২. জমি জরিপ ও রাজস্ব নির্ণয়ের ক্ষেত্রে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পদক্ষেপগুলির একটি তালিকা তৈরি করা।
Answers
ভারতের ঔপনিবেশিক প্রশাসন রাজস্ব ব্যবস্থা নিয়ে নানা রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে ছিল তার মধ্যে জমি জরিপ করা ও তার ভিত্তিতে রাজস্ব নির্ণয় করার প্রক্রিয়াটি ও গুরুত্বপূর্ণ ছিল কোম্পানি যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল সেগুলি হল
- জমি জরিপ
1757 খ্রিস্টাব্দে পলাশী যুদ্ধের পর রবার্ট ক্লাইভ নতুন জমিদারি জরিপের জন্য একদল খোঁজ করতে থাকেন। অবশেষে 1760 খ্রিস্টাব্দে ফ্রাঙ্ক ল্যান্ড নতুন 24 পরগনার জমি জরিপের কাজ শুরু করেন। তবে তার অসমাপ্ত কাজ শেষ করেন হগ ক্যামেরণ ।
- নদীপথ গুলির জরিপ
1760 খ্রিস্টাব্দে ফ্রাঙ্ক লতন্দেরি হাত ধরে বাংলা তথা ভারতে যে আধুনিক জমি জরিপ ব্যবস্থার সূচনা হয় তা জেমস রেনেল এর উদ্যোগে কার্যকারী প্রতিষ্ঠান রূপলাভ করে। জেমস রেনেল কে ভারতে আধুনিক জরিপ ব্যবস্থার জনক বলা হয়।
1767 খ্রিস্টাব্দে কোম্পানি রেনেলকে ভারতের সার্ভেয়ার জেনারেল বা জরিপ বিভাগের প্রধান নিযুক্ত করেন ।তাঁর উদ্যোগে 1764 খ্রিস্টাব্দে বাংলার নদীপথ গুলি জরিপ করে 16টি মানচিত্র তৈরি করা হয় ফলস্বরূপ দেওয়ানি লাভের পর সুষ্ঠুভাবে রাজস্ব আদায়ের জন্য জমি জরিপের গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়।
- বোর্ড অভ রেভিনিউ
বক্সারের যুদ্ধের পর ও দেওয়ানির অধিকার পাওয়ার ফলে ক্রমেই বাংলার জমি জরিপ করে রাজস্ব নির্ণয় বিষয়ে কোম্পানি তৎপর হয়ে ওঠে। 1770 খ্রিস্টাব্দে মুর্শিদাবাদে কম্পট্রনিং কাউন্সিল অভ রেভিনিউ নামে একটি কমিটি গঠন করা হয় । আরও আলাদা একটা রেভিনিউ বোর্ড গঠিত হয় যার নাম হয় কমিটি অফ রেভিনিউ। 1768 খ্রিস্টাব্দে কমিটি অফ রেভিনিউ কে নতুন করে সাজিয়ে তার নাম দেয়া হয় বোর্ড অফ রেভিনিউ।এটি রাজস্ব সংক্রান্ত বিষয় দেখাশোনা করতে থাকে।
- ইজারাদারি ব্যবস্থা
1772 খ্রিস্টাব্দে ওয়ারেন হেস্টিং নদীয়া জেলায় একটি নতুন ভূমি রাজস্ব বন্দোবস্ত চালু করেন ।সেই বন্দোবস্ত অনুযায়ী যে ব্যক্তি জমির নিলামে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব দেবে তার সঙ্গে কোম্পানি ওই জমির বন্দোবস্ত করবে 5 বছরের জন্য ওই জমি ওই ব্যক্তিকে ইজারা দেওয়া হতো তাই এই ব্যবস্থা ইজারাদারি ব্যবস্থা নামে পরিচিত।
এক সালা বন্দবস্ত
পাঁচশালা বন্দোবস্ত বা ইজারাদারি বন্দোবস্ত ত্রুটিগুলো বিবেচনা করে এবং 1776 খ্রিস্টাব্দে আমিনী কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে হেস্টিংস বাংলার জমিদারদের সঙ্গে এক বছরের জন্য জমি বন্দোবস্ত করেন।এই বন্দবস্ত একসালা বন্দোবস্ত নামে খ্যাত।
দশ সালা বন্দোবস্ত
