History, asked by aksa623, 10 months ago

Durga Puja essay in Bengali

Answers

Answered by mehek2440
9

Answer:

দুর্গাপূজা বা দুর্গোৎসব হল হিন্দু দেবী দুর্গার পূজাকে কেন্দ্র করে প্রচলিত একটি উৎসব। দুর্গাপূজা সমগ্র হিন্দুসমাজেই প্রচলিত। তবে বাঙালি হিন্দু সমাজে এটি অন্যতম বিশেষ ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব। আশ্বিন বা চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষে দুর্গাপূজা করা হয়। আশ্বিন মাসের দুর্গাপূজা শারদীয়া দুর্গাপূজা এবং চৈত্র মাসের দুর্গাপূজা বাসন্তী দুর্গাপূজা নামে পরিচিত। শারদীয়া দুর্গাপূজার জনপ্রিয়তা বেশি। বাসন্তী দুর্গাপূজা মূলত কয়েকটি পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ।

দুর্গাপূজা ভারত, বাংলাদেশ ও নেপাল সহ ভারতীয় উপমহাদেশ ও বিশ্বের একাধিক রাষ্ট্রে পালিত হয়ে থাকে। তবে বাঙালি হিন্দু সমাজের প্রধান ধর্মীয় উৎসব হওয়ার দরুন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও ঝাড়খণ্ড রাজ্যে ও বাংলাদেশে দুর্গাপূজা বিশেষ জাঁকজমকের সঙ্গে পালিত হয়। এমনকি ভারতের অসম,বিহার, ঝাড়খণ্ড,মণিপুর এবংওড়িশা রাজ্যেও দুর্গাপূজা মহাসমারোহে পালিত হয়ে থাকে। ভারতের অন্যান্য রাজ্যে প্রবাসী বাঙালি ও স্থানীয় জনসাধারণ নিজ নিজ প্রথামাফিক শারদীয়া দুর্গাপূজা ও নবরাত্রি উৎসব পালন করে। এমনকি পাশ্চাত্য দেশগুলিতে কর্মসূত্রে বসবাসরত বাঙালিরাও দুর্গাপূজা পালন করে থাকেন। ২০০৬ সালে গ্রেট ব্রিটেনের রাজধানী লন্ডনের ব্রিটিশ মিউজিয়ামের গ্রেট হলে "ভয়েসেস অফ বেঙ্গল" মরসুম নামে একটি সাংস্কৃতিক প্রদর্শনীর অঙ্গ হিসেবে স্থানীয় বাঙালি অভিবাসীরা ও জাদুঘর কর্তৃপক্ষ এক বিরাট দুর্গাপূজার আয়োজন করেছিলেন।[৪]

সাধারণত আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠ থেকে দশম দিন পর্যন্ত শারদীয়া দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। এই পাঁচটি দিন যথাক্রমে "দুর্গাষষ্ঠী", "মহাসপ্তমী", "মহাষ্টমী", "মহানবমী" ও "বিজয়াদশমী" নামে পরিচিত। আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষটিকে বলা হয় "দেবীপক্ষ"। দেবীপক্ষের সূচনার অমাবস্যাটির নাম মহালয়া; এই দিন হিন্দুরা তর্পণ করে তাঁদের পূর্বপুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধানিবেদন করে। দেবীপক্ষের শেষ দিনটি হল কোজাগরী পূর্ণিমা। এই দিন হিন্দু দেবী লক্ষ্মীর পূজা করা হয়। কোথাও কোথাও পনেরো দিন ধরে দুর্গাপূজা পালিত হয়। সেক্ষেত্রে মহালয়ার আগের নবমী তিথিতে পূজা শুরু হয়। পশ্চিমবঙ্গের বিষ্ণুপুর শহরের মৃন্ময়ী মন্দির এবং অনেক পরিবারে এই রীতি প্রচলিত আছে। পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরাতে মহাসপ্তমী থেকে বিজয়াদশমী পর্যন্ত (শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে মহাসপ্তমী থেকে কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা পর্যন্ত) চার দিন সরকারি ছুটি থাকে। বাংলাদেশে বিজয়াদশমীতে সর্বসাধারণের জন্য এক দিন এবং হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য ৩ দিন সরকারি ছুটি থাকে।

