Essay on swami vivekananda in bengali language
Answers
স্বামী বিবেকানন্দ:-
•বিবেকানন্দ সম্পর্কে ধারণা:-
মহাপুরুষ বলতে সাধারণভাবে মহান ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষকে বলা হয় । আর মহানব্যক্তিত্ব বলতে বলা যেতে পারে , যে ব্যক্তি তার জীবনে এমন কিছু কাজ করে জীবন অতিবাহিত করেছেন , সেই কর্মের ফল সম্পূর্ণভাবে জনকল্যাণে তার মৃত্যুর পরেও আবহমানকাল ব্যাপী চলেছে , চলছে ও চলবে । অর্থাৎ মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে যে কাজ করার মধ্যে দিয়ে যে ব্যক্তি তার জীবন শেষ হবার পরেও মানব হৃদয়ে অমর আসন লাভ করেছেন , তিনিই মহাপুরুষ । কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ভাষায় .....
“ সেই ধন্য নরকূলে , লােকে যারে নাহি ভুলে । | মনের মন্দিরে সদা সেবে সর্বজন । ”
— এখানে কবি সেই ধন্য ’ শব্দ দুটিতে মহাপুরুষকেই চিহ্নিত করেছেন । মহাপুরুষদের উদাহরণ হিসাবে বাঙালী ব্যক্তিত্বের মধ্যে সমাজ সংস্কারক রাজা রামমােহন রায় , ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর , কবি কৃত্তিবাস ওঝা , মাইকেল মধুসূদন দত্ত , রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর , উপন্যাসিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় , শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় , নাট্যকার গিরীশচন্দ্র ঘােষ , দ্বিজেন্দ্রলাল রায় , বিজ্ঞানী আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু , সত্যেন্দ্রনাথ বসু । দেশপ্রেমিক ক্ষুদিরাম বসু , নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বস প্রমুখদের নাম উল্লেখ করা যায় । এছাড়া মহাপুরুষদের তালিকায় আরােও অগণিত যে সকল ব্যক্তিগণ আছেন , তাদের সকলের নাম স্মরণ করা এই মুহুর্তে সম্ভব নয় । |
•মহাপুরুষ রূপে বিবেকানন্দ:-
বিবেকানন্দকে মহাপুরুষ মনে করার কারণ
ধর্ম নির্বিশেষে প্রত্যেক মানুষের প্রকৃত পরিচয় সে । কে মানুষ হিসাবে আপন নমে আসে মানবিকতা , দি ধর্মের চেয়ে মনুষ্য ধর্মকে হল , তিনি সমাজ সংস্কারের জন্য তথা সমাজের বুক থেকে জাতি ধর্ম নি , মানুষের মধ্যে এই বাণী প্রচার করেছিলেন যে , জাতি ধর্ম নয় — মানুষের প্র মানুষ । সুতরাং ধর্মের দৃষ্টিতে কোনাে ব্যক্তিকে ছােট না করে তাকে মাম করে নিতে হবে । মানুষ হিসাবে মানুষকে আপন করার মধ্যে দিয়ে নেমে আ . আর মনুষ্য জনমের সার্থকতা । অর্থাৎ তিনি গীতা , পুরাণ ইত্যাদি ধর্মের চেয়ে মন বড় ধর্ম বলে মনে করতেন এবং সেজন্য তিনি আজীবন দেশ - দেশান্তরে তার মত করে বিশ্ববাসীর হৃদয়ে নবজাগরণ সৃষ্টি করেছিলেন , তিনি মহাপুরুষ না হয়ে সাধারণ হতে পারেন না ।
•বিবেকানন্দের ভাব ও কর্মের পরিচয়:-
স্বামী বিবেকানন্দের ভাব ছিল , ঐতিহ্যবিস্মৃত , পদপরাহত দুর্বল ভারতবাসীকে জাতিভেদ প্রথা থেকে মুক্ত করে আত্মজাগরণ সৃষ্টি করা । আর এর জন্য তিনি বুঝেছিলেন যে , ঘৃণ্যজাতিভেদ , হিন্দুধর্মের দুর্বলতা ও পরাভবের কারণ । তাই তিনি সমগ্র সমাজকে এই আহ্বান করলেন —
