হিটলার পোল্যান্ড কেন আক্রমন করেছিল?
Answers
Answer:
১ম বিশ্বযুদ্ধের (১৯১৪-১৯১৮) ফলাফল নিয়ে জার্মানি ও সোভিয়েত ইউনিয়ন উভয়েই অসন্তুষ্ট ছিল। ব্রেস্ট-লিটোভ্স্কের চুক্তি (মার্চ, ১৯১৮) অনুযায়ী সোভিয়েত রাশিয়া পূর্ব ইউরোপে বিস্তর ভূখণ্ড হারায়, এতে পেট্রোগ্রাডে বলশেভিকগণ জার্মানদের দাবি মেনে নেয় এবং অক্ষশক্তির কাছে পোল্যান্ড, লিথুয়ানিয়া, এস্তোনিয়া, লাটভিয়া, ফিনল্যান্ড এবং অন্যান্য অঞ্চলসমূহের কর্তৃত্ব হস্তান্তর করে দেয়। আবার জার্মানি ১ম বিশ্বযুদ্ধের মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে (নভেম্বর, ১৯১৮) এবং ভার্সাই নগরীতে অনুষ্ঠিত প্যারিস শান্তি সম্মেলনে(১৯১৯) গৃহিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উল্লিখিত ভূখন্ডসমূহ স্বাধীন হয়ে যায়। এ সম্মেলন চলাকালে সোভিয়েত রাশিয়া রুশ গৃহযুদ্ধে লিপ্ত ছিল, এবং মিত্রবাহিনী বলশেভিক সরকারকে অনুমোদন না দেয়াতে সোভিয়েত রাশিয়ার কোন প্রতিনিধি প্যারিস সম্মেলনে অংশ নিতে পারেনি।[১১]
১৯৩৯ সালের ১১ আগস্ট অ্যাডলফ হিটলার জাতিপুঞ্জের কমিশনার কার্ল জ্যাকব বুর্কহার্টের নিকটে তার সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণের সংকল্পের কথা স্বীকার করেন।
"মলোটভ-রিবেনট্রপ চুক্তি" ছিল জার্মানি ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে সাক্ষরিত একটি অনাগ্রাসন চুক্তি, যা সাক্ষরিত হয়েছিল ১৯৩৯ সালের আগস্টে। চুক্তিটির একটি গোপনীয় ধারা ছিল যার উদ্দেশ্য ছিল মধ্য ইউরোপকে জার্মানি ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে ভাগাভাগি করতঃ ১ম বিশ্বযুদ্ধের পূর্ববর্তী স্থিতাবস্থায় নিয়ে যাওয়া। ফিনল্যান্ড, এস্তোনিয়া, লাটভিয়া ও লিথুনিয়ার কর্তৃত্ব পাবে সোভিয়েত ইউনিয়ন, অপরদিকে পোল্যান্ড ও রোমানিয়া দু'পক্ষের মধ্যে ভাগাভাগি হবে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] পূর্ব রণাঙ্গনের যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার আরেকটি কারণ হল "জার্মান-সোভিয়েত সীমান্ত ও বাণিজ্য চুক্তি" যার ফলে সোভিয়েত ইউনিয়ন জার্মানিকে পূর্ব ইউরোপ আক্রমণের জন্যে প্রয়োজনীয় প্রাকৃতিক সম্পদ ও কাঁচামাল সরবরাহ করে।[১৩]
১৯৩৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর জার্মানি পোল্যান্ড আক্রমণ করার মাধ্যমে ২য় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা করে। এবং ১৭ সেপ্টেম্বর সোভিয়েত ইউনিয়ন পোল্যান্ডের পূর্বাঞ্চলে আক্রমণ চালায়, ফলে পোল্যান্ড জার্মানি, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও লিথুয়ানিয়ার মধ্যে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এরপর অতি শীঘ্রই সোভিয়েত ইউনিয়ন ফিনল্যান্ডকে বিস্তর ভূখন্ড ছেড়ে দেয়ার দাবি করে বসে। ফিনল্যান্ড তাদের এ দাবি প্রত্যাখ্যান করলে ১৯৩৯ সালের ৩০ নভেম্বর সোভিয়েতরা ফিনল্যান্ড আক্রমণ করে, যা "শীতকালীন যুদ্ধ" নামে পরিচিত হয়, এই দুঃসাধ্য যুদ্ধের সমাপ্তি হয় ১৯৪০ সালের ১৩ই মার্চ শান্তিচুক্তির মাধ্যমে, যে চুক্তি অনুযায়ী ফিনল্যান্ডের স্বাধীনতা বজায় থাকে তবে তারা তাদের পূর্বাঞ্চলের কারেলিয়া এলাকা সোভিয়েতদেরকে হস্তান্তর করতে বাধ্য হয়।[১৪]
১৯৪০ সালের জুন মাসে সোভিয়েত ইউনিয়ন তিনটি বাল্টিক রাষ্ট্র (এস্তোনিয়া, লাটভিয়া ও লিথুয়ানিয়া) অবৈধভাবে আক্রমণ ও দখল করে নেয়।[১৪] "মলোটভ-রিবেনট্রপ চুক্তি" বাহ্যত সোভিয়েত ইউনিয়নকে নিরাপদে বাল্টিক রাষ্ট্রসমূহ ও রোমানিয়ার উত্তর-পূর্বাংশ দখল করার অনুমতি দেয় (বুকোভিনা ও বেসারাভিয়া, জুন-জুলাই, ১৯৪০)। যদিও হিটলার সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণের ঘোষণা দেন এই যুক্তিতে যে, বাল্টিক রাষ্ট্রসমূহ ও রোমানিয়ার ভূখন্ড দখলের মাধ্যমে সোভিয়েতরা জার্মানির সাথে স্থাপিত তাদের চুক্তি ভঙ্গ করেছে। মস্কো তাদের দখলকৃত রোমানিয়ান ভূখন্ড ইউক্রেনিয়ান ও মলডাভিয়ান সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র- এই দুই ভাগে বিভক্ত করে।