পারিবারিক স্তরে দুর্গাপূজা প্রধানত ধনী পরিবারগুলিতেই আয়োজিত হয়। কলকাতা শহরের পুরনো ধনী পরিবারগুলির দুর্গাপূজা "বনেদি বাড়ির পূজা" নামে পরিচিত। পারিবারিক দুর্গাপূজাগুলিতে শাস্ত্রাচার পালনের উপরেই বেশি জোর দেওয়া হয়। পূজা উপলক্ষে বাড়িতে আত্মীয়-সমাগম হয়ে থাকে। অন্যদিকে আঞ্চলিক স্তরে এক একটি অঞ্চলের বাসিন্দারা যৌথভাবে যে দুর্গাপূজার আয়োজন করেন তা বারোয়ারি পূজা বা সর্বজনীন পূজা নামে পরিচিত। ভারতে ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলনের সময় সর্বজনীন পূজা শুরু হয়। মুলত দেবী দুর্গাকে মাথায় রেখেই দেশমাতা বা ভারতমাতা বা মাতৃভূমির জাতীয়তাবাদী ধারনা বিপ্লবের আকার নেয়। দেবী দুর্গার ভাবনা থেকেই বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বন্দে মাতরম গানটি রচনা করেন যা ভারতের স্বাধীনতা-আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্র। সুভাষচন্দ্র বসু প্রমুখ বিল্পবী ও জাতীয়তাবাদী নেতারা বিভিন্ন সর্বজনীন পূজার সঙ্গে যুক্ত থাকতেন। এখন সর্বজনীন পূজায় "থিম" বা নির্দিষ্ট বিষয়ভিত্তিক মণ্ডপ, প্রতিমা ও আলোকসজ্জার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। থিমগুলির শ্রেষ্ঠত্ব বিচার করে বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে "শারদ সম্মান" নামে বিশেষ পুরস্কারও দেওয়া হয়। এছাড়া বেলুড় মঠ সহ রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের বিভিন্ন শাখাকেন্দ্র এবং ভারত সেবাশ্রম সংঘের বিভিন্ন কেন্দ্রের সন্ন্যাসীরা দুর্গাপূজার আয়োজন করেন।

Answered by tripti03
6

Answer:

ভূমিকা:

বাঙালির প্রাণের উৎসব দুর্গাপূজা।

বর্ষার কালো মেঘ সরিয়ে শরতের রোদ্দুর উকি দিলেই বাঙালির মন হিসেব কষতে শুরু করে দুর্গোৎসব আর কতদিন বাকি। প্রতিদিনের গতানুগতিক জীবনে ব্যাস্ত বাঙালি এক বছর প্রতীক্ষা করে এই পূজার জন্য।শরৎ কালে এই পূজা হয় বলে এই পূজা শারদোৎসব নামেও পরিচিত।ধনী গরীব,নর নারী,শিশু বৃদ্ধ নির্বিশেষে সকল মানুষের মিলনের এমন সার্বজনীন ভাবটি অন্য আর কোনো উৎসবে সেভাবে দেখা যায়না।

দুর্গাপূজার ইতিহাস:

দুর্গা পূজা কবে, কখন, কোথায় প্রথম শুরু হয়েছিল তা ঠিক করে বলা যায় না।

দুর্গাপূজার ইতিহাস অনেক সুদীর্ঘকালের।হিন্দু পুরাণে কথিত আছে, পুরাকালে রাজা সুরথ তার হারিয়ে যাওয়া রাজ্য ফিরে পাওয়ার জন্য দেবী দুর্গার পূজা করেন। তখন এই পূজা হতো বসন্ত কালে।এবং রামায়ণে উল্লেখ আছে শ্রী রামচন্দ্র শরৎ কালে সীতা উদ্ধারের জন্য দেবী দুর্গার আরাধনা করেছিলেন।সেই সূত্র থেকেই চারশো বছরেরও বেশি সময় ধরে আমাদের দেশে শরৎ কালে দুর্গা পূজা হয়ে আসছে।শরৎ কালের এই পূজা এ জন্য অকালবোধন নামেও পরিচিত।বাঙালির দুর্গোৎসব ইতিহাসের অশ্রুসিক্ত অধ্যায়ের আবেগময় এক স্মৃতিচারণ।

উৎসবের পটভূমি:

