"শীতের একটি উৎসব" রচনা লেখ:
Whoever answer this correctly will be marked as Brainlist.
Answers
বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী পদ্মা-মেঘনা-যমুনার পলিবিধৌত বাংলাদেশ ছয় ঋতুর দেশ। প্রতিটি ঋতু ভিন্ন মেজাজে, ভিন্ন আমেজ নিয়ে আসে এই দেশে। ঋতুর সংখ্যাগত পরিক্রমায় শীতের স্থান পঞ্চমে। শীতের সঙ্গে উত্সবের একটা গভীর যোগসূত্র রয়েছে। গ্রাম বাংলায়, এমনকি নগরেও উত্সবের আমেজ নিয়ে আসে শীত। এই উত্সব একেবারেই লৌকিক ও প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। এই উত্সবের সঙ্গে এ দেশের মানুষের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। শীতকালটা বিশেষ বিশেষ অনুষঙ্গ নিয়ে হাজির হয় বছর বছর, তাই এই কালটা আমাদের জন্য বিশেষ হয়ে ওঠে।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে একটা বড় পরিবর্তন নিয়ে আসে শীতকাল। গরম আমাদের বিচ্ছিন্ন করে, আর শীত করে যূথবদ্ধ। মানুষের যূথবদ্ধতা মানেই উত্সব। কোনো উত্সব ছাড়া মানুষ সাধারণত এক জায়গায় মিলিত হয় না তেমন। মানুষের এই যূথবদ্ধতার চিত্র শীতকালে সর্বত্রই চোখে পড়ে। গ্রামাঞ্চলের কুয়াশায় ঢাকা ভোরে ঘুমভাঙা মানুষরা বাড়ির উঠানে, ঘাটায়, রাস্তার ধারে, চা দোকানের মাচায়, পুকুর বা নদীর পারে যূথবদ্ধ হয়ে রোদ পোহাতে বসে। নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর, তরুণ-যুবা, বুড়ো-বুড়ি সবাই। মিষ্টি রোদের ওম নিতে নিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মেতে থাকে নানা গল্পগুজবে। সবার মনেই এক ধরনের ফুর্তি ফুর্তি ভাব। শীতের দিনটা এভাবেই শুরু হয় ছোটখাটো উত্সব-আনন্দের মধ্য দিয়ে।
বেলা গড়ায় মাঝ আকাশে। দুপুরে এসে উত্সবের মাত্রা ভিন্নতা পায়। যতই কাজ থাকুক, বাড়ির বউ-ঝি, এমনকি পুরুষরাও গোসল করতে পুকুরে নামার আগে কিছুক্ষণ পুকুরপাড়ে বসে আড্ডা দেবেই। আবার গোসল শেষেও সেই একই আড্ডা। আড্ডার যেন আর শেষ হতে চায় না।
সন্ধ্যায় এসে উত্সবটা পায় আরেক মাত্রা। গ্রামাঞ্চলে সাঁঝের বেলায় খড়কুটো, নাড়া, লতাপাতা জ্বালিয়ে বা লাকড়ির স্তূপ বানিয়ে সবাই গোল হয়ে আগুন পোহাতে বসাটা শীত উত্সবের আরেক পর্ব। শীতের মাত্রাটা একটু বেশি হলে শহরেও এমন চিত্র দেখা যায়।
রাতে ঘুমাতে গেলেও আরেকটা মাত্রায় গিয়ে পৌঁছায় শীত উত্সব। গরমকালে পরিবারের সদস্যরা সাধারণত দূরত্ব বজায় রেখে বিচ্ছিন্নভাবে একেক জায়গায় রাত কাটায়। ভ্যাপসা গরমে অবস্থা নাকাল, একসঙ্গে ঘুমানোর তো প্রশ্নই ওঠে না। কিন্তু শীতের রাত বিচ্ছিন্ন মানুষগুলোকে যূথবদ্ধ করে দেয়। একই লেপ, কম্বল বা কাঁথার নিচে ঘুমানোর মজাটাই আলাদা। একসঙ্গে ঘুমালে শীতটা কম লাগে যেন। এই যূথবদ্ধভাবে ঘুমানোর মধ্য দিয়ে শিশির মাখা দীর্ঘ রাতটাও হয়ে ওঠে উদ্যাপনযোগ্য। শীতকালে দিনের বেলায় কর্মোদ্দীপনায় মুখর থাকে। আবার বৈপরীত্য এর রাতে, নির্জনতা স্তব্ধতার কাছে সে তখন নিজেকে সমর্পণ করে।
