Question 4 : “ আমরা যে তিমিরে সেই তিমিরেই রয়ে গেলুম ৷ ” i ) আমরা কারা ? ii ) বক্তা কোন প্রশ্নের সমাধান চাইছিলেন ? iii ) সমাধান হল না কেন ? iv ) শেষপর্যন্ত কে কীভাবে এই প্রশ্নের সমাধান করলেন ?
Answers
দেখুন দাদা,আপনারা এই অঞ্চলে নতুন। বলি কি দাদা,জায়গাটা দেখতে যতোটাই সুন্দর-সুদৃশ্য লাগুক না কেন,জায়গাটা খুব একটা ভালো নয়। কাছাকাছিই অরণ্যের কোনো গহন স্থানে পঞ্চমুণ্ডির আসন অধিষ্টিত রয়েছে। একসময় তো শবসাধনাও হোত। তাই বলি কি,সূর্যের আলো পড়ে আসার পর আর পারতপক্ষে বাইরে বেরোবেন না। আর পশ্চিমের জঙ্গল তো কথাই নেই। যতোই দূরে সুন্দর পাহাড় থাক,ওর ধারেকাছেও যাবেন না। ওখানেই আছে সেই ভাঙা অভিশপ্ত মন্দির।" এতক্ষণ একটানা কথা বলে থামলেন প্রমিতবাবু। "আপনি জানেন,আমরা এখানে বেড়াতে এসেছি। শহরের কৃত্রিমতা,জনকোলাহল আর ব্যস্ততা থেকে দূরে এরকম একটা সুদৃশ্য মনোরম নির্জন স্থান, আমার মতো উঠতি কবির জন্য প্রচুর উৎকৃষ্ট,নতুন প্রেমিককুলের নতুন প্রেমকাহিনী রচনা করার এক আদর্শ স্থান,আর সেখানে আপনি কিনা আমাদের ভূতের ভয় দেখাচ্ছেন!" প্রথম দিকে ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে গেলেও রক্তিমের এরকম সপাট জবাবে হেসে ফেলল ঐন্দ্রিলা।
ঐন্দ্রিলা রক্তিমের সদ্যপরিণীতা স্ত্রী। আগের বছরই রক্তিমের সাথে তার পরিচয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেই পরিচয় ধীরে ধীরে প্রগাঢ় হতে হতে পরিণতি পায় পরিণয়ে। রক্তিম পেশায় এক মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার,এ ছাড়াও রক্তিমের এক পরিচয় আছে। সে একজন কবি,প্রেমের কবিতা লিখতে ভালোবাসে। কবিতাই বলতে গেলে ওর প্যাশন।ঐন্দ্রিলা প্রথম থেকেই রক্তিমের কবিতার বর্ণনা,তার কবিতার ভাব আর তার ছন্দমাধুর্যের একজন বড়ো ফ্যান।এখন হয়তো পরিণীতা অর্ধাঙ্গিনী,কিন্তু সেই ক্রেজিনেস একই রকম ভাবে থেকে গেছে।
যাই হোক,রক্তিম বিয়ের পর হানিমুন করার জন্য বেছে নিয়েছে বাঙালীর প্রিয় ঘাটশিলার কাছেই ধূসর পাহাড় আর শালবনে ঘেরা রোম্যান্টিক ও আধিভৌতিক স্থান ধলভূমগড়। হাওড়া থেকে ভোরের ইস্পাত এক্সপ্রেসে ঘাটশিলা আর সেখান থেকে এই ধলভূমগড়। স্টেশান থেকে দু'কিলোমিটার দূরত্বেই সবুজ অরণ্যের মধ্যে পাহাড়ের কোলে ধলভূমগড়ের বনবীথি ফরেস্ট গেস্ট হাউস। কোলকাতার আড়াইশো কিলোমিটারের মধ্যেই,অথচ রক্তিমের মনে হচ্ছে,সে আর ঐন্দ্রিলা সভ্য জগৎ থেকে হাজার হাজার কিলোমিটার দূরে কোনো রূপকথার দেশে চলে এসেছে।
এখানেই নাকি শাল সেগুন মহুয়ার অরণ্যের গভীরে কোথাও আছে রঙ্কিণীদেবীর এক অতি প্রাচীন ধ্বংসপ্রায় মন্দির। বনবীথি রেস্টহাউসের ম্যানেজার কাম কেয়ারটেকার প্রমিতবাবুর কথায় যে মন্দির আর মন্দির সংলগ্ন অঞ্চল অভিশপ্ত।
ঘাটশিলা বলতেই ভ্রমণপিপাসু বাঙালীর কাছে ভ্রমণের প্রিয় স্থান। ঘাটশিলা মানেই তিরতির করে বয়ে চলা উদ্ভিন্নযৌবনা সুবর্ণরেখা,দিগন্তে ধূসর ফুলডুঙরি পাহাড়শ্রেণী,সবুজ শালবনের মধ্যে পাহাড়ি ঝরণা আর রঙ্কিণী মন্দির। শিল্পনগরী জামশেদপুর আর রাকা মাইনস খুব কাছেই। বিভূতিভূষণ জীবনের এক বড়ো অংশ কাটিয়েছেন এই পূর্ব সিংভূমে। এখানে তাঁর বাড়িও রয়েছে,বলা বাহুল্য পাহাড় জঙ্গলে ঘেরা এই সিংভূমেই হয়েছিল তাঁর কিছু আদিভৌতিক অভিজ্ঞতা।যাই হোক,এ ছাড়াও ঘাটশিলার ইতিহাসও রোমাঞ্চকর। ঘাটশিলার ইতিহাস জানতে হলে আমাদের পাড়ি দিতে হবে সুদূর রাজপুতানায়। রাজস্থানের মাণ্ডু ও ধার অঞ্চলের রাজপুতেরা তাদের অঞ্চলে মুসলিম অনুপ্রবেশ করলে শাসনকার্য চালাবার জন্য এক নিরাপদ স্থান অনুসন্ধানের তাগিদ অনুভব করেন। আর সেই নিরাপদ স্থান অনুসন্ধান করতেই করতেই তাঁরা চলে আসেন সাঁওতাল ও মুণ্ডা অধ্যুষিত এই পাহাড় জঙ্গলে ঘেরা সিংভূমের জঙ্গলমহলে। তাদের প্রবল পরাক্রমী নৃপতি জগৎ দেব এখানে এসে প্রসিদ্ধ হন জগন্নাথ ধল নামে। আর এই শাল সেগুনের অরণ্যের মধ্যে তাদের গড় ছিল বলে অঞ্চলটার নাম হল ধলভূমগড়।