1790 খ্রিস্টাব্দে লর্ড কর্ণওয়ালিশ জমিদারদের সঙ্গে 10 বছরের জন্য ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা চালু করেন যা দশ শালা বন্দোবস্ত নামে পরিচিত।
- চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত
লর্ড কর্নওয়ালিস চেয়ে ছিলেন বাংলায় জমিদারদের উন্নতি হোক ।জমিদারদের সম্পত্তির অধিকার কে স্থায়ী ও নিরাপদ করা হলে তারা কৃষির উন্নতির জন্য নিয়োগ করবেন তাছাড়া অগণিত কৃষকের থেকে খাজনা আদায় করার বদলে কমসংখ্যক জমিদারদের থেকে খাজনা আদায় করা অনেক সহজ ছিল।
পাশাপাশি জমিতে অধিকার স্থায়ী করার মাধ্যমে জমিদারদের কোম্পানির অনুগত গোষ্ঠী হিসেবে গড়ে তোলা যাবে এইসব কারণে 1793 খ্রিস্টাব্দে কোম্পানির তরফ এ জমিদারদের খাজনা আদায় বিষয়ক চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করা হয় বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার সমস্ত জমি জমিদারি সম্পত্তি হয়ে পড়ে।
- রায়াত ওয়ারী ব্যবস্থা
1820 খ্রিস্টাব্দে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ত্রুটিগুলো দূর করার জন্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে দক্ষিণ ও দক্ষিণ পশ্চিম ভারতে থমাস মনরোর ও আলেকজান্ডার বিড কৃষকদের(রায়ত) কাছ থেকে সরাসরি খাজনা আদায়ের যে ভুমিরাজস্ব নীতি গৃহীত হয়েছিল তা রয়াতওয়ারি বন্দবস্ত নামে পরিচিত।
- মহল ওয়ারি ব্যাবস্থা
1822 খ্রিস্টাব্দে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রাজস্ব সচিব হল্ট মাকেঞ্জি সঙ্গায় উপত্যকায় বাড়ি পিছু যে ভূমি রাজস্ব চালু করেন তা মহলওয়ারি বন্দোবস্ত নামে খ্যাত। এ ব্যবস্থায় 25 থেকে 30 বছরের জন্য জমি ইজারা দেয়া হতো তবে জমিতে চাষির কোন সত্ত ছিলনা সংগৃহীত একটি অংশ রেখে বাকিটা সরকারকে দিতে।
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সহ বিভিন্ন ঔপনিবেশিক শক্তি গুলি ভারতের রাজস্ব ব্যাবস্থার ওপর নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়েছিল।তারা জমি-জরিপের মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিল। সেগুলি হল-
- ১৭৬৮ সালে জেমস রেনেল বাংলার নদীপথ জরিপ করেন।
- ফ্র্যাঙ্কল্যান্ডের উদ্যোগে ১৭৬০ খ্রিস্থাব্দে কৃষি জমি জরিপের সূচনা।রেনেল মোট ১৬তি মানচিত্র তৈরি করেছিল।
- মুর্শিদাবাদে কম্পট্রোলিং কাউন্সিল অফ রেভিনিউ নামের একটি সংস্থা গঠন করাহয়েছিল ১৭৭০ খ্রিস্ত-অব্দে। যারা রাজস্ব সংক্রান্ত বিষয় দেখ ভাল শুরু করে।
- এছাড়া কর আদায় বৃদ্ধি করতে বেশ কিছু বন্দোবস্তের শুরু করে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, যেগুলি হল- ইজারাদারি ব্যবস্থা, পাঁচশালা বন্দোবস্ত, মহলওয়ারি বন্দোবস্ত, রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত, দশ সালা বন্দোবস্ত।
#SPJ3