এ ছাড়া গ্রামবাংলার লোকায়ত সংস্কৃতির যত আয়োজন আছে, সবই আয়োজিত হয় শীতের রাতে। যেমন—কবিগান, জারিপালা, মুর্শিদিগান, মাঘীপূর্ণিমা, মানিক পীরের গান, পতুলনাচ, মাদার বাঁশের জারি, মাইজভাণ্ডারি গান ইত্যাদি। কুয়াশার রাতে যতই ঠাণ্ডা হাওয়ায় কাঁপুনি থাকুক, যাত্রাপালা শুনতে যাওয়াকে কি আর ঠেকিয়ে রাখতে পারে! শীতের রাতে নানা ধরনের নাট্যগীতের আয়োজনে মুখর হয় গ্রামবাংলা। শীতকালজুড়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গাজীর গীত, মানিক পীরের গীত, মাদার পীরের গীতসহ বিভিন্ন ধরনের যাত্রাপালা অভিনীত হতে দেখা যায়। কোনো কোনো যাত্রাপালা অভিনীত হয় গ্রামের সাধারণ মানুষেরই উদ্যোগে, তাদেরই অভিনয়ে শখের যাত্রাপালা হিসেবে। গ্রামের সাধারণ কৃষক, কামার, কুমার, মুটে, ভ্যানচালক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও অন্যান্য পেশাজীবী মানুষ নিজেরাই শীতের প্রথম দিকে মহড়া দিয়ে যাত্রায় অভিনয় করে থাকে। অন্যদিকে কিছু পেশাদার যাত্রার দল পেশাদার অভিনেতাদের নিয়ে শীতকালজুড়ে পরিবেশন করে যাত্রাপালা। সুতরাং শীতের সঙ্গে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উত্সবের সংযোগ রয়েছে বৈকি।
শীতকালে পরিবর্তন ঘটে খাবার তালিকায়ও। আবির্ভাব ঘটে কিছু নতুনত্বের, যা শুধু শীতের ঐতিহ্যই বহন করে না, আনন্দও জোগায়। শীতকালে গ্রামের ঘরে ঘরে নতুন ধান ওঠে। এতে উত্সব পায় আরেকটা মাত্রা। নতুন ধানের সঙ্গে পিঠাপুলির সম্পর্ক অনিবার্য। পিঠা ছাড়া শীতের সকালটাই যেন মাটি। ঘরে ঘরে তখন পিঠা খাওয়ার ধুম পড়ে যায়। বাড়িতে চুলার পাশে বসে গরম গরম পিঠা খাওয়ার মজাই আলাদা। সকালের কুয়াশা কিংবা সন্ধ্যার হিমেল বাতাসে ভাপা পিঠার গরম আর সুগন্ধি ধোঁয়ায় মন আনচান করে ওঠে। সরষে বা ধনেপাতা বাটা অথবা শুঁটকির ভর্তা মাখিয়ে চিতই পিঠা মুখে দিলে ঝালে কান গরম হয়ে শীত পালায়। সকাল হলে গাঁয়ে পিঠা উত্সব দেখা যায়। এই পিঠাপুলির উত্সবে যোগ দিতে শীতকালে বাড়িতে বেড়াতে আসে মেয়ে, জামাই আর নতুন কুটুম। মেয়ে-জামাইয়ের বাড়িতে মা-বাবারা পিঠা বানিয়ে পাঠিয়ে দেন শীতকালে। এখানেও রয়েছে উত্সবের একটা ব্যাপার।
শীতকালে খেজুরের রস খাবারের ক্ষেত্রে বাড়তি উপাদান। খেজুরগাছের মাথায় সুদৃশ্য মাটির হাঁড়ি শীত উত্সবের বার্তা নিয়ে আসে। কাকডাকা ভোরে গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে খেজুর রস উনুনে দিয়ে বাড়ির সবাই চারপাশ ঘিরে আগুনের আঁচ নেয়। কেউ কেউ খেজুরের রস বিক্রি করতে নিয়ে যায় হাটে-বাজারে। রাতে চিতই পিঠা তৈরি করে খেজুরের রসে ভিজিয়ে সকালে খাওয়াটা একমাত্র শীতকালেই সম্ভব। আর খেজুরের রস থেকে তৈরি ‘রাব’-এর তো তুলনাই হয় না। এ সময় আখের রস থেকে গুড় তৈরির ধুম পড়ে যায়। গরম গরম গুড় খাওয়ার স্বাদই আলাদা। এটাও শীত উত্সবের আরেকটা অনুষঙ্গ।
To learn more sociology follow the given link
https://brainly.in/question/8603098?
