জীবাণু মুক্ত জগত essay
Answers
Explanation:
অণুজীববিজ্ঞান (ইংরেজি: Microbiology) হল জীববিজ্ঞানের একটি শাখা যেখানে অণুজীব নিয়ে আলোচনা করা হয়।[১] অণুজীববিজ্ঞানের আলোচনার মধ্যে ভাইরাস বিজ্ঞান, ছত্রাক বিজ্ঞান, পরজীবী বিজ্ঞান, ব্যাকটেরিয়া বিজ্ঞান, অনাক্রম্য বিজ্ঞান, ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত। অণুজীববিজ্ঞানের এসব শাখায় অভিজ্ঞ ও দক্ষ ব্যক্তিদেরকে অণুজীববিজ্ঞানী (Microbiologist) বলা হয়। অণুজীব মূলত তিন প্রকার: ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও অ্যামিবা।
Answer:
Explanation:
verified answer
জীবাণু বিষয়ে আমরা যেভাবে জানলাম” - সে কথা বললেন ‘আইজ্যাক আসিমভ’
“জীবাণু বিষয়ে আমরা যেভাবে জানলাম” - সে কথা বললেন ‘আইজ্যাক আসিমভ’
জীবাণুদের জগত একেবারে অন্যরকম। মানুষের চেনাজানা পৃথিবীর সাথে কোন মিল নেই। পৃথিবীতেই অণুজীবরা এমন এক নিজস্ব পৃথিবী তৈরি করেছে যার রূপ মানুষ খালিচোখে দেখতে পায় না। আমাদের আশেপাশে সবখানে গিজগিজ করা অণুজীবরা একটাও আমাদের দৃষ্টিসীমার মধ্যে নেই। পৃথিবীর সবচেয়ে ভাল দৃষ্টিশক্তির মানুষও চর্মচক্ষে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াকে দেখতে পাবে না।
অণুজীবদের চেনার জন্য তাই মানবজাতিকে পাথরযুগ থেকে শুরু করে অতিসাম্প্রতিক কাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। চিন্তা করতে ও মনের ভাব প্রকাশ করতে শেখা থেকে শুরু করে মানবজাতি যুগে যুগে যান্ত্রিক, বুদ্ধিবৃত্তিক, দার্শনিক, অর্থনৈতিক অনেক প্রকারের সামর্থ দেখিয়েছে। নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশেরও কমতি ছিল না। কিন্তু তিন চারশত বৎসর আগে বিবর্ধক কাঁচ আবিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত মানুষ জীবাণুর অস্তিত্ব জানত না। জীবাণুদের বেশিরভাগ বন্ধুসুলভ আচরণ করলেও কোন কোনটা ছিল ভয়ংকর শত্রু। মানুষের দুর্বলতার সুযোগে হঠাৎ করে আক্রমণ করে বসে। মানুষটিকে অসুস্থ করে দিয়ে তার প্রাণসংহার পর্যন্ত করতে পারে। জীবাণুদের আক্রমণে এরকম রোগ বালাই এর অত্যাচার মানুষকে হাজার হাজার বৎসর আগে থেকে সহ্য করতে হয়েছে। আতসী কাঁচ আবিষ্কার হওয়ার আগে পর্যন্ত এইসব রোগের কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে মানুষের বিজ্ঞানসম্মত কোন ধারণাই ছিল না। অদ্ভূত অদ্ভূত ধারণাকে আশ্রয় করে মানুষ জীবাণুর আক্রমণে সৃষ্ট মহামারী থেকে বাঁচতে চেয়েছে। দৃশ্যমান জগতের বাহিরের অদৃশ্য জীবাণুর কথা তারা স্বপ্নেও ভাবতে পারে নি।
আর তাই অণুজীবদের ইতিহাস শুরু হয় বিবর্ধক কাঁচ আবিষ্কারের সময় থেকে। ‘আইজ্যাক আসিমভ’ তাঁর বিখ্যাত বই “জীবাণু বিষয়ে আমরা যেভাবে জানলাম” শুরু করেন এখান থেকেই।
সূচীপত্র দেখলে বিষয়টি একটু বুঝে নেয়া যাবেঃ
সূচীপত্র
যেভাবে জীবাণুর খোঁজ পাওয়া গেল
জীবাণু এল কোথা থেকে
অসুখ-বিসুখ
জীবাণু এবং রোগ
সবচে ছোট জীবাণু
লিউয়েন হুক ১৬৮০-৯০ সালের মধ্যে জীবাণুদের দেখা পান। মানুষের ইতিহাসে তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি অণুজীব দেখতে পেয়েছিলেন। অণুজীবের জগত এত বৈচিত্র্যপূর্ণ এবং ব্যাপক যে অনেককে চিনতেই মানুষের কয়েক শত বৎসর লেগে গেছে। এর মধ্যে কাঁচের মান ভাল হয়েছে। একাধিক খণ্ডের কাঁচ দিয়ে উন্নতমানের লেন্স তৈরির প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হয়েছে। আবার একাধিক লেন্স ব্যবহার করে তৈরি হয়েছে মাইক্রোস্কোপ।
