Art, asked by achinta01, 1 year ago

' সভ‍্যতার প্রতি ' কবিতায় রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের কল্পনার একাল ও সেকাল (about 100 words)​

Answers

Answered by sandhya962
0

Answer:

বাংলা ভাষার সর্বকালের সেরা কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালির চিরকালের বাতিঘর। সাহিত্যের সব শাখায় তিনি সোনা ফলিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিশীল জীবন বিশাল ও বৈচিত্র্যময়। তিনি ছিলেন কবি, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, অভিনেতা, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, প্রাবন্ধিক, কণ্ঠশিল্পী, দার্শনিক ও প্রকৃতি-পরিবেশপ্রেমী।

বাংলা সাহিত্যকে দুই হাত ভরে দিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আমরা এখন যা ভাবছি, শত বছর আগে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একইভাবে বলে গেছেন। তাঁর চিন্তা, কথা ও লেখনীতে তিনি তখন এখনকার সময়কে যেন দেখতে পেয়েছিলেন, ধারণ করতে পেরেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের লেখনী আর কর্মনিষ্ঠার আলোকে বলতে গেলে তিনি ছিলেন একজন পরিবেশবাদীও!

বিশ্বকবি প্রকৃতি-পরিবেশ ভাবনা ও সচেতনতার মাধ্যমে শুধু নয়, তিনি বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে একনিষ্ঠ প্রকৃতি-পরিবেশকর্মী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের প্রবন্ধে, ছোটগল্পে, কবিতায়, নাটকে সর্বোপরি শিল্পচিন্তা ও চেতনায় প্রকৃতি অন্যতম অনুষঙ্গ হিসেবে স্থান পেয়েছে। রবীন্দ্রনাথের পরিবেশবাদী প্রবন্ধগুলো হলো ‘পল্লী প্রকৃতি’, ‘ভূমিলক্ষ্মী’, ‘দেশের কাজ’, ‘শ্রীনিকেতন’, ‘পল্লী সেবা’, ‘উপেক্ষিতা পল্লী’, ‘শহর ও নগর’, ‘বিলাসের ফাঁস’, ‘অরণ্য দেবতা’, ‘হলকর্ষণ’, ‘তপোবন’ ইত্যাদি। কবিতার মধ্যে রয়েছে ‘দুই পাখি’, ‘বসুন্ধরা’, ‘প্রশ্ন’, ‘সভ্যতার প্রতি’, ‘দুই বিঘা জমি’, ‘বৃক্ষ’ ইত্যাদি। তাঁর গীতিনাট্য: ‘রক্তকরবী’ ও ‘মুক্তধারা’ এবং তাঁর চিঠিপত্র ‘ছিন্নপত্রাবলী’তে গভীর পরিবেশ ভাবনা ও সচেতনতা স্থান পেয়েছে। এ ছাড়া ‘বলাই’সহ তাঁর বিভিন্ন ছোটগল্পে ও গানে পরিবেশ-প্রকৃতির বন্দনা উঠে এসেছে।

১৯১৪ সালে জাপান যাওয়ার সময় সমুদ্রপথে তেল নিঃসরণের বিষয়টি দেখে তিনি প্রথম পরিবেশের ওপর মানুষের প্রভাব নিয়ে চিন্তিত হন বলে জানা যায়। তিনি পরিবেশ সংকটের প্রধান কারণ হিসেবে মানুষের লোভ ও অপরিকল্পিত নগরায়ণকে দায়ী করেছেন। ১৯২৫ সালে শান্তিনিকেতনে পঁচিশে বৈশাখ কবির জন্মোৎসবে বৃক্ষরোপণ উপলক্ষে সেদিন তাঁর সদ্য রচিত গান গাওয়া হয়। যেখানে তাঁর পরিবেশসচেতনতা দারুণভাবে ফুটে ওঠে। গানটি হলো, ‘মরুবিজয়ের কেতন উড়াও শূন্যে হে প্রবল প্রাণ/ ধূলিরে ধন্য করো করুণার পুণ্যে হে কোমল প্রাণ।...’ তিনি জানতেন প্রকৃতির ওপর মানুষের এই অপরিসীম লোভ আর ক্ষুধা কখনো শেষ হবে না! তাই ‘প্রশ্ন’ কবিতায় কবি সৃষ্টিকর্তার কাছে বিচারের ভার তুলে ধরেছেন এভাবে, ‘যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,/ তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?’

রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘বলাই’ নামক ছোটগল্পে পরিবেশ ও প্রকৃতির প্রতি যে অনুরাগ সৃষ্টি করেছেন, তা অনন্য। ‘সভ্যতার প্রতি’ কবিতায় কবি শহুরে জীবনের প্রতি একপ্রকার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর,/ লও যত লৌহ লোষ্ট্র কাষ্ঠ ও প্রস্তর/ হে নবসভ্যতা! হে নিষ্ঠুর সর্বগ্রাসী,/ দাও সেই তপোবন পুণ্যচ্ছায়ারাশি...।’

রবীন্দ্রনাথ তাঁর সাহিত্যকর্মে গাছ, পাখি, প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় যে অগ্রগণ্য চিন্তার খোরাক রেখে গেছেন, তা বর্তমান সময়ের আধুনিক লেখকেরা আরও সোচ্চার হয়ে লেখার তাগিদ অনুভব করছেন। এর ফলশ্রুতিতে রোমান্টিক কবিতার আধুনিক রূপ ইকো-কবিতার উদ্ভব হয়েছে। এখন যে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবে ভুগছে বিশ্ব, উষ্ণায়ন নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে, মাত্রাতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণ হচ্ছে, তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তা অনেক আগেই টের পাওয়া গিয়েছিল। প্রকৃতির শক্তিকে মানুষ যে অন্যায়ভাবে ব্যবহার করে পৃথিবীকে ভারসাম্যহীন করে তুলেছে, রবীন্দ্রনাথ সে কথাও শতবর্ষের আগে বলে গেছেন। আর এই ভারসাম্যের ব্যাঘাতের জন্যই আজ বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবে ভুগছে। তাই কবির মৃত্যুর এত দিন পরও রবীন্দ্রসাহিত্যের প্রাসঙ্গিকতা আরও বেড়েছে। মানুষ প্রকৃতি-পরিবেশের ওপর খবরদারি করুক এটা কবি চাননি। কবিগুরু মানুষের সঙ্গে পরিবেশ ও প্রকৃতির ভারসাম্যপূর্ণ সহাবস্থানের কথা বলে গেছেন। মানুষ এখন সবকিছু অস্বীকার করে পৃথিবী নামক এই ছোট্ট গ্রহটিকে কেবল নিজেদের জন্যই ভাবছে! গাছের ছায়া, ময়ূরের নাচন, কোকিলের ডাক, প্রশান্তিময় সকাল, বিকেলের সোনারোদ ইত্যাদি মানুষ যেন আজ হারিয়ে ফেলতে ব্যস্ত! এমনটি এখন আমাদের মতো বিশ্ব কবিও চাননি। বিশ্বকবির বিখ্যাত পঙ্‌ক্তিমালা, ‘মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে,/ মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই।/ এই সূর্যকরে এই পুষ্পিত কাননে/ জীবন্ত হৃদয়- মাঝে যদি স্থান পাই।’ সত্যিই সৃষ্টির মাধ্যমে বিশ্বকবি তাঁর নশ্বর জীবনকে অবিনশ্বর করে গেছেন। তাই রবীন্দ্রনাথকে শুধু শিক্ষিত মননশীল শ্রেণিতে আবদ্ধ না রেখে সমগ্র বাঙালি জাতির হৃদয় জুড়ে তো বটেই, সমগ্র পৃথিবীতে তার কথা, মর্মবাণী, লেখনী ছড়িয়ে দিতে হবে। কেননা আমাদের সার্বিক জীবনের খোরাক মেটাতে তাঁর কাছে যেতেই হবে। এই মানবতাবাদী সাহিত্যিকের কাছ থেকে মানুষের জানার কখনো শেষ নেই!

Similar questions