#SPJ3
Answer:
শীতের উৎসবের প্রবন্ধ লেখা:
Explanation:
ভারতে শীতকাল মাঝারি ঠাণ্ডা। দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলে ডিসেম্বর এবং জানুয়ারি সবচেয়ে ঠান্ডা মাস। শীতকালে প্রকৃতি বৃদ্ধ হয়। এটি ক্ষয়ের সময়কাল। এই বুড়ি কে ভালোবাসতে পারে? কোথাও সৌন্দর্য নেই। কুয়াশা আর তুষার ছাড়া আর কিছুই নেই। এটা কি ঠান্ডা এবং নির্দয়! উজ্জ্বল সূর্য চলে গেছে। মিষ্টি বসন্ত আর নেই। শীতের বিরুদ্ধে এভাবেই অভিযোগ করেন। কিন্তু তোমার অভিযোগের কোন মানে নেই। কেন আপনি শীতকাল গ্রীষ্ম বা বসন্ত হতে চান? আপনি যদি তা করেন তবে আপনি জীবন উপভোগ করতে পারবেন না। আমরা জানি, সবকিছুরই নিজস্ব সৌন্দর্য আছে। শীত বসন্ত হয়ে গেলে শীত আর শীত থাকবে না। সারা বছর যদি অন্তহীন বসন্ত হয় তাহলে কি হবে? আপনি এটা পছন্দ করবেন না,. কারণ এটি নিস্তেজ হয়ে যাবে। সৌন্দর্য নিহিত আছে পরিবর্তনের মধ্যে। তাই, প্রকৃতি আমাদের একের পর এক ঋতু দেয়। এবং প্রতিটি ঋতু তার নিজস্ব সৌন্দর্য নিয়ে আসে। ভারতের কিছু অঞ্চলে, শীতকাল মাঝারি ঠাণ্ডা থাকে, অন্য জায়গায় এটি তীব্র ঠান্ডা থাকে। শীত শীত, কোন সন্দেহ নেই, কিন্তু আপনি এটি কত সুন্দরভাবে বাইরে রাখেন! আপনার পশমী পোশাক আপনাকে ওয়ার্ড রাখে এবং আপনাকে সুন্দর করে তোলে। মানুষ আগুনের পাশে বসে আছে। এটা কত মিষ্টি! শীতকালে একটি অগ্নিকুণ্ড একটি ক্লাবে পরিণত হয়। আপনি এই এবং যে কথা বলেন. আপনি গল্প বলুন বা রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করুন। এটি একটি রেডিও সেট হিসাবেও কাজ করে। আপনি বিভিন্ন স্থান এবং বিভিন্ন ব্যক্তি সম্পর্কে অনেক খবর পাবেন। তবে কখনও কখনও একটি ফায়ার-প্লেস একটি রেডিওর চেয়ে বেশি হয়। একটি রেডিও আমাদের শুধুমাত্র খবর দেয়। কিন্তু একটি অগ্নিকুণ্ড খবর এবং গুজব উভয়ই তৈরি করে। আপনি এই সব উপভোগ করুন এবং তারপর বিছানায় যান। তোমার বিছানা কত নরম আর শীতে তোমার ঘুম কত মধুর! শীতও স্বাস্থ্যের ঋতু। খেতে কী যে আনন্দ! যা খুশি খাবেন আর যত খুশি খাবেন, কোন ঝামেলা নেই। অন্য কোন ঋতুতে আপনি সহজেই অসুস্থ হয়ে পড়বেন এবং খাওয়ার সমস্ত আনন্দ হারাবেন।
আরও অনুরূপ প্রশ্নের জন্য পড়ুন-
https://brainly.in/question/8445908
https://brainly.in/question/17146025
#SPJ3