এই দুর্গোৎসবের পটভূমি অপূর্ব সুন্দর।বর্ষার বৃষ্টি ধোয়া নীলাকাশে সোনালি রোদ্দুরের আলপনা।শিশির ভেজা দূর্বা ঘাসে ঝরে পড়ে মুঠো মুঠো শিউলি।শরতের সাদা কাশফুলে ভরে হয়ে ওঠে বাংলার মাঠ।দুর্গা মাকে আগমন জানিয়েই যেনো প্রকৃতি সেজে ওঠে এক অপূর্ব সুন্দর সাজে।শরৎ এলেই বাংলার বুকে বেজে ওঠে ঢাকের বাদ্যি।শ্রী রামচন্দ্র শরৎ কালে দেবী দুর্গার অকালবোধন করেছিলেন।বাঙালি প্রতি শরৎ ঋতুতে মা দুর্গার বোধন করে সেই ঐতিহ্যকে আজও বহন করে চলেছে।

সার্বজনীন পুজো:

আগে দুর্গোৎসব জমিদার বা উচ্চবিত্ত বাড়িতে অনুষ্ঠিত হতো।সকল বাঙালির মনে সেই উৎসবের স্পর্শ লাগলেও সকলের তাতে অধিকার ছিলনা।আজ আর এই উৎসব শুধু কতগুলো ধনী বাড়ির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।আজ উৎসবের পরিধি বেড়েছে অনেক গুণ পুজো এখন সার্বজনীন মানে ধনী, গরীব, জাত ,পাত ,ধর্ম নির্বশেষে সবার।সকলের কাছে চাঁদার টাকা গ্রহণ করে প্রত্যেক পূজা কমিটি পূজা পরিচালনা করেন।প্রশাসনিক সতর্কতায় নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ ভাবেই অনুষ্ঠিত হয় সার্বজনীন পুজো গুলি।

পুজোর কয়েকটা দিন:

পৌরাণিক তথ্য অনুসারে,শ্রী রামচন্দ্র শুক্লা ষষ্ঠী তিথিতে দেবীদুর্গাকে বিল্ববৃক্ষে আরাধনা করে মন্ত্র পাঠ করে পূজা করেছিলেন।এরপর থেকে ওই তিথি ধরেই মায়ের পূজা করা হয়।শুক্লা সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী- এ তিনদিন সাড়ম্বরে দেবীদুর্গার পূজা করা হয়।অন্য যেকোনো উৎসবের চেয়ে এর আড়ম্বোর অনেক বেশি।এ কেবল দেবী দুর্গার একার পূজা নয়। দেবীদুর্গার পূজা উপলক্ষে আরও অনেক দেব-দেবীর পূজা করা হয়।সব নারীর মধ্যেই দেবী দুর্গা বিরাজ করে তাই অষ্টমীতে কুমারী পূজা করা হয়।অষ্টমী ও নবমী তিথির সন্ধিস্থলে সন্ধি পূজা করা হয়।সব শেষে দশমী পূজা । একে বলা হয় ‘বিজয়া দশমী’।এই উৎসব শুধু পুজোতেই সীমাবদ্ধ থাকে না সম্প্রতি সার্বজনীন পূজা গুলির মধ্যে শুরু হয়েছে শ্রেষ্ঠত্বের প্রতিযোগিতা।নানান রকমের বিশাল প্যান্ডেল, থিম,আকর্ষণীয় লাইট সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সব মিলিয়ে পুজোর এই কয়েকটা দিন বাঙালির হৃদয় ও মনকে এক পরিছন্ন আনন্দে উদ্ভাসিত করে তোলে।

উপসংহার:

উৎসবের দুটি দিক,এক ব্যাক্তির,আর এক সমষ্টির।দুর্গা পুজোয় মূলত সমষ্টির সমাবেশ।কিন্তু ব্যাক্তি মানুষ সাড়া না দিলে সমষ্টির উৎসবও ম্লান হয়ে যায়। ব্যাক্তিগত জীবনে কেউ হিন্দু,কেউ মুসলিম, কেউ শিখ, কেউ বা ধর্মে বিশ্বাসী নয়, কেউ ধনী ,কেউ গরীব,তবু সব ভেদাভেদ দূরে সরিয়ে সবাই মিলেমিশে আনন্দে এই উৎসবে মেতে ওঠে।জাত,পাত,ধর্ম,বর্ন নির্বিশেষে সবাই বাঁধা পড়ে প্রীতির বন্ধনে।এখানেই দুর্গাপূজার সার্থকতা।

pls mark as brainlist

Similar questions