Class 9 Bangla Assignment :- 'অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে মানবিক সমাজ গঠনে যে প্রতিবন্ধকতাসমূহ রয়েছে তা কীভাবে দূর করা যেতে পারে বলে তুমি মনে কর? যৌক্তিক মত উপস্থাপন কর।
Answers
'অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে মানবিক সমাজ গঠনে যে প্রতিবন্ধকতাসমূহ রয়েছে তা কীভাবে দূর করা যেতে পারে বলে তুমি মনে কর? যৌক্তিক মত উপস্থাপন কর।
মানবিকতার মূলমন্ত্র হলাে মানুষের কল্যাণ, জাতির কল্যাণ সমাজের কল্যাণ। মােটকথা মানুষের ভলাে, মানুষের জন্য ভালাে কিছু করা, মানুষের উন্নতি সাধন করাই মানবিকতা।
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে মানবিক সমাজ গঠনে যে প্রতিবন্ধকতাসমূহ তুলে ধরা হয়েছে তা নিম্নে বর্ণনা করা হলোঃ
'অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে সামন্তবাদের নির্মম রূপ ও নীচ শ্রেণীর হতদরিদ্র মানুষের দুঃখ-কষ্ট ও যন্ত্রণার ছবি ফুটে উঠেছে। অভাগীর মৃত্যুর পর পুত্র কাঙালী মায়ের সৎকারের প্রয়োজনীয় কাঠের জন্য সমাজের উঁচু শ্রেণীর লোকের নিকট যায়। কিন্তু তারা কাঙালীকে কাঠতো দেয়ইনি, উপরন্তু ভর্ৎসনা, তিরস্কার, অবজ্ঞা, অবহেলা, গলা ধাক্কা প্রভৃতি তাকে সহ্য করতে হয়েছে। সমাজে সর্বদাই উঁচু শ্রেণীর মানুষ কর্তৃক নীচু শ্রেণীর মানুষেরা শোষণ-বঞ্চনার শিকার হয়। সমাজের এই শ্রেণি বৈষম্য, শােষকের শােষণ, সামাজিক মর্যাদার মতভেদ লেখক তাঁর দরদি ভাষায় ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে উপস্থাপন করেছেন।
প্রতিবন্ধকতাসমূহ দূর করার উপায়সমূহঃ
১। শ্রেণি বৈষম্য দূরীকরণঃ
সমাজের সবাই সমান। সমাজে কোন উঁচুনিচু বা শ্রেণি বৈষম্য থাকবেনা। যে বুদ্ধি আমরা বিভিন্ন ধরনের জ্ঞানের মাধ্যমে অর্জন করি তা এই শ্রেণি বৈষম্য দূরীকরণে কাজে লাগাতে হবে। ধর্মীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ শক্তিশালী করার মাধ্যমে আমরা শ্রেণি বৈষম্য দূর করতে পারি।
২। যথােপযুক্ত শাসনব্যবস্থাঃ
বর্তমান যুগে সঠিক শাসন ব্যবস্থা শোষকের শোষণ থেকে রক্ষা করতে বিশাল ভূমিকা পালন করে। একটি সুন্দর মানবিক সমাজ গঠনে আইনের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে কার্যকরী শাসনব্যবস্থা চালু থাকলে শুধু সমাজ নয় বরং সারা পৃথিবীকে মানবিক করে তােলা সম্ভব।
৩। শাসন ব্যবস্থার স্বচ্ছতাঃ
সমাজে যারা শাসক গােষ্ঠী রয়েছে অর্থাৎ যারা সমাজে নীতি নির্ধারক তারা যদি সমাজের মানুষের উপকারে তাদের শাসন করে তবে সে সমাজ মানবিক হতে বাধ্য। শাসনের নামে শােষণ হলে শােষিত মানুষের মাঝে সবসময় ক্ষোভ বিরাজ করে।
৪। সুষম বিচার ব্যবস্থাঃ
যে সমাজে বিচার ব্যবস্থা সুষম অর্থাৎ ন্যয়বিচার রয়েছে সে সমাজ কে আমরা মানবিক বলতে পারি। একটা সমাজে যদি অন্যায় অপরাধের সঠিক বিচার হয়, বিচার ব্যবস্থা যদি পক্ষপাতদুষ্ট না হয় তখনই সমাজের বসবাসরত মানুষ নিজেদেরকে নিরাপদ ও সুরক্ষিত ভাবতে পারবে। আর এতেই মানবিক সমাজ গঠনের পথটা সুগম হয়ে যাবে।
৫। ধর্মীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ শক্তিশালীকরণঃ
একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সমাজে যেন সবাই নিজের মত করে বাঁচতে পারে। নিজস্ব ধর্মীয় আচার আচরণ পালন করতে পারে। নিজের মতামত স্পষ্ট করে প্রকাশ করতে পারে সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। একটা মানুষ যখন মনে করে যে এই সমাজে তার নিজস্বতা আছে তখন সে স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশ করতে পারে। সামাজিক মূল্যবােধ চর্চা করতে হবে। সমাজের প্রতিটি মানুষের মাঝে সামাজিক মূল্যবােধ কে জাগিয়ে তুলতে হবে।
উপরোক্ত বিষয় সমুহ যতগুলো গুণ যথোপযুক্ত প্রয়োগের মাধ্যমে মানবিক সমাজ গঠনে উত্থাপিত সমস্যা গুলো বা প্রতিবন্ধকতাগুলো দূরীকরণে যথাযথ ভূমিকা পালন করবে বলে আমার বিশ্বাস। এর মাধ্যমে সমাজে শান্তি শৃঙ্খলা এবং সামাজিকতা বিরাজমান থাকবে।