“ বল , মুখ ভারতবাসী , দরিদ্র ভারতবাসী , চণ্ডাল ভারতবাসী আমার রক্ত , আমার ভাই . . . । ”
সেই সঙ্গে তাঁর ভাবধর্মে বিরাজমান ছিল । আর্তপীড়িত বিপন্ন মানুষদের সেবা করার মাধ্যমে ঈশ্বরকে লাভ করা । আর এজন্য তিনি উদাত্তকণ্ঠে বললেন -
“ বহুরূপে সম্মুখে তােমার , ছাড়ি কোথা খুঁজিছ ঈশ্বর ? . জীবে প্রেম করে যেই জন , সেইজন সেবিছে ঈশ্বর । ”
স্বামী বিবেকানন্দের কর্মের পরিচয়ের সংক্ষিপ্ততম বিবরণে বলা যায় যে , তিনি প্রথম জীবনে ব্রাহ্মসমাজের সংস্পর্শে এসেও তার নাস্তিক হৃদয় ধর্মে তৃপ্তি পাচ্ছিলেন । তখন তিনি আকস্মিকভাবে দক্ষিণেশ্বরে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের সান্নিধ্যে আসেন এবং সেইখানেই তার ভাবান্তর ঘটে এবং তিনি সন্নাস গ্রহণ করেন । তারপর রামকৃষ্ণদেবের মৃত্যুর ৬ বৎসর পরে তিনি ভক্তদের অনুরােধে ১৮৯৩ সালে আমেরিকার শিকাগাে শহরে “ বিশ্বধর্ম সম্মেলন ” - এ হিন্দুধর্মের প্রতিনিধি হিসাবে গমন করেন , এই সভায় মাত্র পাঁচ মিনিট বক্তৃতাদানের অনুমতি পান । কিন্তু বক্তব্যের প্রারম্ভে — ' হে আমার আমেরিকানবাসী ভাইবােন ’ — সম্ভাষণ সভাজনের হৃদয়ে বিপুল উত্তেজনা সৃষ্টি করার পর তিনি অবলীলাক্রমে দীর্ঘসময় ধরে হিন্দুধর্মের মূলসূত্রগুলি ব্যাখ্যা করে উপস্থিত সভার সকল শ্রোতাকে মুগ্ধ করলেন এই মর্মে “ আধ্যাত্মিকতার গভীর উচ্চারণেও অনুমতির প্রশান্ত নম্রতায় হিন্দুধর্মই সকল ধর্মের শ্রেষ্ঠ এবং এই ধর্মই বিশ্বের ক্রন্দনাতুর সকল মানব সন্তানকে প্রকৃত মুক্তির পথপ্রদর্শক । ” . এরপর স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করে বিবেকানন্দ সাংগঠনিক কাজে আত্মনিয়ােগ করলেন এবং বিপর্যস্ত , সর্বরিক্ত দেশ ভারতবর্ষকে সংগঠিত করার মহান আদর্শ নিয়ে সন্ন্যাসী সম্প্রদায় সংগঠনে মনােনিবেশ করে ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত করলেন — রামকৃষ্ণ মিশন ’ , ১৮৯৯ - তে ‘ বেলুর মঠ ’ এবং সিংহল , মাদ্রাজ ও গুজরাটে স্থাপন করেন ব্রহ্মাচার্যশ্রম ।
•সাধশতবর্ষে ভার প্রাসঙ্গিকতা:-
সার্ধশতবর্ষ অর্থাৎ ১৫০ বৎসর । যে ব্যক্তি এতদিন পূর্বে জন্মগ্রহণ করেছিলেন , সেই মহাপুরুষের প্রাসঙ্গিকতা হল — যিনি পরাধীনতার নিরন্ধ্র অন্ধকারে
নিমগ্ন জাতিকে বজ্রগর্ভ অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষিত করেছিলেন , যিনি জড়তাগ্রস্থ , তন্দ্রাচ্ছন্ন , পরকরণ মত্ত জাতিকে প্রকৃত ভারত সন্ধানে জ্যোতির্ময় মৃত্যুঞ্জয়বাণী শুনিয়ে যৌবধর্মে দীক্ষিত করে কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারীকা পর্যন্ত জাতির অনড়দেহে প্রাণের স্পন্দন সঞ্চার করেছিলেন , যাঁর অবিস্মরণীয় কীর্তি ( রামকৃষ্ণ মিশন , বেলুড় মঠ ) আজও সমাজের বুকে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন সমাজকল্যাণমুখী কর্মের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে । সেই মহান আত্মাকে স্মরণ না করার অর্থ — আমরা নরাধম।