FADONAD এর পূনরুপ কি?
Answers
Answer:
সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর
প্রিয় পরীক্ষার্থী, আজ সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র থেকে একটি সৃজনশীল নমুনা প্রশ্নোত্তর দেওয়া হলো।
ডা. দীপক ও ডা. জহির একই হাসপাতালে চাকরি করেন। দীপক গত বছর ভালোবেসে ডা. সীমাকে বিয়ে করেন। ব্রাহ্মণের ছেলে হয়ে শূদ্রের মেয়েকে বিয়ে করায় তাঁদের এই বিয়ে পরিবার মেনে নেয়নি। অন্যদিকে তাঁরই বন্ধু ডা. জহির পরিবারের সম্মতিতে হতদরিদ্র কৃষকের মেয়ে সায়মাকে বিয়ে করে পরিবারের সঙ্গেই থাকছেন। তাঁদের বিয়েতে পরিবারের কেউ আপত্তি করেনি।
ক. GAD-এর পূর্ণরূপ কী?
খ. ‘নারীর সমতাভিত্তিক সহাবস্থানই নারীর ক্ষমতায়ন’—কথাটি ব্যাখ্যা করো।
গ. ডা. দীপকের অবস্থান সামাজিক স্তরবিন্যাসে কোন ধরন দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায়?
ঘ. ‘ডা. জহিরের অবস্থান ডা. দীপকের অবস্থান থেকে ভিন্ন’—কথাটির তাত্পর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তর-ক
GAD-এর পূর্ণরূপ হচ্ছে Gender and Development.
উত্তর-খ
নারীর ক্ষমতায়ন বলতে সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর সহাবস্থানকে বোঝায়। সম্পদের ওপর নারীর নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি সিদ্ধান্ত গ্রহণ-প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ প্রতিষ্ঠাকরণকে বোঝায়। পুরুষের মতো সব ক্ষেত্রে নারীরও সমানভাবে অংশগ্রহণ করাই ক্ষমতায়নের মূল কথা। নারী-পুরুষ ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সব বিষয়ে সমতাভিত্তিক অবস্থানে থাকবে। তাই বলা যায়, নারীর সমতাভিত্তিক সহাবস্থানই নারীর ক্ষমতায়ন।
উত্তর-গ
ডা. দীপকের অবস্থান বর্ণপ্রথা দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায়।
বর্ণপ্রথা বলতে এমন একটি ব্যবস্থাকে বোঝানো হয়, যার সদস্যদের মধ্যে অন্তর্গোত্র বিবাহ হয়, যাদের একটি সাধারণ নাম থাকে, উত্তরাধিকার সূত্রে তা লাভ করে এবং সামাজিক মেলামেশার ক্ষেত্রে সদস্যদের মধ্যে কিছু বিধিনিষেধ থাকে। মূলত ঐতিহ্যবাহী হিন্দু সমাজেই বর্ণপ্রথা দেখা যায়। হিন্দু সমাজে চারটি বর্ণ আছে, যথা: ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র। চারটি বর্ণের মধ্যে ব্রাহ্মণেরা অভিজাত এবং উঁচু স্তরের, অন্যদিকে শূদ্ররা সবচেয়ে নিম্নস্তরের অন্তর্ভুক্ত।
উদ্দীপকে দেখা যাচ্ছে, ডা. দীপক ব্রাহ্মণ আর ডা. সীমা শূদ্র। প্রথা অনুযায়ী একই বর্ণের মধ্যে বিয়ে করতে হয়। ভিন্ন বর্ণের মধ্যে বিবাহ নিষিদ্ধ। যেহেতু তাঁরা এটি না করে ভিন্ন বর্ণের মধ্যে বিয়ে করেছেন, তাই তাঁদের বিয়ে পরিবার মেনে নেয়নি। বর্ণপ্রথার কারণে তাঁদের বিয়ে সামাজিক স্বীকৃতি পায়নি।
উত্তর-ঘ
ডা. দীপকের বিষয় বর্ণপ্রথা আর ডা. জহিরের বিষয় সামাজিক শ্রেণি। বর্ণপ্রথা ও সামাজিক শ্রেণি ভিন্ন বিষয়। সামাজিক শ্রেণি বলতে এমন একটি দল বা গোষ্ঠীকে বোঝায়, যারা মোটামুটি একই ধরনের জীবন যাপন করে, একই ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে। নিচে বর্ণপ্রথা থেকে সামাজিক শ্রেণির ভিন্নতা দেখানো হলো:
১। বর্ণপ্রথা হচ্ছে একটি বদ্ধ ব্যবস্থা, অর্থাত্ ব্যক্তির জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত একই বর্ণের মধ্যে থাকতে হয়। অন্যদিকে শ্রেণি হচ্ছে উন্মুক্ত ব্যবস্থা। মানুষ তার চেষ্টা ও পরিশ্রম দিয়ে এক শ্রেণি থেকে অন্য শ্রেণিতে যেতে পারে।
২। জাতি-বর্ণে ব্যক্তির মর্যাদা আরোপিত। জন্মসূত্রে তা নির্ধারিত হয়ে থাকে। পক্ষান্তরে শ্রেণির ক্ষেত্রে ব্যক্তির মর্যাদা অর্জিত। যোগ্যতার ভিত্তিতে এটি নির্ধারিত হয়।
৩। জাতি-বর্ণপ্রথা হলো অন্তর্গোত্র বিবাহভিত্তিক গোষ্ঠী। নিজ গোত্রের বাইরে বিবাহ অনুমোদিত নয়। কিন্তু শ্রেণি অন্তর্গোত্র বিবাহভিত্তিক গোষ্ঠী নয়। বিবাহের ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনো বিধিনিষেধ নেই।
৪। জাতি-বর্ণভিত্তিক সমাজে কোনো গতিশীলতা নেই। বংশপরম্পরায় একই ধারা অব্যাহত থাকে। অন্যদিকে শ্রেণি গতিশীল বিষয়। এখানে সাধারণত নানা ক্ষেত্রে গতিশীলতা লক্ষ করা যায়।
৫। মূলত ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় হিন্দু সমাজে জাতি-বর্ণপ্রথা বিদ্যমান। অন্যান্য ধর্মে এ প্রথা সাধারণত দেখা যায় না। কিন্তু শ্রেণি আধুনিক সব সমাজেই কমবেশি লক্ষণীয়। তাই বর্ণপ্রথা প্রথাগত হলেও শ্রেণির ধারণা আধুনিক। বিশেষ করে পুঁজিবাদী সমাজে শ্রেণির ধারণা প্রকট।
উপরিউক্ত আলোচনার দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে বর্ণপ্রথা সামাজিক শ্রেণি থেকে ভিন্ন।
প্রভাষক, এনায়েতবাজার মহিলা কলেজ, চট্টগ্রাম