এরই মধ্যে মানুষ নতুন প্রশ্নের মুখোমুখি হয়। মাইক্রোস্কোপে যে জীবাণুগুলো দেখা যাচ্ছে তা এল কোত্থেকে? এদের উদ্ভব হল কীভাবে? এ প্রসঙ্গে বেশ কয়েকটি মতবাদ ছিল। তার মধ্যে একটি মতবাদ বেশ জোড়ালোভাবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল। এই বিশেষ তত্ত্বের নাম ছিল ‘স্পন্টেনিয়াস জেনারেশন’ (Spontaneous Generation) বা স্বতঃজনন তত্ত্ব। স্বতঃজনন তত্ত্ব কী তা একটি উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছেঃ
স্বতঃজননের সবচে ভালো উদাহরণ হচ্ছে, সাধারণ মাংস যখন নষ্ট হয়ে যায় তখন যে ঘটনা ঘটে সেটা। আসল ঘটনা না জানলেও মাংস নষ্ট হওয়ার ঘটনা দেখে মনে হয়, একেবারে শূন্য থেকে ওই মাংসের ওপর ম্যাগট (maggot) বা শুককীট নামের ছোট্ট পোকা জন্মেছে। অনেকে দাবি করতেন, মৃত মাংস থেকেই স্বতঃজনন প্রক্রিয়ায় জীবন্ত শুককীটের সৃষ্টি হয়েছে। পৃষ্ঠা- ২৪
জীবাণুকে চিনতে গিয়ে কতরকমের যে ঘটনা ঘটেছে তা বর্তমান আধুনিক যুগে বসে ভাবলে হাসি পায়। রোগীদের কষ্টের কথা ভাবলে আবার দুঃখও লাগে। এখন আমরা জানি যে নিয়মিত হাতমুখ ভালভাবে ধুয়ে নিলে বিভিন্ন রোগ-জীবাণুর আক্রমণ থেকে মুক্ত থাকা যায়। কিন্তু সেকালের মানুষ এই সাধারণ তথ্যটাও জানত না। ১৮৬৭ সালে ইংরেজ শল্য চিকিৎসক জোসেফ লিস্টার ডাক্তারদের কোন রোগী হাত দিয়ে ছোঁয়া বা অপারেশনের আগে শক্তিশালী রাসায়নিক দিয়ে হাত ধোয়ার নির্দেশ দেন। তার আগে ১৮৪০ সালে হাঙ্গেরির চিকিৎসক ইগনাজ ফিলিপ সিমেলওয়েস ডাক্তারদের হাত ভালমত না ধুয়ে কোন রোগীর কাছে যাবার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। রোগীদের মৃত্যুর হার আশাতীতভাবে কমে গেলেও কয়েকদিন পর ডাক্তাররা বিদ্রোহী হয়ে উঠলেন। বিশেষ রাসায়নিক দ্রব্যটি কটু গন্ধের। তারা রোগী দেখার আগে বারবার এই কটু গন্ধের তরল হাতে মাখতে পারবেন না। কী হাস্যকর আবদার!
সমসাময়িক সময়ে ইউরোপের দেশে দেশে বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানী ও ডাক্তার অণুজীব নিয়ে গবেষণা করছিলেন। তাদের সাফল্য মহাদেশজুড়ে প্রশংসিত হচ্ছিল। ১৮৫৮ সালে ফ্রান্সে লুই পাস্তুর জীবাণুকে প্রায় না দেখেই তার অস্তিত্ব প্রমাণ করেছিলেন। অদৃশ্য জীবাণুকে ব্যবহার করে রোগ প্রতিরোধী টীকা তৈরিতে সাফল্য পাচ্ছিলেন।
মানুষের এই ধরণের সাফল্য পড়তে ভাল লাগে। যে জীবাণুগুলো মানুষের সবসময় ক্ষতি করতে চায় সেগুলোর প্রতিষেধক অন্বেষণে মানুষের নিরন্তর চেষ্টার ইতিহাস পড়লে মানবজাতির ভবিষ্যত সম্পর্কে আশা জাগে। প্রকৃতি-পরিচয় প্রকাশিত 'বিজ্ঞানের ইতিহাস গ্রন্থমালা'র এটা তৃতীয় বই। আমরা এই গ্রন্থমালার আরেকটি বই আইজাক আসিমভের লেখা “রক্ত বিষয়ে আমরা যেভাবে জানলাম” এর আলোচনা প্রকাশ করেছি।
প্রচ্ছদ আকর্ষণীয় হয়েছে। জীবাণুগুলোর অবয়ব বোঝাবার জন্য প্রচ্ছদশিল্পী শতাব্দী জাহিদ যে জ্যামিতিক অবয়ব কল্পনা করেছেন তা অভিনব হয়েছে। রঙের মৃদু ব্যবহার ভাল লেগেছে। পরিণত শিল্পীর চিন্তাসামর্থ তার চিত্রশিল্পে স্পষ্ট।
====================
জীবাণু বিষয়ে আমরা যেভাবে জানলাম
আইজ্যাক আসিমভ
রূপান্তরঃ আবুল বাশার
প্রচ্ছদঃ শতাব্দী জাহিদ
প্রকাশনায়ঃ প্রকৃতি-পরিচয়, ঢাকা।
প্রথম প্রকাশঃ ২০১৫
পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ৬৪
মূল্যঃ ৭৫ টাকা