসিতাম। শেষে, একদিন শুনিলাম ঐ বইখানা আমারও পড়িতে হইবে। আমার আনন্দের সীমা রহিল না; তখন দৌড়িয়া যাইয়া সঙ্গীদের সকলকে খবরটা দিয়া আসিলাম। পরদিন মাষ্টার আসিলেই বই হাতে করিয়া হাজির। মনে করিলাম, প্রথম ছবিটার কথা আজ হইবে। মাষ্টার প্রথমে ছবির পাতে একটুও আসিলেন না-ছবিশূন্য একটা পাতা উল্টাইয়া, এ, বি, সি, ডি করিয়া কি বলিতে লাগিলেন। তখন হইতে আর সে বই আমার ভাল লাগিল না।

দাদা স্কুলে যাইবার সময় মাঝে মাঝে আমাকে সঙ্গে করিয়া নিয়া যাইত। দাদাদের মাষ্টার বড় ভালমানুষ। আমি মনে করিলাম, ইস্কুলের সকল মাষ্টারই বুঝি ঐরূপ। বাড়িতে তিন বছর থাকিয়া কয়েকখানা বই শেষ করিলাম। তাহার পর আমাকেও স্কুলে পাঠাইয়া দিল। কয়েক বছর পর বেশ চলিতে চলিতে লাগিলাম; কিন্ত মাষ্টারকে আর তত ভাল লাগে না। কবে বড়মানুষ হইয়া ইস্কুল ছাড়িয়া দিব, এই চিন্তাটা বড় বেশী মনে হইত। তখন তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ি, ইংরেজী যে কয়েকখানা বই পড়িয়াছিলাম, তাহার একখানিতে এক সাহেবের কথা লেখা ছিল। তিনি বাড়ি ছাড়িয়া বিদেশে গিযাছিলেন, সেখানে অনেক কষ্ট ভোগ করিয়া শেষটা অনেক টাকা করিয়াছিলেন। সাহেব যে বয়সে ছাড়িয়াছিলেন, মিলাইয়া দেখিলাম আমারও এখন ঠিক সেই বয়স। তবে আর কি চাই! ক্লাসে সতীশের সঙ্গে আমার বড় ভাব; আমি সতীশের সঙ্গে মনের কথাগুলি খুলিয়া বলিয়া ফেলিলাম। কথা শুনিয়া সতীশ যেন আর তার ছোট শরীরটির মধ্যে আঁটে না। তখনই সে লাফাইয়া উঠিল। বোধ হইল বাড়ি হইতে বিদেশে চলিয়া গেলেই বড়লোক হওয়া যাইবে। সতীশ বলিল, ‘কালই চল’। কাল চলাটা তত সহজ বোধ হইল না। কিন্তু বেশী দেরী করা হইবে না, সেটা ঠিক করা হইল।

একদিন স্কুল হইতে ছুটি পাইয়া বাড়ি আসিলাম; সতীশও আসিল। বাবা বাড়ি ছিলেন না। বাড়ির অন্যান্য লোকও চুপ করিয়া বিশ্রাম করিতেছিল। চুপি চুপি কয়েকখানা কাপড় দিয়া একটি পুটঁলি বাঁধিলাম। তারপর বাবার বাক্স হইতে কতকগুলি টাকা লইয়া দুজনে চোরের মত বাড়ির বাহির হইলাম। পাছে কেহ আসিয়া ধরে, সেই ভয়ে দুজনে মাঝে মাঝে দৌড়াইতে লাগিলাম। এইরূপে স্যা পর্যন্ত হাঁটিয়া এক বাড়িতে যাইয়া উঠিলাম।

সেই বাড়ির কর্তা আমাদের অবস্থা দেখিয়া বড় দুঃখিত হইলেন। আমাদের সম্বন্ধে যা যা কথা সমস্ত জিজ্ঞাসা করিতে লাগিলেন। আমরা কোন কথারই ঠিক উত্তর দিই নাই। স্থানে স্থানে দু-একটি কথা গড়িয়া কহিতে হইল। তিনি আমাদের কথায় বুঝিয়া লইলেন যে, আমরা দুজন পথ হারাইয়া ঘুরিতেছি। বলিলেন, ‘কাল আমি একজন লোক দিয়া তোমাদের দুজনকে বাড়ি পাঠাইয়া দিব।’

খাইবার সময় ভদ্রলোকটি আমাদের সম্মুখে বসিয়া থাকিলেন, আহার শেষ না হওয়া পর্যন্ত উঠিলেন না। একটি কুঠুরিতে আমাদের দুজনের ঘুমাইবার বন্দোবন্ত করিয়া দেওয়া হইল। সেখানে আর কেহ ঘুমাইতে আসিল না। আমি কিছু সুবিধা বোধ করিলাম। ভাবিলাম কর্তা যাহা বলিলেন তাহা কাজে করিলে আর বড়লোক হওয়া হইবে না; সুতরাং কেহ জাগিবার পূর্বে কর্তাকে ধন্যবাদ না দিয়া চলিয়া যাওয়া ঠিক হইল। সতীশকে ডাকিলাম, ‘সতীশ! সতীশ!’-সতীশ কথা কয় না। সতীশের চক্ষে জল পড়িতেছে। কর্তার কথায় সতীশের মন ফিরিয়া গেল নাকি? বাস্তবিকই তাই, অনেক পীড়াপীড়ি করার পর বলিল, ‘আমি তোমার সঙ্গে যাইব না।’ আপনারা কি মনে করিতেছেন? সতীশের কথা শুনিয়া আমার মনের ভাব কিপ্রকার হইল? বড়লোক হওয়ার ইচ্ছাটা আমার এত বেশী হইয়াছিল যে, বাড়ি ছাড়িয়া অবধি আমার বোধ হইতেছিল-যেন বড়লোকের কাছাকাছি একটা কিছু হইয়াছি। সতীশকে আমি কাপুরুষ মনে করিতে লাগিলাম। সতীশের মা বাপ আছে, আমারও মা বাপ আছেন। প্রভেদ এই যে, আমি স্বার্থপর; সতীশ তাহা নহে। সতীশের মনে যে-সকল চিন্তা উঠিতেছিল, আমার অন্তঃকরণে তাহা স্থান পাইল না। আমি সতীশের অবস্থা বুঝিতে পারিলাম না। মা বাপের মনে কষ্ট দেওয়া আমার ইচ্ছা ছিল না; কিন্ত নিজের কথা লইয়া এত ব্যস্ত ছিলাম যে তাঁহাদের কথা ভাবিবার অবসরই পাই নাই। নানা চিন্তার মধ্যে ঘুম আসিল।

Similar questions