tin paharer kole summary
Answers
Explanation:
চল, তাড়াতাড়ি কর, আর দেরি নয়, বেরিয়ে পড় বেরিয়ে পড় এখুনি। ভোররাতের স্বপ্নভরা আদুরে ঘুমটুকু নিয়ে আর পাশে ফিরতে হবে না। উঠে পড় গা ঝাড়া দিয়ে, সময় নেই- এমন সুযোগ আর আসবে না কোন দিন। বাছবাছাই না ক’রে হাতের কাছে যা পাস তাই দিয়ে পোঁটলাপুঁটলি বেঁধে নে হুট ক’রে। বেড়িয়ে পড়, দেরী করলেই পস্তাতে হবে বেরিয়ে পড়- ভূষণ পাল গোটা পরিবারটাকে ঝড়ের মতো নাড়া দিলে। কত দূর দিগন্তের পথ- এখান থেকে নৌকা ক’রে ষ্টিমার ঘাট সেখান থেকে রেলষ্টেশন- কী মজা, আজ প্রথম ট্রেনে চাপাবি, ট্রেন ক’রে চেকপোষ্ট, সেখান থেকে পায়ে হেঁটে-পায়ে হেঁটে-পায়ে হেঁটে- ছোট ছোলেটা ঘুমমোছা চোখে জিঞ্জেস করলে, সেখান থেকে কোথায় বাবা? কোথায় আবার! আমাদের নিজের দেশে। ছায়াঢাকা ডোবার ধারে হিজল গাছে ঘুমভাঙা পাখিরা চেনা গলায় কিচিরমিচির করে উঠল। জানালা দিয়ে বাইরে একবার তাকাল সেই ছোট ছেলে, দেখলে তার কাটা ঘুড়িটা এখনো গাছের মগডালে লটকে আছে, হাওয়ায় ঠোক্কর খাচ্ছে তবুও কিছুতেই ছিঁড়ে পড়ছে না। ঘাটের শান চ’টে গিয়ে যেখানে শ্যাওলা জমেছে সেও করুণ চোখে চেয়ে জিজ্ঞেস করছে, কোথায় যাবে? হিজল গাছের ফুল টুপ টুপ ক’রে এখনো পড়ছে জলের উপর, বলছে, যাবে কোথায়? তারপর একটু দূরেই মাঠে কালো মেঘের মত ধান হয়েছে- লক্ষীবিলাস ধান- সোনা রঙ ধরবে ব’লে। তারও এক প্রশ্ন- যাবে কোথায়? আরো দূরে ছলছলাৎ পাগলী নদীর ঢেউ তার উপর চলেছে ভেসে পালতোলা ডিঙি ময়ূরপঙ্খি বলছে, আমাদের ফেলে কোথায় যাবে? আমারা কি তোমার গত জন্মের বন্ধু? এ জন্মের কেউ নই? স্বজন নই? তাড়াতাড়ি কর- তাড়াতাড়ি কর- ঝিকিমিকি রোদ উঠে পড়ল যে। আঙিনায় গোবরছড়া দিতে হবে না, লেপতে হবে না পৈঁঠে-পিঁড়ে, গরু দুইতে হবে না, খেতে দিতে হবে না, মাঠে গিয়ে বেঁধে রাখতে হবে না। দরজা খুলে দাও, যেখানে খুশি চলে যা’ক আমাদের মত। আমাদের মত! কিন্তু আমরা যাচ্ছি কোথায়? তা জানিনা। যেখানে যাচ্ছি সেখানে আছে কী? সব আছে।